• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
এবার আক্রান্ত হচ্ছে তরুণরা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

এবার আক্রান্ত হচ্ছে তরুণরা

সংক্রমণ বাড়লেও সতর্কতা মানছে না

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২০ মার্চ ২০২১

দেশে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। মাঝে বেশ কয়েক মাস শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কমতির দিকে থাকলেও এখন আবার ঊর্ধ্বমুখী। অবস্থা ভয়ংকর আকার ধারণ করলেও বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা মানছেন না অনেকেই।

কয়েকদিন ধরে আবার করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। গতকাল সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.০৪ শতাংশে। হাসপাতালের আইসিইউগুলোতে করোনা রোগীতে পূর্ণ প্রায়। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মাঠে নামছে পুলিশ। সারা দেশের সকল হাসপাতালকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, নতুন করে এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই তরুণ, তাদের বেশিরভাগেরই আইসিইউ লাগছে। তিনি বলেন, ‘গেল দুই মাস আমরা স্বস্তিতে ছিলাম, তাই এখন আমরা কোনো কিছু মানছি না। সামনের দিকে আরো বড় ধরনের বিপদে পড়তে যাচ্ছি, যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি।’ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রশাসনসহ সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সারা দেশে আইসিইউগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৫৫৮টি। তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ২৮৬ জন, বাকি ২৭২টি শয্যা খালি রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ডেডিকেটেড ১০টি সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ রয়েছে ১১৭টি, তার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ৮৮ জন আর ফাঁকা রয়েছে ২৯টি। অপরদিকে, বেসরকারি ৯টি হাসপাতালের ২৮১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী আছেন ২০১ জন আর শয্যা ফাঁকা রয়েছে ৮০টি।

গত ১৭ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ১৮ মার্চ  সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনাতে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ১৮৭ জন। যা কি না গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ৯ ডিসেম্বরের পর গত বৃহস্পতিবার একদিনে শনাক্ত ২ হাজার ছাড়িয়ে গেল। গতকাল শুক্রবার ১৯ মার্চ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৯৯।

গত ১৭ মার্চে শনাক্তের হার ছিল সাত দশমিক ৬৮ শতাংশ, ১৬ মার্চে আট দশমিক ২৯ শতাংশ, ১৫ মার্চে নয় দশমিক ৪৮ শতাংশ, ১৪ মার্চে সাত দশমিক ১৫ শতাংশ, ১৩ মার্চে ছয় দশমিক ২৬ শতাংশ, ১২ মার্চে ছিল ছয় দশমিক ৬২ শতাংশ, ১১ মার্চে ছিল পাঁচ দশমিক ৮২ শতাংশ আর ১০ মার্চে ছিল পাঁচ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনাতে দৈনিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

রাজধানীর বেসরকারি এভার কেয়ার হাসপাতালের স্পেশালিস্ট রেজিস্ট্রার ডা. নাকিব শাহ আলম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপনারা হয়তো টের পাননি বা খবর রাখেননি। করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউগুলো কিন্তু আবারো ভরে গিয়েছে। অনেকদিন ফোন আসেনি আইসিইউ বেডের খোঁজের জন্য; কিন্তু আবারো সেটা শুরু হয়েছে। সবাই একটু সতর্ক হোন।’ একই কথা লিখেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভ্যাস্কুলার সার্জন ডা. সাকলায়েন রাসেল। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘এর কাছ থেকে ওর কাছ থেকে ফোন আসছে। হাসপাতাল লাগবে, বেড লাগবে, আইসিইউ লাগবে। আপনজনের মৃত্যুর খবরগুলো বাড়ছে, কারণ একটাই করোনা! খালি হয়ে যাওয়া হাসপাতালগুলো আবারো ভরে উঠছে! সিট সংকট শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। আমাদের মনে হয় আরেকটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন!’

গত অক্টোবর-নভেম্বরে যে পরিমাণ রোগী ছিল তার দ্বিগুণ রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে ভর্তি বলে জানান হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ।

নতুন সংক্রমণে জটিলতা বেশি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য গবেষণা প্রয়োজন। তবে অনেক রোগী পাচ্ছি যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে বেশি। আর করোনায় আক্রান্ত রোগী যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, তাদেরই আমরা সিভিয়ার রোগী হিসেবে বিবেচনা করি। একই সঙ্গে তরুণ রোগী বেশি পাচ্ছি এবার।

ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ বলেন, প্রথমবারের সংক্রমণের সময় দেখেছি, ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার বেড়েছে, ধীরগতিতে নেমেছে। কিন্তু এবারের সংক্রমণ একটা ‘শার্প রাইজ’ হচ্ছে। শার্প রাইজ মানে হচ্ছে এর ট্রান্সমিশন খুব দ্রুত হচ্ছে।  ‘আইসিইউর জন্য এখন ফোন কল বাড়ছে এখন’—বলেন ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, আক্রান্তের হার খুব দ্রুত বাড়ছে। ঢাকা মেডিকেলের ভাইরোলজি বিভাগের ল্যাবে আজ আক্রান্তের হার ২৬ শতাংশ। তাদের মধ্যে নন-কোভিড ইউনিটে কাজ করা মেডিকেল শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।  আর আক্রান্তের হারের পাশাপাশি সিভিয়ার রোগীর সংখ্যাও বেশি। এবারের স্ট্রেইনটি মারাত্মক সংক্রামকই শুধু নয়, বিপজ্জনকও বটে। এটি বিদ্যুৎগতিতে আগের স্ট্রেইনটিকে প্রতিস্থাপন করবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, নতুন ভেরিয়েন্ট মানেই বেশি বিপজ্জনক, বেশি সংক্রামক, বেশি মৃত্যু। হাসপাতালে যারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগেরই আইসিইউ লাগছে কারণ অবস্থা খারাপ না হলে মানুষ হাসপাতালে আসছে না। এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানলে সবাই ভালো থাকবেন। নো মাস্ক নো সার্ভিসের পর যেমন সংক্রমণ কমে এসেছিল, সেভাবে আবারো চেষ্টা করা দরকার।

করোনায় আক্রান্ত ও করোনার উপসর্গের রোগী লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, হাসপাতালে খালি শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ আইসিইউতে বেড নেই। মহাদুর্যোগ দরজায় আবার কড়া নাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রধান অস্ত্র হলো, মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং করোনার টিকা নেওয়া। নয়তো প্রতিটি অবহেলার দায় শোধ করতে হতে পারে।

দেশের কোভিড ডেডিকেটেড অন্যতম হাসপাতাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালের আইসিইউ কখনোই শূন্য থাকেনি, তবে রোগীদের ওয়েটিং লিস্ট ( অপেক্ষমাণ তালিকা) কমে এসেছিল। এই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ( আইসিইউ)-এর প্রধান ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম বলেন, আইসিইউর ওয়েটিং লিস্ট বড় হচ্ছে আর ওয়ার্ডে ভর্তি পিকে চলে গেছে। আমাদের ক্যাপসিটি প্রায় আমরা ক্রস করে চলে গেছি।

আগে আমরা আইসিইউ থেকে অনেক রোগীকে কেবিনে স্থানান্তর করতে পারতাম অর্থাৎ তারা সুস্থ হতেন, ভালোর দিকে যেতেন; কিন্তু এখন রোগীরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে বেশি বলেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads