• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

দশ প্রকল্পের দায়িত্বে ২ পিডি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি ২০২১

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ১০ প্রকল্প দুই পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বে। একজনের হাতে ছয়টি ও আরেকজনের হাতে চারটি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে তিনটির অগ্রগতি একেবারেই শূন্য। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকারের অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পে যেসব কারণে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে, তার একটি হলো একই ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বে থাকা। মূল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একাধিক প্রকল্পের পিডি হলে যথাযথভাবে কাজ এগিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই একই ব্যক্তি যেন একাধিক প্রকল্পের পিডি না হন, সে নির্দেশনা বারবার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তবু বন্ধ হয়নি একই ব্যক্তির একাধিক প্রকল্পের পিডি হওয়া।

জানা গেছে, বরিশাল বিভাগে ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সওজ। এই ১৪ প্রকল্পের মধ্যে ১০টি প্রকল্পই রয়েছে দুই পিডির হাতে। সওজের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবালের হাতে ছয়টি এবং সওজের বরিশাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথের হাতে চারটি প্রকল্প রয়েছে।

এই ১০ প্রকল্পের মাঝে তিনটির অগ্রগতি একেবারেই শূন্য। শূন্য অগ্রগতির তিনটি প্রকল্প হলো তারেক ইকবালের হাতে থাকা ‘ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং মিন্টু রঞ্জন দেবনাথের হাতে থাকা ‘বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ ও ‘সুগন্ধা নদীর ভাঙন হতে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু রক্ষার্থে ৩.৭৬৫ কিলোমিটার নদীতীরে স্থায়ী রক্ষাপ্রদ কাজ’ প্রকল্প।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বরিশাল সার্কিট হাউসে এ বিভাগে চলতি অর্থবছরে চলমান ৬৭টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে প্রকল্পগুলোর পিডিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সওজের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর হাতে ১০টি প্রকল্প থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘দুজনের হাতে ১০টা প্রকল্প। এ ধরনের বিষয়ে আরো খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নিজস্ব কাজ আছে। তার পরও ১০টি প্রকল্পের পিডির দায়িত্ব পালন করা ডিফিকাল্ট (কঠিন)।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আইএমইডি সচিব হিসেবে মনে করি, একজন মানুষের পক্ষে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করে আরও ছয়টি প্রকল্পের পিডি হয়ে প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়া দুরূহ ব্যাপার। এই দিকটা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন যে, এটা কী করে হলো? এই বিষয়টা কীভাবে হলো, আইএমইডি বিভাগ থেকে আমরাও পর্যবেক্ষণ দেব।’

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর হাতে ছয় প্রকল্প : আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, সওজের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল একাই ৬ প্রকল্পের পিডি। এই ছয়টি প্রকল্প হলো-‘ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্প, ‘লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ’, ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী (এন-৮) জাতীয় মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ’, ‘বৈরাগীরপুল (বরিশাল)-টুমচর-বাউফল (পটুয়াখালী) জেলা মহাসড়ক (জেড-৮৯১০) যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্প এবং ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ ও ‘গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (বরিশাল জোন)’ প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর নির্দেশনা ভঙ্গ করে ছয় প্রকল্পের দায়িত্ব কেন নিলেন জানতে চাইলে তারেক ইকবাল বলেন, ‘এই প্রশ্ন যখন সরকার আমাকে করবে, তখন তাকে উত্তর দেব। এই প্রশ্নের উত্তর পরিকল্পনামন্ত্রীকে দেব।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালক কি আমি হতে পারি? নাকি আমাকে বানায়? সরকার কীভাবে প্রকল্প পরিচালক নির্ধারণ করেন, সেটা সরকারই ভালো জানে। সরকারের নিয়ম আছে, সেই অনুযায়ী হয়। এটা কারো ইচ্ছায় হয় না।’

দায়িত্ব নেওয়ার সময় একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকার বিষয়টি জানিয়েছিলেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘না, প্রকল্প দুই ধরনের। একটা হচ্ছে নিজস্ব জনবল দিয়ে প্রকল্প করায়, আরেকটা হচ্ছে নতুন জনবল দিয়ে করায়। এই প্রকল্পগুলো হচ্ছে নিজস্ব জনবল দিয়ে করানোর প্রকল্প। একটা জোনে এই ক্যাটাগরির কয়জন কর্মকর্তা আছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।’

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নিয়ন্ত্রণে চার প্রকল্প : সওজের বরিশাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথের হাতে থাকা চার প্রকল্প হলো, ‘বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশাল (চরকাউয়া) হতে ভোলা (ইলিশা ফেরিঘাট) হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ এবং ‘সুগন্ধা নদীর ভাঙন হতে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (দোয়ারিকা সেতু) রক্ষার্থে ৩.৭৬৫ কিলোমিটার নদীতীরে স্থায়ী রক্ষাপ্রদ কাজ’ প্রকল্প, ‘রাজাপুর-কাঁঠালিয়া-আমুয়া-বামনা-পাতরঘাটা মহাসড়ক (জেড-৮৭০৮) উন্নয়ন’ এবং ‘চরখালী-তুষখালী-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা (জেড-৮৭০১) সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্থকরণ’ প্রকল্প। এর মধ্যে দুটি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য আর দুটির ৫০ শতাংশের বেশি।

মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘চার প্রকল্পের দায়িত্ব আমি নেইনি। সরকার আমাকে এই পদে পদায়ন করেছে। পদাধিকার বলে আমি এই চার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হয়েছি। আমি এক মাস হয়েছে যোগদান করেছি। আমার আগে যিনি ছিলেন, তিনি এই চার প্রকল্পের পিডি ছিলেন। এই পদে যোগদান করার সঙ্গে সঙ্গেই এই চার প্রকল্পের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়েছে। এখানে ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ নন।’

২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেট সার্কিট হাউজে ওই বিভাগের প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সেখানে প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ হিসেবে একই ব্যক্তির একাধিক প্রকল্পে দায়িত্বে থাকার বিষয়টিকে দায়ী করা হয়। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু অনুশাসন রয়েছে’ উল্লেখ করে ওই বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে হবে। এক ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। কাজে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করতে হবে।’

‘প্রকল্প বাস্তয়ান করে তার সুফল জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর এসব অনুশাসন অবশ্যই মানতে হবে’ বলেও প্রকল্প পরিচালকদের হুঁশিয়ার করেছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

আইএমইডির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এক হাজার ৭২৪টি প্রকল্প রয়েছে। তার মধ্যে বরিশাল বিভাগের আছে ৬৭টি প্রকল্প, যা মোট প্রকল্পের ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সারা দেশে প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ রয়েছে মোট দুই লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি ৯ লাখ টাকা। তার মধ্যে বরিশাল বিভাগের প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ রয়েছে মোট সাত হাজার ১০৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা মোট এডিপি বরাদ্দের ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads