• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ভাসানচর পরিদর্শনে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূতরা

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কিছু অংশ ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছে সরকার। চতুর্থ ধাপে সেখানো আরো রোহিঙ্গা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে জোরেশোরে। শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলোর আপত্তি আমলে নেয়নি সরকার। জাতিসংঘ ও কিছু পশ্চিমা দেশের ভাষ্য ছিল, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তাদের রাষ্ট্রদূতরা আগে ভাসানচর পরিদর্শন করবেন। এরপর তাদের গ্রিন সিগন্যাল পেলে রোহিঙ্গাদের আগ্রহ অনুযায়ী স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হলেও বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন এনজিওর আপত্তির কারণে স্থানান্তর প্রক্রিয়া এক বছর থমকে ছিল। এদিকে কক্সবাজারের টেকনাফে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার উপচে পড়া ভিড়ে জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না। ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠায় সেখানে প্রায়ই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদকের বিস্তার বাড়ছে। এ ছাড়া টেকনাফে স্থানীয়দের সঙ্গেও নানা বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিকল্প খুঁজছিল বাংলাদেশ।

ভাসানচরের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, ভাসানচরে কক্সবাজারের মতো ফাইভস্টার হোটেল না থাকায় বিদেশি প্রতিনিধি ও এনজিও কর্মীরা সেখানে যেতে রোহিঙ্গাদের নিরুৎসাহিত করছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, নিজেদের সুখ-সুবিধার কথা চিন্তা করেই ভাসানচরে স্থানান্তরে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে তাদের জন্যও ভাসানচরে ভালো মানের হোটেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের বিবৃতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের কুতুপালং না নোয়াখালীর ভাসানচরে থাকল, তা জাতিসংঘের দেখার বিষয় নয়। বিষয়টিকে বাংলাদেশের একটি অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ হিসেবেও তিনি উল্লেখ করেন। কুতুপালং ও ভাসানচর দুটি স্থানই বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অবস্থিত এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ। বাংলাদেশ যখন তাদের আশ্রয় দিতে পেরেছে, তখন তাদের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব অবশ্যই বাংলাদেশের রয়েছে। আর সার্বিক বিবেচনায়, বিশেষ করে পরিবেশগত দিক থেকে কুতুপালংয়ের চেয়ে ভাসানচর অনেক ভালো জায়গা।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলোর গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকলে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর কোনো দিনই সম্ভব হবে না। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়েছে। এদিকে ভাসানচর পরিদর্শনে যাওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী টিম পাঠানোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনো চূড়ান্ত অনুমতি দেওয়া হয়নি। এদিকে, কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো থেকে আগ্রহের ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনধাপে প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আরো একটি দল সেখানে যাবে। ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গারা ভালো সময় কাটাচ্ছে। তাদের কথায় উৎসাহিত হয়ে আরো রোহিঙ্গা সেখানে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে যারা এই স্থানান্তরের বিরোধিতা করে আসছে সেসব দেশের রাষ্ট্রদূতসহ জাতিসংঘ ও এনজিও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ভাসানচর পরিদর্শনে নেওয়া হবে বর্ষার আগেই। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়দের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া দেশের বৃহত্তম ট্যুরিজম স্পট কক্সবাজার এলাকায় নিরাপত্তা হুমকি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। এ ছাড়া ক্যাম্পগুলোতে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় সরকার। ভাসানচর নামের ১৩ হাজার একর আয়তনের বিস্তীর্ণ এই দ্বীপের মাত্র ৪৩২ একরে তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প। বাকি জায়গায় ছড়িয়ে আছে প্রকৃতির সৌন্দর্য। এ লক্ষ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads