• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
ভাষা আন্দোলনে বৃহত্তর নোয়াখালী

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ভাষা আন্দোলনে বৃহত্তর নোয়াখালী

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী জেলার তৎকালীন ফেনী মহকুমায় সরকারবিরোধী ব্যাপক রাজনৈতিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। সেসময় ফেনী মহকুমা ছিল পূর্ব পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিসের শক্ত ঘাঁটি। তাই ফেনীতে আওয়ামী লীগ ও পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের শাখা স্থাপন হলে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে ফেনীর জনমত আরো সোচ্চার হয়ে ওঠে। নোয়াখালী জেলা যুবলীগের সভাপতি খাজা আহমদ, সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান, নোয়াখালী সদর মহকুমা যুবলীগের বজলুর রহমান, নোয়াখালী সদর মহকুমা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দীন আহমেদ, তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ফরমান উল্লাহ খানের নেতৃত্বে নোয়াখালীতে ভাষার দাবিতে প্রচ্ল আন্দোলন সৃষ্টি হয়। এ সময় তাদের সঙ্গে এ আন্দোলনে যে তিনজন ছাত্রনেতা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন, তারা হলেন— নুরুল হক চৌধুরী (কমরেড মেহেদী), কাজী মেজবাহ উদ্দীন ও নিখিল দাশগুপ্ত। খাজা আহমেদের উদ্যোগে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সংগ্রাম’ ফেনীতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ফেনীতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তখন পাকিস্তান ছাত্র সমিতি নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। ওই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন ফেনী কলেজের ছাত্র শান্তি শূর, সাংবাদিক এ বি এম মূসা। তাঁরাসহ ফেনী কলেজের নেতৃস্থানীয় ছাত্র সিদ্দিকুল্লাহ, খলিলুল্লাহ, কুব্বত আহম্মদ, ছাত্র ফেডারেশনের কুমুদ দত্ত ফেনীতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ফেনী মহাকুমার ফেনী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ধর্মঘট, মিছিল ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিন ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের খবর জানার পর থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফেনীর ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মিছিল ও সভা করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। প্রথমে খাজা আহমদের নেতৃত্বে ফেনীতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলেও পরে ছাত্রদের দাবির মুখে তিনি তার দায়িত্ব তাদের ওপর ছেড়ে দেন। পরে ফেনী কলেজের ছাত্র মজলিশের সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দীনের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ওই সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন ওবায়দুল হক, আবুল কাশেম, ফরমান উল্লাহ খান, লুৎফর রহমান, আমীর হোসেন, নূরুল হক, সৈয়দ মাঈনদ্দুীন হোসেন এবং বিচারপতি কাজী এবাদুল হক।

ভাষা আন্দোলনে আরো গতিসঞ্চারের জন্য এদের কয়েকজন একটি জিপগাড়ি ভাড়া করে তাতে মাইক লাগিয়ে ফেনী থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত বিভিন্ন হাইস্কুলে ভাষণ দিয়ে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। পরে চৌমুহনী কলেজের ছাত্রদের নেতৃত্বে নোয়াখালী জেলার সর্বত্র বিশেষ করে স্কুলগুলোয় ভাষা আন্দোলন জোরদার হয়। ঐ সময় বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে তরুণ সাংবাদিক ফজলুল করিমকে জেলে কাটাতে হয়েছে ১৪ মাস। এসময় তাঁরা দেয়াল লিখন ও পোস্টার লেখাসহ স্কুল থেকে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শামছুদ্দিন আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। ঠিক এমনি ভাবে চাটখিলের পাঁচগাঁও গ্রামের সৈয়দ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালে চাটখিল হাইস্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন এবং স্কুল বন্ধ করে ছাত্রদের নিয়ে মিছিল করে চাটখিল বাজারে এসে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ করে দেন। স্কুল বন্ধ করার কারণে রামগঞ্জ থানায় সৈয়দ মুজিবুর রহমানসহ মোট ২০ জনকে আসামি করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা হয়। মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে তাঁর এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।

কংগ্রেস নেতা কোম্পানীগঞ্জের ডা. যোগেন্দ্র চক্রবর্তী ভাষা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। এছাড়া ডা. নগেন্দ্র কর্মকার, সুবল মাস্টার, আবু নাছের চৌধুরী, আলী ইমাম চৌধুরী ও এমদাদুল হক খানসহ একদল প্রগতিশীল নেতা কোম্পানীগঞ্জে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেন। ১৯৫২ সালে তা একটি চূড়ান্ত ভিত তৈরি করে। রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিউরের মতো অসংখ্য শহীদের রক্তে বায়ান্নর রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ছিল মূলত বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় আবিষ্কারের সূত্রপাত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads