• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার

বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কাজুবাদাম চাষ

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

কাজুবাদামের নামে আমদানি হচ্ছে কাজুদানা। আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে এ বাদাম। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশে নতুন বিকশিত কৃষিপণ্য হিসেবে উৎপাদিত কাজুবাদামের উৎপাদন ও রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার হুন্ডির মাধ্যমে হচ্ছে অর্থ পাচার।

সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি কাজুদানার মূল্য ৮ ডলার। কিন্তু আমদানি মূল্য দেখানো হচ্ছে ১ দশমিক ৮৫ ডলার। শুল্ক ফাঁকি দিতে এবং হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করতেই অসাধু আমদানীকারকরা এমনটা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ৬ জানুয়ারি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে জানানো হয়, এক বা একাধিক প্রতিষ্ঠান কাজুবাদাম ঘোষণা দিয়ে কাজুদানা আমদানি করে কোটি কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। এভাবে চক্রটি শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি কাজুদানার মূল্য যেখানে ন্যূনতম ৮ ডলার (সর্বোচ্চ ২২ ডলার) সেখানে আমদানিকারকরা বিল অব এন্ট্রিতে তা দেখাচ্ছে ১.৮৫ ডলার। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

কাজুবাদাম উৎপাদক ও রপ্তানিকারকরাও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাহায্য চেয়েছে। কাজুবাদাম রপ্তানিকারকদের সংগঠন ক্যাশো গ্রোয়ার্স প্রসেসর অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েষনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশে উৎপাদিত কাজুবাদামের উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত করতে কাজুবাদামের নামে কম মূল্যে কাজুদানা আমদান িকরছে। এ বিষয়ে আমরা কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছি। পরবর্তীসময়ে এনবিআর এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য জেনেছে।

তিনি বলেন, যেখানে আর্ন্তজাতিক বাজারে এক কেজি কাজুদানার মূল্য ৮ থেকে ২২ ডলার সেখানে তারা ১.৮৫ ডলার মূল্য ঘোষণা দিয়ে কাজুদানা আমদানি করছে। বাকি টাকাটা তারা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করছে। কারণ এত কম মূল্যে বিশ্বের কেউ কাজুদানা দিতে পারবে না। কাজুবাদাম কৃষকরা জানান, কাজুগাছ থেকে প্রথম যে ফলটি খোলসসহ সংগ্রহ করা হয় সেটিই হচ্ছে কাজুবাদাম। আর সেই কাজুবাদাম প্রসেস করে তার ভেতর থেকে সাদা যে অংশটি পাওয়া যায়, যা বাজারে বিক্রি হয় তাই হচ্ছে কাজুদানা। যদিও সাধারণ মানুষ কাজুদানাকেই কাজুবাদাম হিসেবে চেনে। কাজুবাদামের তুলনায় কাজুদানার বাজার মূল্য অনেক বেশি।

জানা যায়, দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই কাজুবাদামের ফলন হতো। কিন্তু খোসা থেকে ফল ছাড়ানোর প্রক্রিয়া না থাকায় বিশ্ব বাজারে ফলটির ব্যাপক দাম ও চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ব্যাপকহারে তা চাষ হতো না। ২০১০ সালে প্রথম প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে ওঠার পর ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রথম বিদেশের বাজারে কাজুবাদাম রপ্তানি করা হয়। এরপর থেকে কাজুবাদামের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে কৃষকরা। ২০১৮ সালে ৯৬২ টন কাজু ফল উৎপাদিত হয়। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৩২৩ টনে। বিশ্ব বাজারে প্রতি টন কাজুবাদামের মূল্য ১১০০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে পার্বত্য এলাকায় ৮ লাখ ৬৯ হাজার কাজুবাদামের গাছ আছে, যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, টাঙ্গাইল, শেরপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, সিলেট, মৌলভীবাজার ও বরেন্দ্র এলাকায় প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমি কাজুবাদাম চাষের আওতায় এনে ১৫ লাখ টন কাজুবাদাম  উৎপাদন করা হবে। ২০২০ সালে দেশে ২২শ টন কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। ২০২১ সালে ৪ হাজার টন কাজুবাদাম উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ক্যাশো গ্রোয়ার্স প্রসেসর অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েষনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলের ৩টি জেলা-খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে এক মিলিয়ন হেক্টর জমিকে কাজুবাদামের চাষের আওতায় নিয়ে আসা। যেখান থেকে উৎপাদিত হবে ৫ মিলিয়ন টন আনপ্রসেসেড কাজুবাদাম। যা থেকে আমরা ৮ হাজার মিলিয়ন ডলারের কাজুবাদাম রপ্তানি করতে পারব। এজন্য মাটি, পানি, বাতাস কিংবা জনস্ব্যাস্থ্যের কোনো ক্ষতিও হবে না। সরকারের যথাযথ সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ কাজুবাদাম রপ্তানিকারক দেশ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads