• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বিপদ হতে পারে নতুন মোবাইল ফোন সেটেও 

কেনার আগে মানি রিসিট আইএমই নম্বর দেখে নেওয়ার পরামর্শ

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

রাজধানীর ফার্মগেটে বাস করেন ব্যবসায়ী আশিক মাহমুদ। মোবাইলফোন মার্কেট হিসেবে পরিচিত মোতালেব প্লাজার একটি দোকান থেকে ‘ভিভো ওয়াই ২০’ মোবাইল সেট কেনেন। মোবাইলফোন সেটে সিম ঢোকানোর পরই গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাকে ফোন করা হয়। চোরাই মোবাইল কিনেছেন এমন কথা বলে ফোনটি মামলার আলামত হিসেবে জমা দিতে বলেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আশিক বুঝতে পারেন মোবাইল কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে মোবাইলটি গোয়েন্দা কার্যালয়ে দিয়ে আসেন।

গত সপ্তাহে ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম জানতে পারে, মগবাজারে চোরাই মোবাইল বিক্রেতা সিন্ডিকেট এক পার্টির জন্য অপেক্ষা করছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ১১টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন প্যাকেট করা অ্যান্ড্রয়েড ফোনসহ চারজনকে আটকও করে। পরে এ ঘটনায় রমনা মডেল থানায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে পেনাল কোড ৪১৩ ধারায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার আসামিরা হলেন-মোহাম্মদ সোহেল, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম সবুজ এবং পলাতক হাসমত আলী। পুরাতন মোবাইলফোন সেট কিনে বিপদে পড়ার এমন ঘটনা অনেকেই জানেন। কিন্তু একদম নতুন মোবাইল দোকান থেকে কিনে বাসায় না ফেরতেই গোয়েন্দা পুলিশের জেরার মুখে পড়ছেন, এমন ঘটনা একদম নতুন। সম্প্রতি রাজধানীসহ সারা দেশে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীসময়ে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভিকটিম ক্রেতারা সেই মোবাইল ফেরত দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে।

এর আগে এই চক্রই কৌশলে চোরাই মোবাইল সংগ্রহ করে মোতালেব প্লাজায় বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করেছিল। পরবর্তীকালে পুলিশ সেসব দোকানে অভিযান চালিয়ে মোবাইল সেট সেটগুলো জব্দ করে। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা মামলাটি নিয়ে কাজ করছি। পলাতক হাসমত আলীসহ এই চক্রের আর যারা যারা আছেন তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, নতুন মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন পাশাপাশি আর পুরাতন মোবাইল কেনাকে একেবারেই ‘না’ বলতে হবে।

চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেট : আসামিদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি পুলিশ জানতে পারে, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই মোবাইল কিনে রাজধানীসহ মোবাইলের বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি করেন।

সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের উপজেলায় শোভন ইলেকট্রনিকস নামের একটি দোকানের তালা ভেঙে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৫ টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন চুরি হয়। মগবাজারে উদ্ধারকৃত মোবাইলের আইএমইআই নাম্বারে সঙ্গে টাঙ্গাইলের দোকান থেকে চুরি হওয়া ওই ৩৫ মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার মিলে যায়। আশিক মাহমুদের ফোনও তার মধ্যে একটি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি আরো জানায়, ৩৫ টি মোবাইলের মধ্যে ঢাকাতে ২০ টি এবং ঢাকার বাইরে অন্য শহরেও বিক্রি করা হয়। দুই হাত বদল করে মোবাইলগুলো তাদের কাছে এসে পৌঁছায়। আশিক মাহমুদের মতো একই প্রক্রিয়ায় শরীয়তপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নাটোর থেকে আরও বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করেছে ডিবি। যেগুলো ওই চুরি হয়ে যাওয়া ৩৫ মোবাইলের আইএমইআই তালিকাভুক্ত মোবাইল সেট।

শোভন ইলেকট্রনিকসের মালিক শোভন আহমেদ বলেন, আমার দোকানের তালা ভেঙে ৩৫টি মোবাইল চুরি হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। সব মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার আমার কাছে লেখা ছিল। শুনেছি ঢাকাতে কিছু ফোন উদ্ধার হয়েছে।

মোবাইল চুরি চক্রের মূলহোতা : গ্রেপ্তার তিন আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি পুলিশকে জানায়, মোবাইল চুরির মূলহোতা পলাতক আসামি হাসমত আলী। সেই তাদের কাছে চোরাই মোবাইল বিক্রি করে। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চুরির সদস্যও সে। তার নামে সারা দেশে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় হাসমতকে সর্বশেষ শনাক্ত করা হয় টাঙ্গাইল জেলায় সদরে একটি তিন তলা বাড়িতে। একাধিক বিয়ে করা হাসমতের এক স্ত্রী থাকেন সেখানে। মধ্যরাতে বাড়ি ঘিরে রেখে ডিবি পুলিশ অভিযানে গেলে হাসমতই পুলিশকে ডাকাত দল হিসেবে আখ্যায়িত করে ৯৯৯-এর মাধ্যমে লোকাল থানাতে ফোন দেন। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ডিবি পুলিশের সঙ্গে কথা বলার সময় বাড়ির ছাদ দিয়ে পাশের বিল্ডিং দিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

গোয়েন্দা পুলিশের পরামর্শ : গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, যেহেতু চারদিকে নানারকম প্রতারণা করে মানুষ ঠকানো হচ্ছে, সেহেতু কেনার সময় নতুন মোবাইলের সঙ্গে মানি রিসিট সংগ্রহ করতে হবে। মানি রিসিটে তারিখ অবশ্যই রাখতে হবে। বিক্রেতার স্বাক্ষর থাকবে। তা ছাড়া বিক্রেতা যে মানি রিসিট দিবে, সেখানে ফোনের মডেল, কালার, আইএমইআই নাম্বার উল্লেখ করে নেওয়া ভালো।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads