• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
চাল সংগ্রহের ব্যর্থতায় ঝুঁকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

চাল সংগ্রহের ব্যর্থতায় ঝুঁকিতে খাদ্য নিরাপত্তা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বর্তমানে সরকারের গুদামে চালের মজুত রয়েছে ৫ লাখ ২৭ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে চাল মজুত ছিল ১৩ লাখ ৮ হাজার টন। অর্থাৎ মজুত কমেছে অর্ধেকেরও অনেক বেশি। এ পরিস্থিতি দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ন্যূনতম ৮ লাখ টন চাল থাকলে সরকারের স্থিতিশীল মজুত বলে বিবেচনা করা হয়।  সরকারের এ মজুত দুর্বলতার সুযোগে বাজারে চালের দাম বেড়ে চলছে। ৫০ টাকার নিচে কোনো চাল কিনতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। করোনার কারণে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। যারা উপার্জন করছেন তাদের মধ্যেও অনেকের আয় আগের তুলনায় বেশ কমেছে। সেখানে চালের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কষ্টে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এর সত্যতাও মিলেছে। সংশ্লিষ্টরাও সেটা স্বীকার করছেন।

গত মাসের শেষে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান-চালের পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় মিলমালিক ও পাইকাররা সুযোগ নিয়েছেন, চালের দাম বেড়েছে, বলেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। আর ‘কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের বাংলাদেশে চাল, আলু ও পেঁয়াজের প্রাপ্যতা : একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার পেছনে সরকারের সংগ্রহ ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে।

গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। গত বছর বোরো ধান ওঠার পরপরই (গত এপ্রিলে) সরকার নতুন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ঘোষণা করে। ওই সময় ৩৬ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনার কথা জানানো হয়। কিন্তু ২৬ এপ্রিল থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলে কিনতে পেরেছিল মাত্র ২ লাখ ২০ হাজার টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ কম।

চলমান আমন ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের পরিস্থিতি আরো খারাপ। ২ লাখ টন ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ৭ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ১১৬ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ শতাংশ। এ মৌসুমের সংগ্রহ চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অর্থাৎ সময় শেষে লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ পূরণও অসম্ভব।

বার বার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কেন পূরণ হচ্ছে না সে বিষয়ে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি খাদ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় সংগ্রহ করা যায়নি। তাছাড়া চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নতুন কোনো উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে না।

সংগ্রহ কার্যক্রমে যুক্ত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বার বার মিলমালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ না করায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধানের দাম বেশি থাকায় তারা সরকারকে চাল দিচ্ছেন না। এ ছাড়া নানা নিয়মকানুনের কারণে কৃষকরা সরকারকে ধান দিতে পারেন না। চাল সংগ্রহের জন্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন জটিল শর্ত রয়েছে। চুক্তি ভঙ্গ করা সত্ত্বে মিলমালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ব্যর্থতার পরও সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমদানি করতে পারেনি এখনো। গত বছরের শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ২ লাখ টন চাল কেনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে উদ্যোগ এখনো সফল হয়নি। যদিও খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, আমরা ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করার পরিকল্পনা করেছি। প্রায় ৬ লাখ টন চাল আমদানি পাইপলাইনে রয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads