দেশি পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকায় টিসিবি থেকে কেউ কিনছেন না। ফলে আমদানি করা এসব পেঁয়াজে পচন ধরেছে। এর পরও বিদেশ থেকে আরো প্রায় ৪৭ হাজার টন পেঁয়াজ আনার চুক্তি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটির। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি পেঁয়াজ নিয়ে টিসিবি গচ্চা দিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। কারণ এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিদেশ থেকে কেনা, যা দেশে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে। তাও আবার গড়ে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে বিক্রি না হওয়ায়।
টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এখনো প্রায় ১৩ হাজার টন পেঁয়াজ বন্দরে জমা আছে। বিভিন্ন হিমাগারে আছে কয়েক হাজার টন পেঁয়াজ। পাশাপাশি টিসিবির গুদামে মজুত থেকে যে দু-তিন হাজার টন পেঁয়াজ ডিলারদের দেওয়া হয় তাও মন্থরগতিতে সরবরাহ হচ্ছে। কারণ চাহিদা না থাকায় ডিলাররা পেঁয়াজ উঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল থাকার সময় বাজার সামাল দিতে এবার সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপসহ পাঁচটি বড় প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুরোধ জানিয়েছিল। এসব কোম্পানি দ্রুততম সময়ে পেঁয়াজ আমদানি করে টিসিবিকে দিয়েছে। তারাও বেশ চড়া দামে ওইসব পেঁয়াজ এনে দিয়েছে বিদেশ থেকে। তবে এখনও তাদের দাম পরিশোধ করতে পারেনি টিসিবি। বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় তারাও আশঙ্কায় রয়েছে। জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, এসব বিষয়ে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না। আমাদের পেঁয়াজ এনে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমরা দিয়েছি।
এমন পরিস্থিতিতে প্রায় এক মাস ধরে টিসিবি কিছু কৌশলে পেঁয়াজ বিক্রির চেষ্টা করলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। সংস্থাটির অন্য পণ্য চিনি, তেল, ডালের সঙ্গে ডিলারদের তিন টন পেঁয়াজ ওঠানো বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে সংস্থাটি। তাতে আবার পেঁয়াজ বিক্রি না করতে পেরে ডিলাররা তিন-চার দিন ধরে কোনো পণ্যই ওঠাচ্ছেন না। কারণ এক দিনের বরাদ্দের এক-দেড় টন করে অন্যান্য পণ্য বিক্রি হলেও পেঁয়াজ রয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি ট্রাকসেল ঘুরে ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, ওইদিন বাজারে বিক্রি হওয়া টিসিবির বিদেশি পেঁয়াজ প্রতি বস্তায় গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশই পচা। সেগুলো বাছাই করে বিক্রি করছে কোনো কোনো ডিলার। কেউ কেউ আবার অন্য পণ্যের সঙ্গে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কেনা বাধ্যতামূলক করেছেন টিসিবির নির্দেশমতো। তার মধ্যে চালিয়ে দিচ্ছেন ওইসব পচা পেঁয়াজ।
এদিকে পচা পেঁয়াজ ওঠাতে ডিলারদের অনাগ্রহের কারণে কয়েক দিন ধরে বরাদ্দের তিন টন পেঁয়াজের সঙ্গে মানভেদে ২০০ থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ ফ্রি দিচ্ছে টিসিবি। ডিলারদের দাবির মুখে গত রোববার থেকে এ বরাদ্দ কমিয়ে দুই টন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের এ সময় পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় এ বছর মোট দেড় লাখ টন পেঁয়াজ কিনেছে টিসিবি। এখনো তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রয়ে গেছে, যা মার্চের শেষ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে দেশে আসবে। এসব চুক্তি গত বছর করা হয়েছে, যা বাতিলও সম্ভব নয়। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ায় এ পেঁয়াজ টিসিবির ‘গলার কাঁটা’ হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, ৪০ থেকে দফায় দফায় ১৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে টিসিবি অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি ও নতুন ডিলার বাড়ানোর মতো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তাতে কোনো সুফল আসেনি। পেঁয়াজ নিয়ে অস্বস্তি কমেনি।
সংস্থাটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, টিসিবির প্রধান কাজ বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। বেশি পেঁয়াজ ক্রয়ের কারণেই এখন বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজিতে উঠেছিল। এ বছর সে পেঁয়াজ ১৫ টাকায় নামিয়েছে টিসিবি। এতে প্রতি কেজিতে জনগণের ১৮৫ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আমাদের একটি হিসাবে রয়েছে যে এমন পরিস্থিতিতে জনগণের ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বেঁচেছে, যা গুটিকয়েক সিন্ডিকেটকারী আগের বছর হাতিয়ে নিয়েছিলেন।
