• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ইকোনমিক টাইমসের নিবন্ধ

মোদির সফরে লাভবান হবে বাংলাদেশ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফরে আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর এটাই হবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ সফর।

মোদির এই সফরের মাধ্যমে প্রতিবেশী দুই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবকাঠামো এবং অন্যান্য সংযোগ উদ্যোগ আরো জোরদার হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় সংযোগ এবং এ সংশ্লিষ্ট খাতে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রত্যাশাও করা হচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসব পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে হচ্ছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইকোনমিক টাইমসে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। এটি লিখেছেন বৈশ্বিক থিংক ও অ্যাকশন-ট্যাংক কাটস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক বিপুল চ্যাটার্জি। তার মতে, এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলে  বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে। এ সম্পর্কে বেশ কিছু ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। লিখেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর শুভক্ষণে সোনার বাংলা গড়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরো গতিশীল হোক। যদিও আমরা রাজনৈতিক সীমানায় পৃথক পৃথক প্রজাতন্ত্র থাকব; তারপরও আসুন আমরা বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জ্ঞানের সহযোগিতায় সংযুক্ত নতুন ধরনের কনফেডারেশন সন্ধান করি।

এতে বলা হয়েছে, ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক নির্মাণে বাংলাদেশের অবস্থান একটি প্রজাপতির মতো। এই প্রজাপতির মূল দেহ বাংলাদেশ; যার পাখা ছড়িয়ে আছে এক পাশে রাশিয়া এবং মরিশাসের বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চলজুড়ে এবং অন্য পাশে জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া। ফলে বাংলাদেশ মুক্ত, উন্মুক্ত এবং সুরক্ষিত। দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাশাপাশি বৃহৎ অর্থনীতির প্রতিবেশী (ভারত) থেকেও সুবিধা পেতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক (কানেক্টিং টু থ্রাইভ : চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অপরচুনিটিস অব ট্রান্সপোর্ট ইন্টেগরেশন ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া শীর্ষক) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অবাধ পরিবহন সংযোগ স্থাপিত হলে তা বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয় ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। এ ছাড়া এর ফলে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাই লাভবান হবে। বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে।

কয়েক বছর ধরে দুই দেশের সরকার এসব লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অবকাঠামো সংযোগ প্রকল্প চালু হয়েছে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো সম্প্রতি ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতু; যা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং ত্রিপুরার সাবরুম জেলার মাঝে সংযোগ স্থাপন করেছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-এই উদ্যোগগুলো শুধু সড়কপথে যোগাযোগ বৃদ্ধির মধ্যেই সীমিত নয়। এসব উদ্যোগ রেলপথ, বিমান, অভ্যন্তরীণ নৌপথ এবং উপকূলীয় পণ্য পরিবহনের সব ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করছে। ছয়টি অচল রেলপথের মধ্যে ইতোমধ্যে পাঁচটি সচল করা হয়েছে এবং নতুন দুটিসহ ষষ্ঠ রেলসংযোগ পথটিও চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আসামের গুয়াহাটি এবং ঢাকার মধ্যে বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারতের উত্তর-পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলীয় অনেক ছোট শহর ও নগরীর সঙ্গে আকাশপথে চট্টগ্রাম এবং সিলেটসহ বাংলাদেশের অনেক জেলা সংযুক্ত হবে। দুই দেশের মাঝে উপকূলীয় পণ্য পরিবহনের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফলে মোংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোতে নেওয়া সহজ হবে।

বাংলাদেশ এবং ভারতের মাঝে যখন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দৃঢ়ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন সেখানে বিনিয়োগ এবং জ্ঞানের আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। ভারতের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আরো বেশি বিনিয়োগে নরেন্দ্র মোদির সরকারের উৎসাহ দেওয়া উচিত।

দ্বিপক্ষীয় মান উন্নয়ন জোরদার করা ছাড়া এটি বাংলাদেশের গ্রামীণ অ-কৃষি অর্থনীতি, বিশেষ করে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়াজাত পণ্যের মতো খাতগুলোতে আরো বেশি অর্ধ-দক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এই সংকটের সমাধানে পারস্পরিক জ্ঞানের আদান-প্রদান গুরুত্বপূর্ণ এক স্তম্ভ; যেখানে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারত জলবায়ুনির্ভর আধুনিক কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পুনঃনবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো খাতগুলোতে সংকট এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য সক্ষমতা অর্জন করেছে।

নরেন্দ্র মোদির ‌আত্মনির্ভর ভারত চিন্তাভাবনার অন্যতম এক পরীক্ষা বাংলাদেশ। যদিও ভারত আত্মনির্ভরশীলতার পথে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তারপরও জিরো ডিফেক্ট, জিরো ইফেক্ট নীতি নিয়ে বিশ্বের কাছে সেবা এবং পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে ভারত। ভারতের এই উদ্যোগ থেকে ক্রমবর্ধমান ক্রয় সক্ষমতাসহ অতিরিক্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যথাযথভাবে পেতে পারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ এমন এক প্রতিবেশী; যাকে নিয়ে মোদির দর্শন হলো সবার সঙ্গে, সবার বিকাশ, সবার বিশ্বাস। এর উদ্ভব হয়েছে ভারতের বহু প্রাচীন দর্শন থেকে; যা বর্তমানে মানবকেন্দ্রিক বিশ্বায়নের অন্যতম একটি ধাপ। মোদির এই দর্শনের পরীক্ষাক্ষেত্র বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads