• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

কারাগারে বসে নেই হুজির শীর্ষ নেতা

বিভাগভিত্তিক কমান্ডার নির্বাচিত করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৩ জানুয়ারি ২০২১

বিভাগভিত্তিক কমান্ডার নির্বাচিত করে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। কারাগারে বন্দি হুজির শীর্ষ নেতা আতিকুল্লাহর নেতৃত্বেই সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। বিশেষ করে বন্দি নেতাকে মুক্ত করতে দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তারা অর্থ সংগ্রহ করছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার ইব্রাহিম খলিল রাজশাহীতে আটক হয়। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। সেই তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশে সংগঠনের যে বিস্তার ঘটেছে তাতে কিছু আঞ্চলিক নেতার নাম পেয়েছে পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, হুজির আঞ্চলিক কমান্ডার ইব্রাহিম খলিল ও আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। সে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা পুরো এই গ্রুপকে গ্রেপ্তারে কাজ করছি।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে তারা কর্মী সম্মেলন করতে চেয়েছিল। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ থেকে তাদের নেতাকর্মী আসার কথা ছিল এখানে। ওইসব নেতাকর্মীর ব্যাপারে কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

গোয়েন্দা সূত্রগুলোর মতে, বিভিন্ন সময় জঙ্গি সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। যখন কোনো পরিকল্পনাতে তারা এগোনোর চেষ্টা করে, তখন তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এরই মাঝে হরকাতুল জিহাদও এরকম এক চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। কারাগারে আটক হুজির শীর্ষ নেতা আতিকুল্লাহ এই গ্রুপকে নির্দেশনাও দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিচ্ছিন্নভাবে তারা দল গোছানোরও কাজ করছে।

সূত্র জানায়, যেহেতু তারা রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজনকে মনোনীত করেছে, সেহেতু গোয়েন্দাদের ধারণা, অন্যান্য বিভাগেও তারা কোনো একজনকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মনোনীত করেছে। এরই মধ্যে রাজশাহীতে কর্মী সম্মেলন করতে গিয়েই আটক হয় দায়িতপ্রাপ্ত ইব্রাহিম খলিল ও তার সহযোগী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ। তবে এখনো রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পায়নি তারা। আদালত এখনো মামলার শুনানির জন্য দিন ধার্য করেননি।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র গোলাম কুদ্দুস রুহুল জানান, আদালতে এখনো শুনানি হয়নি। ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলে এ বিষয়ে আরো তথ্য পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।

চাঞ্চল্যকর তথ্য : প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ইব্রাহিম খলিলের মতো সারা দেশে এরকম ৮ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নির্বাচিত হয়েছে হুজির। তারা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠতে চায়। বিভিন্ন সময়ে তাদের দলে থাকা কর্মীদের ডাকাও হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে থাকা কর্মীদের দলে ভেড়াতে চাচ্ছে তারা। বিশেষ করে কারাগারে বন্দি শীর্ষ নেতা আতিকুল্লাহকে মুক্ত করতে তহবিলও সংগ্রহ করছে। দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে এ টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গোয়েন্দারা বলছেন, কারাগার থেকেই মূলত আতিকুল্লাহ এসব দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তার এ দিকনির্দেশনা অনুসারে কাজ করছে তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, আপাতত নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার ওই রকম শক্তি নেই হুজির। শুধু হুজি নয়, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের আছে বলে মনে হয় না। এর আগে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ এবং বগুড়ায় নব্য জেএমবি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। তাদেরও আটক করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়ানোর চেষ্টা করছে, এটা আমরা বুঝছি। তারপরও আমাদের নজর এড়ানো কঠিন। জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সেই পদক্ষেপগুলো রয়েছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, জেলখানায় বন্দি আতিকুল্লাহর নেতৃত্বেই হুজি আবারো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পেয়েছি। এছাড়া বন্দি নেতাকে মুক্ত করতে বড় ধরনের তহবিল সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক টিমও গঠন করেছে। সেগুলোকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে কাজ করা হচ্ছে।

 কে এই আতিকুল্লাহ

টিটিসির কর্মকর্তারা জানান, আতিকুল্লাহ ১৯৯৬ সালে মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে গঠিত হুজিবি’র কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। পরে সে বায়তুল মাল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দায়িত্বশীল হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথমদিকে আতিকুল্লাহ দুবাই হয়ে সৌদি আরব পালিয়ে যায়। সেখান থেকে একাধিকবার সে পাকিস্তান গিয়ে দেশটির জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেসব বৈঠকে বাংলাদেশে হুজিকে সচল করার নানা পরিকল্পনা করা হয়।

জানা যায়, সে আশির দশকের শেষের দিকে আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে অংশ নেয়। সে বোমা তৈরিতে বিশেষভাবে দক্ষ। ওই সময় সে আল-কায়েদার প্রয়াত প্রধান ওসামা বিন লাদেন, তালেবানের সাবেক শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমরসহ আল-কায়েদার বর্তমান নেতা আইমান আল জাওয়াহেরির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে। গত বছরের মার্চে সে দেশে এসে নতুন করে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশকে সংগঠিত করার কাজে নামে। এরই মাঝে তাকে গত বছরের অক্টোবরে রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিট।

 গ্রেপ্তারের আগে সে নতুন-পুরনো অনেক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এছাড়া সে জেলে থাকা হুজিবি সদস্যদের জামিনে বের করে আনার জন্যও তৎপর ছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তার তৎপরতা ছিল। রোহিঙ্গা ও কাশ্মীর ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে সে নতুন সদস্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছিল।

এক কর্মকর্তা জানান, হুজিবি সংগঠিত করতে আতিকুল্লাহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সফর করেছে বলে স্বীকার করে। এছাড়া দেশি সমর্থক ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা হুজিবি সমর্থকদের কাছ থেকে সে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিল। তার সঙ্গে পাকিস্তান, দুবাই ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পলাতক জঙ্গিদের যোগাযোগের তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যায় ওই সময়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads