• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বিদেশ যাওয়ার খরচ তুলতেই প্রবাসীদের লাগে দেড় বছর

পুরুষের গড় আয় ২৪,৬৭৩ টাকা, নারীদের ১৮,০৩৩ টাকা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৯ মার্চ ২০২১

বিদেশ যাওয়ার খরচ ওঠাতে অভিবাসীদের সময় লাগে কমপক্ষে দেড় বছর। কারণ বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে বিদেশ যাওয়ায় শুধু খরচ ওঠাতেই তাদের দীর্ঘদিন কাজ করতে হয়। আর নানা জটিলতায় দিনদিন বাড়ছে এই ব্যয়। এসব জটিলতা কমানো গেলে আরো কম খরচে বিদেশ যেতে পারতেন অভিবাসীরা। এতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএসবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অভিবাসন ব্যয় জরিপ বাংলাদেশ-২০২০ পরিচালনা করে বিএসবির ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড লেবার উইং এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। আর তথ্য দিয়ে সহায়তা করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় পর্যায়ে অভিবাসীদের গড় আয় ২৫ হাজার ৬৯৩ টাকা। এর মধ্যে পুরুষ অভিবাসীদের গড় আয় ২৪ হাজার ৬৭৩ টাকা। আর নারী অভিবাসীদের গড় আয় ১৮ হাজার ৩৩ টাকা।

অথচ একজন অভিবাসীর বিদেশ যেতে বা জাতীয় পর্যায়ে গড় নিয়োগ ব্যয় ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে পুরুষ অভিবাসীদের গড় ব্যয় ৪ লাখ ১৭ হাজার এবং নারী অভিবাসীদের এক লাখ টাকা। অনেক ক্ষেত্রে নারী অভিবাসীদের বিদেশ যেতে কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন জানানো হয়, অভিবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয় ও মাসিক আয়ের অনুপাত ১৭.৬। এ ক্ষেত্রে পুরুষ অভিবাসীদের ১৯.১ ও নারীদের ৫.৬। অর্থাৎ যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে একজন অভিবাসী বিদেশ যান সেই অর্থ তুলতে তাদের গড় সময় লাগে ১৭ মাসেরও বেশি। এ ক্ষেত্রে পুরুষ অভিবাসীদের ওই টাকা তুলতে ১৯ মাস বা দেড় বছরেরও বেশি সময় লাগে। বিপরীতে নারী অভিবাসীদের সময় লাগে গড়ে ৫ মাসের বেশি।

তবে অদক্ষ কর্মীর তুলনায় দক্ষ কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার ব্যয় কিছুটা কম। অদক্ষ কর্মী হিসেবে বিদেশ যাওয়ার গড় ব্যয় ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যেখানে দক্ষ কর্মীদের গড় ব্যয় ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আবার গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশ যাওয়ার গড় ব্যয় ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানত ৭টি দেশে বাংলাদেশিরা কাজের সন্ধানে বেশি যান। দেশগুলো হচ্ছে-সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও সিঙ্গাপুর। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে যেতে অভিবাসীদের সর্বোচ্চ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে যাওয়ার গড় ব্যয় ৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে যাওয়ার গড় ব্যয় ৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। মালয়েশিয়ায় ৪ লাখ ৪ হাজার, কাতারে  ৪ লাখ ২ হাজার এবং ওমানে যেতে গড়ে ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা। এর বিপরীতে সিঙ্গাপুরে অভিবাসীদের গড় আয় ৩৮ হাজার ১২৯ টাকা। অন্যান্য দেশে ২৬ হাজার ৬৯, মালয়েশিয়ায় ২৩ হাজার ৮৯৬, কাতারে ২২ হাজার ২৯৩, সৌদি আরবে ২২ হাজার ২১৪ এবং ওমানে অভিবাসীদের গড় আয় ১৯ হাজার ১৭৭ টাকা।

পুরুষ অভিবাসীদের মধ্যে ৭৭.৪ শতাংশ অদক্ষ, ২০.১ শতাংশ দক্ষ এবং পুরুষ গৃহকর্মী ২.৪ শতাংশ। নারী অভিবাসীদের মধ্যে গৃহকর্মীর সংখ্যাই বেশি (৮৩.৮ শতাংশ)। তাদের ৮.৭ শতাংশ অদক্ষ এবং ৭.৫ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক। আবার পুরুষ অভিবাসীদের গড় বয়স ৩২.৫, নারীদের গড় বয়স ৩৩.৪ বছর।

বিএসবি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ২৭.৩ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৫.২ ও নারী ১৪.৮ শতাংশ। অভিবাসীদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ বিদেশ যান। পরের অবস্থানে আছে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগ। জেলার মধ্যে কুমিল্লা জেলার অভিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর পরের আছে চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিবাসীদের বিদেশ যাওয়ার ব্যয় কমাতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে প্রভাব রাখতে পারে। ব্যয় কমাতে পারলে অভিবাসীদের বিদেশ যেতে ঋণ করতে হতো না। অভিবাসনে জটিল প্রক্রিয়াকে ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এজন্য ‘প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী’ উভয় দেশের নিয়োগকারীরা দায়ী। এ ছাড়া ‘অভিবাসন চেইন’-এর চুক্তি প্রতিষ্ঠায় অকৃতকার্যতাকেও অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, অভিবাসন ব্যয় কমানোর মাধ্যমে অভিভাসন কর্মীদের সুরক্ষা ঝুঁকি কমানো এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জরিপ প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে শ্রম অভিবাসন খাতের ক্রমবিকাশে প্রতিবেদনটিতে প্রকাশিত তথ্য পরিকল্পনাকারী, নীতিনির্ধারক, গবেষক ও অন্যান্য অংশীজনের তথ্যভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads