• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

অনিশ্চয়তায় প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এখনই আলোচনা চায় না ঢাকা

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল নেওয়ায় সৃষ্ট জটিলতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে করছে বাংলাদেশ। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে এ মুহূর্তে দেশটি উত্তাল। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিক্ষোভ চলছে। এভাবে ক্ষমতা দখলের তীব্র নিন্দাও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দেশটিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু বা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এরপর রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করেছে। এরপর ঢাকা-নেপিদো দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা থমকে যায়। বিশেষ করে, চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে ত্রিদেশীয় বৈঠক শুরু হলেও দেশটিতে নতুন করে সৃষ্ট জটিলতার কারণে মন্ত্রী পর্যায়ে  বৈঠক এবং যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ভেস্তে যায়। বাংলাদেশসহ মিয়ানমারে দায়িত্ব পালনরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতকে সে দেশের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের কারণ সম্পর্ক জানানো হলেও বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য মনে করছে না কেউই।

সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর এখন মিয়ানমারে তারা নিজেদের অবস্থান আরো শক্তিশালীর চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণের বিক্ষোভের মুখে এবং আন্তর্জাতিক চাপে সেনা সরকার কত দিন টিকবে সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। এছাড়া দেশটির সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। এখন তাদের ক্ষমতা দখলের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া কত দূর অগ্রগতি হবে সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ অবস্থায় সে দেশের সেনা সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যাওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলও ভালো চোখে দেখবে না। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলেও দুদফা নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। তাই সবকিছু বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনই চাইছে না দেশটির সেনা সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যেতে। বরং এ ক্ষেত্রে আরো পর্যবেক্ষণ করে, আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থান জেনে, আরো সময় নিয়ে আলোচনায় যাওয়া সমীচীন মনে করছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনসহ দ্বিপাক্ষিক অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা শুরু করা আরো কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মধ্যে ৮ লাখ ৩০ হাজারের একটি তালিকা মিয়ারমারের হাতে হস্তান্তর করেছে ঢাকা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২৭ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে মিয়ানমার। গত তিন বছরে প্রত্যাবর্তন শুরু না হওয়া, তালিকা চূড়ান্ত কাজে ধীরগতি এবং সম্প্রতি দেশটিতে ক্ষমতার রদবদল নিয়ে সৃষ্ট অস্থিরতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।  

উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এদিন তারা রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটকও করে। দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয় এক বছরের জরুরি অবস্থা। অপরদিকে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমারে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সু চি সমর্থকরা। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং এ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং পরে ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। তবু ঠেকানো যাচ্ছে না আন্দোলন। এ পরিস্থিতি দেশটির রাষ্ট্রীয় কাঠামো কোন দিকে মোড় নেয় সেটাই দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads