• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

করোনার টিকা প্রথম পাবে ২৫ লাখ মানুষ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ জানুয়ারি ২০২১

দেশে করোনাভাইরাসের টিকা প্রথম ধাপে দেওয়া হবে দেশের ২৫ লাখ মানুষকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানিয়েছেন। এর মধ্যে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা, ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষ, যাদের করোনা ঝুঁকি বেশি এমন মানুষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবেন।

বিশ্বে বিভিন্ন দেশে মডার্না, ফাইজার, স্পুতনিকের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশ নিতে চায় অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, যেটি গত বুধবার অনুমোদন করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। এই টিকা উৎপাদন হবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে। আর তাদের কাছ থেকে বেক্সিমকো ফার্মার মাধ্যমে তিন কোটি ডোজ টিকা আনতে চুক্তি করেছে সরকার। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন আগে জানিয়েছিলেন, টিকা আসবে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে। তবে যুক্তরাজ্যে টিকা অনুমোদন পাওয়ার পর তিনি বলেন, টিকা আসবে জানুয়ারির মাঝামাঝি। এমনকি টিকা প্রয়োগের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রাখছে সরকার। টিকা কাদের আগে দেওয়া হবে, সেই নীতিমালাও করা হচ্ছে।

প্রথমে কারা পাচ্ছেন করোনার টিকা : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা নিয়ে একটা নীতিমালা তৈরি করেছে সরকার। এখানে আমরা বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করেছি। এর মধ্যে কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন এমন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এরপর অন্যান্য হাসাপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তাদেরও দেওয়া হবে টিকা। এর মূল কারণ এদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকিও রয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি ও এনজিওতে যারা প্রথম সারিতে কাজ করছেন, তারাও তালিকাভুক্ত হবেন। পাশাপাশি অন্যান্য ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা যারা সাধারণ মানুষের সংস্পর্শে বেশি যান এবং যাদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে তারা আছেন।

মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, তালিকায় মুক্তিযোদ্ধারাও রয়েছেন। একই সঙ্গে যাদের বয়স প্রায় ৬০ বছরের ওপরে তারা থাকছেন। এ ছাড়া প্রশাসন ও বিচারিক আদালতে কর্মরত কিছু ব্যক্তিকেও এই তালিকায় অধিভুক্ত করা হচ্ছে।

প্রথম ধাপের তালিকায় কত জন থাকছে : মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, প্রাথমিকভাবে তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছিল ৫১ লাখ মানুষকে। তিনি বলেন, যেহেতু প্রথম দফায় আমরা ৫০ লাখ টিকা পাব, এই ৫০ লাখকে আবার দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করতে চাই। এক্ষেত্রে প্রথমে টিকা পাচ্ছে ২৫ লাখ মানুষ। প্রথমে ৫০ লাখ টিকা দুই ডোজ করে, ২৫ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব এক কোটি ২০ লাখ মানুষ রয়েছে। এক এক করে এদের সবার টিকা নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে ফ্লোরা বলেন, এ জন্য আমরা মাস হিসেবে ভাগ করছি। যেমন প্রথম মাসে ৭৫ বছরের ওপরে তাদের টিকা দান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসব। দ্বিতীয়বার হয়তো ৭০ বছর, এইভাবে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভির কাছ থেকে পৌনে সাত কোটি টিকা জুনের মধ্যে চলে আসবে। দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকা নিশ্চিত করতে পারি এ বিষয়েও কাজ করছি।

তালিকা কি করা হয়েছে : মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কাজ চলছে, টিকা আসার আগেই তালিকা তৈরি হয়ে যাবে। এমনকি টিকা আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগ শুরু হবে এমন প্রস্তুতি আমরা রেখেছি।

সব মিলিয়ে কত মানুষকে টিকা দেওয়া হবে : ফ্লোরা বলেন, যদি হার্ড ইমিউনিটি আনতে হয় তাহলে দেশে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দান নিশ্চিত করতে হবে। তবে এই কথা সত্যি, কোনো ভ্যাকসিনের এখনো সম্পূর্ণ ফলাফল আসেনি। এটার ওপরেও অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমরা প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা হিসেবে রেখেছি। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কাদের দেওয়া হবে না টিকা : ফ্লোরা জানান, গর্ভবতী নারীকে টিকা দেওয়া হবে না। কারণ এখনো পর্যন্ত কোনো দেশে তাদের ওপর টিকা প্রয়োগ করে পরীক্ষা হয়নি। ১৮ বছরের নিচেও কাউকে করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে না। কারণে এদের ওপরেও করোনা ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয়নি। তিনি বলেন, শিশুদের ওপর যতক্ষণ ট্রায়াল হয়ে সেফটি রেজাল্ট না পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সেটা দিতে পারি না।

যারা টিকা পাবেন, তাদের করণীয় কী : তিনি বলেন, অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে করোনা টিকা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য একটি তালিকা তৈরি করা হবে। সফটওয়্যার উন্নয়নে কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমার চিন্তা করেছি একটা সম্পূর্ণ তালিকা থাকবে। তালিকা অনুযায়ী এই টিকা দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এই নিবন্ধন তালিকা তৈরি করা হবে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে, যাদের টিকা দেওয়া প্রয়োজন সেই অনুযায়ী তালিকা করা হবে। এই তালিকা অর্থনৈতিক অবস্থা দেখে করা হবে না। এমনকি অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ নেওয়া হবে না।

নিবন্ধন কীভাবে হবে : মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, জনগণ সরাসরি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে এ নিয়ে কাজ করা হবে। নিবন্ধনের সঙ্গে এনআইডি নম্বর প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে বিধবা বা বয়স্কভাতা পান এমন তালিকাও সংগ্রহ করে দেখা হবে। এক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বাদ পড়ার কোনো শঙ্কা নেই। তবে এটা ঠিক যে, যদি কেউ নিবন্ধন না করে, তাকে টিকা দেওয়া হবে না। কারণ আমরা নিবন্ধন তালিকার বাইরে কাউকেই টিকা দিতে পারব না। তাই টিকা দেওয়ার আগে নিবন্ধন করা জন্য সারা দেশে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে।

শিক্ষাবঞ্চিতরা কি নিবন্ধন জটিলতায় পড়বে না : তিনি বলেন, না, নিরক্ষরদের জন্যও আমাদের ব্যবস্থা থাকবে। তারা ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবে। গ্রাম পর্যায়ে এখন ডিজিটাল সেবা কার্যক্রম চলে গেছে। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ আমাদের সহযোগিতা করতে পারবে।

বেসরকারি পর্যায়ে টিকা আনতে পারবে কি : ফ্লোরা বলেন, এক্ষেত্রে কোনো বাধা বা নির্দেশনা নেই। কোনো কোম্পানি যদি টিকা আনতে চায়, আমাদের অবশ্যই কিছু শর্ত থাকবে। কোন দেশ থেকে, কোন কোম্পানির টিকা আনা হচ্ছে, সেই টিকার ফলাফল কী; তার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কি না; যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে আনতে চায়, তাদের সক্ষমতা রয়েছে কি না; যাদের দেওয়া হবে তার ফলোআপ করা হবে কীভাবে; এমনকি এই টিকার মূল্য কত হবে- তথ্যগুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক সায়েদুর রহমান টিকার অগ্রগতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘বহু বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের নামকরা একাধিক টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে সেসব টিকা চলে আসবে।’

এছাড়া বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘টিকা অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশনের কাজ আমরা করছি। সরকার কত দ্রুত অনুমোদন দেবে, তার ওপর নির্ভর করবে টিকা বাংলাদেশে কবে আসবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads