• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

দোষারোপের বেড়াজালে বাড়ছে চালের দাম

দাম বৃদ্ধির জন্য ৪ কারণকে দায়ী করলেন মিলাররা

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০২১

চালের বাজারের লাগাম কোনোভাবেই টানতে পারছে না সরকার। চালের দাম সহনীয় করতে বিদায়ী বছরের ২৭ ডিসেম্বর আমদানি শুল্ক ৬২.৫ শতাংশ থেকে ৩৭.৫ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এরপরও গত সপ্তাহে আরেক দফা বেড়েছে দাম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদন বলছে, গত সপ্তাহে চিকন চালের (মিনিকেট, নাজিরশাইল) দাম ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের পাইজাম ও লতাশাইলের দাম ১ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে প্রতি কেজি ৫৩ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গেল বছর সরকারের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিলার এবং পাইকারি বিক্রেতাদের সাথে বৈঠকের পর ২৯ সেপ্টেম্বর চালের পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। সেসময় প্রতি কেজি সরু মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা এবং মাঝারি মানের চাল প্রতি কেজি ৪৫ টাকা দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের সেই নির্দেশনা মানেনি কেউ। উল্টো এরপরও কয়েক দফা চালের দাম বেড়েছে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক দাম বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময় মিলারদের কারসাজিকে দায়ী করেছেন।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশের মিলার, আড়তদার, জোতদারদের যারা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তারাই দাম বাড়ায়। এবারো তারা সেই কাজ করছে। এই মৌসুমে এখনো তারা ধান কিনছে। ধানের দাম ও চালের দাম দুটিই তারা বাড়িয়ে দিয়েছে। কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, চলতি বছর দুই দফা বন্যার কারণে আউশ ও আমন ফলনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদনের যে পরিসংখ্যান সরকারের হাতে আছে, তাতে চালের এত ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে পাইকারি বিক্রেতারাও দায় চাপিয়েছেন চালকল মালিকদের ওপর। অন্যদিকে সরকারের বক্তব্যকে অসত্য বলে দাবি করে মিলারদের অভিযোগ, প্রকৃত কারণ খুঁজে বের না করে অযথা মিলারদের দায়ী করছে সরকার। তাদের দাবি, পেছনের কারণ বের করতে ব্যর্থ হওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। চালকল মালিকরা চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে প্রথমত ধানের উৎপাদন কম হওয়া, দ্বিতীয়ত ধানের চড়া মূল্য, তৃতীয়ত মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং চতুর্থত চালের ট্রাকে চাঁদাবাজি। মিলাররা বলছেন, এসব সমস্যার সুরাহা হলে চালের দাম কমে আসবে।

কুষ্টিয়ার মেসার্স রশিদ এগ্রোফুডের অর্থ ব্যবস্থাপক আবুল খায়ের ভূঁইয়া হারুন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বর্তমানে ধানের সংকটের কারণে মিলগুলো বন্ধ রয়েছে। সরকার মিলারদের অযথা দায়ী করছে। কিন্তু সমস্যার মূলে তারা যাচ্ছেন না।’ আবুল খায়ের বলেন, ‘এক মণ মিনিকেট ধানের দাম বর্তমানে সাড়ে ১৪শ টাকা, যা ২/৩ দিন আগেও ছিল ১৫০০ টাকা। এক মণ ধানে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে মাত্র ২২-২৩ কেজি চাল পাওয়া যায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি মিনিকেট চালে খরচ পড়ে ৬২-৬৩ টাকা। এ কারণে আমাদের প্রতি বস্তায় ২০০-৩০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’ তিনি চালের দাম বৃদ্ধির জন্য ধান এবং চালের ব্যাপারী তথা মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিকে দায়ী করেন। ‘ব্যাপারীরা মাঠ থেকে ধান কিনে কৃষকদের কাছ থেকে। তাদের কাছ থেকে আমরা কিনে নেই। আমাদের কাছ থেকে যে দামে চাল কিনে নেয় খুচরা পর্যায়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দামের হেরফের হয়ে যায় অনেক। কিন্তু এ জায়গাটাতে সরকার না দেখে মিলারদের শুধু দায়ী করছে,’ বলেন আবুল খায়ের।  

চালের দাম বৃদ্ধির অন্যতম আরেকটি কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বগুড়ার ট্রাক টার্মিনালে এবং পথে পথে পুলিশের চাঁদাবাজিকে দায়ী করেছেন। এ প্রসঙ্গে নাহিদ অ্যারোমেটিক অটো রাইস মিলের মালিক আহম্মেদ আলী সরদার স্বপন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘কয়েকটি কারণে এবার চালের দাম বেড়ে গেছে। একে তো ধানের সরবরাহ কম এবং উচ্চমূল্য। গাড়িতে চাল তোলার পর বগুড়ার ট্রাক টার্মিনালে ১৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এরপর রাজধানী যাওয়ার পথে কয়েকটি ধাপে পুলিশকে টাকা দিতে হয়।’ তিনি বলেন, ধানের যে দাম তাতে কৃষক যে খুব বেশি লাভবান হচ্ছে তা নয়। কারণ ধানের দাম বেশি না হলে কৃষক উৎপাদন করবে না।

চালের বর্তমান দামকে ধানের উৎপাদন খরচের তুলনায় খুব বেশি না বলে জানান আহমেদ আলী সরদার স্বপন। তিনি বলেন, ‘সরকার মিলারদের দায়ী করা একেবারে ঠিক না। ধানের  সরবরাহ কম থাকায় মূলত চালের দাম বেড়েছে।’ তিনি উদারহণ হিসেবে বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে গত কয়েকদিনে ধানের দাম কিছুটা কমেছে। চালের বাজার সহনীয় করতে হলে এই মুহূর্তে চাল আমদানির কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানির বিষয়টি নিয়ে ভাবছে সরকারও।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ভারত থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে আমদানি করা ৫০ হাজার টন চাল গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বন্দরে পৌঁছেছে। আগামী এক মাসের মধ্যে আরো এক লাখ টন চাল ভারত থেকে আসবে। ভারতের বাইরে অন্যান্য দেশ থেকেও চাল আমদানি করে মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব চাল টিসিবিসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করা হবে। এর ফলে চালের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads