• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

প্রেমিককে ৫ টুকরোর পর শাহনাজের রুদ্ধশ্বাস ৫ ঘণ্টা

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পাঁচ বছরের প্রেমিক। এরই মধ্যে প্রেমিকা তার স্বামী, সংসার, দুই মেয়ের ভালোবাসা সবই পর করে দেন। সেই প্রেমিক বিভিন্ন মেয়েসহ নিজ মেয়ের দিকে কুনজর দেয় তখন বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন প্রেমিকা। তাই শুধু হত্যা নয়, লাশ পাঁচ টুকরা করে মনের সব রাগ অভিমানের শোধ নিয়েছেন। আর প্রেমিকের লাশের সামনে বসেছিলেন পাঁচ ঘণ্টা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওয়ারীর স্বামীবাগের চাঞ্চল্যকর সজিব হত্যার ঘটনায় পুলিশের কাছে দেওয়া প্রেমিকা শাহনাজ এভাবেই জানান হত্যার কারণ। তবে পুলিশ ঘটনার আরো গভীরে যেতে চান। হত্যাকাণ্ডে ঘটনায় আটক প্রেমিকা শাহনাজের রিমান্ড চায়। আরো কেউ জড়িত আছে কি না তাও যাচাই করতে চায়।

যেভাবে সম্পর্কে জড়ায় : মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়ার পথে গড়ে ওঠে পরকীয়া সম্পর্ক। বয়সে শাহনাজ পারভিনের চেয়ে শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারের স্টাফ সজিব হাসান ছোট হলেও দুজনের সম্পর্ক পাঁচ বছরে অনেক গভীরে চলে যায়। অবশেষে বিভিন্ন নারীতে আসক্তিসহ নানা কারণে সজিবকে হত্যার পর মরদেহ পাঁচ টুকরো করেন শাহনাজ।

শাহনাজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সজিবকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন শাহনাজ। তবে সজিব তার স্বামী নয়। শাহনাজের স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে রয়েছে। পুলিশ বলছে, দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে স্কুলে নেওয়ার সময় পাঁচ বছর আগে সজিবের সঙ্গে পরিচয় হয় শাহনাজের। এক পর্যায়ে গল্প থেকে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান তারা।

স্বামীকে শাহনাজের ফাঁকি : প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে শাহনাজ জানিয়েছেন, অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর পর স্বামীবাগে বাসা ভাড়া নেন সজিব। সেই বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় শাহনাজকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন প্রেমিক। বুটিকসের কাজ শেখার কথা বলে বাসা থেকে নিয়মিত বের হতেন তিনি। আর সন্ধ্যায় স্বামীর বাসায় ফিরতেন। স্বামীর সঙ্গেও শাহনাজের সুসম্পর্ক ছিল না। স্বামী-স্ত্রী দুজন প্রায়ই ঝগড়া করতেন। পাঁচ বছর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রাখলেও শাহনাজের স্বামী তা টের পাননি।

সজিবের যেসব অপরাধের সন্ধান পান শাহনাজ : শাহনাজ পুলিশকে জানিয়েছেন, সজিব তার সঙ্গে সম্পর্কের কথা অন্যদের জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রায়ই টাকা আদায় করতেন। এরপরও সজিব যে কোনো সময় তাদের সম্পর্ক কাউকে জানিয়ে দিতে পারে-এই ভয় থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন তিনি। এক পর্যায়ে আরো কয়েক নারীর সঙ্গে সজিবের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি টের পেয়ে যান শাহনাজ। এছাড়া শাহনাজের মেয়ের দিকেও কুনজর দেন সজিব। এ কারণে সজিবের ওপর ক্ষোভ বাড়তে থাকে শাহনাজের।

পরকীয়ার জন্য স্বামী-দুই সন্তানকে ছাড়েন শাহনাজ : শাহনাজ পরকীয়ায় এতটাই ডুবে ছিলেন যে তিনি স্বামী ও দুই মেয়ের ভালোবাসাও ভুলে যান। গত সোমবার সজিবের বাসায় গিয়ে ওঠেন শাহনাজ। তার খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়। পুলিশও তদন্ত শুরু করে। প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য তথ্য বিশ্নেষণ করে পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে শাহনাজের অবস্থান সজিবের বাসায় বলে নিশ্চিত হয়।

এরই মধ্যে সজিবকে হত্যার পর শাহনাজ তার স্বামী জসীমকেও ফোন করে জানান, খুব বিপদে আছেন। তাকে উদ্ধারের জন্য অনুরোধ করেন। জসীমও বিষয়টি পুলিশকে জানান।

হত্যার পরিকল্পনা : ওয়ারী থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) সাজ্জাদ রোমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে শাহনাজের স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে দিতে বলেন সজিব। বাস কাউন্টারের কাজ ছেড়ে দিয়ে ওই টাকায় সজিব ব্যবসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতে আপত্তি শাহনাজ।  তাকে জানিয়ে দেন, তার কারণে স্বামীর সংসার ছেড়েছেন। তাই গহনা বিক্রি করবেন না। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। শাহনাজের দাবি, সজিব তাকে ছুরি দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। এ সময় তিনি ছুরি কেড়ে নিয়ে সজিবের পেটে আঘাত করেন। এরপর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়।

যে অবস্থায় মিলে সজিবের লাশ : পুলিশ যখন সজিবের ভাড়া বাসায় ঢুকে তখন বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীরা লাশ দেখে হতবাক । বাসার ছোট কক্ষে পাঁচ টুকরো মরদেহের সামনে শাহনাজকে ভাবলেশহীন অবস্থায় বসতে দেখা যায়। পুলিশ জানায়, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সজিবের মরদেহের পাঁচটি টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। কনুই থেকে দুই হাত ও হাঁটু থেকে দুই পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে মেঝেতে রাখা হয়।

শাহনাজ-সজিবের পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ বলছে, শাহনাজ একজন গৃহিণী। চাঁদপুরে তার বাবার বাড়ি । আর সজিবের স্ত্রীর গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। গ্রামে থাকা মা-বাবা ও পরিবারের কারো সঙ্গে সজিবের সম্পর্ক ছিল না।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. হান্নানুল ইসলাম জানান, অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরেই সজিব হত্যাকাণ্ড হয়েছে। স্বামীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর শাহনাজকে সজিব নিজেই তার বাসায় নিয়ে আসেন। সে একজন বহুমুখী প্রতারকও।

ভাড়াটিয়ার তথ্য ফরমে সে নিজের স্ত্রীর নাম ‘মৌসুমী’ বলে জানিয়েছে। তবে এই নামে তার কোনো স্ত্রীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আর লোকজন শাহনাজকেই সজিবের স্ত্রী হিসেবে জানতেন। চরম ক্ষোভ থেকে সজিবকে হত্যার পর  মরদেহকে পাঁচ টুকরো করা হয়েছে। এটা মানসিক বিকৃতির পরিচয়ও। শাহনাজের এক হাতে একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

পুলিশের ওয়ারী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামরুল ইসলাম জানান, মরদেহের টুকরোগুলো স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হয়েছে। রক্তমাখা ছুরিসহ শাহনাজ পারভীনকে আটক করে ওয়ারী থানায় নেওয়া হয়েছে।

রুদ্ধশ্বাস ৫ ঘণ্টা : শাহনাজকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, তাদের ঝগড়াঝাটির পর সজিব যখন ছুরি দিয়ে মারতে যান ওই সময় শাহনাজ তার নিকট থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে উল্টো আঘাত করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। ছুরি দিয়ে আঘাত করার পর সজিব নিস্তেজ হয়ে যায়। ওই সময় শাহনাজ ভাবে সজিব মারা গেছে। এরপর হাত, পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করে সেগুলো বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এরপর কিছুসময় নীরবে বসে থাকে। পরে তার স্বামী খোকনকে ফোন করে। এরপর আরো কয়েকজনকে ফোন দেয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, হত্যার পর যে ৫ ঘণ্টা সে লাশের সামনেই ছিল। যেহেতু সে সবাইকে ফোন করেছে সেই সময় তার কিছুটা উপলব্ধি হয়েছিল। 

কর্মকর্তারা বলছেন, তার কথায় মনে হয়েছে এ ঘটনা সে নিজেই ঘটিয়েছে। তবুও রিমান্ডে এনে আরো কিছু তথ্য পাওয়া যায় কি না সেটি দেখা হবে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads