• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সনদ জটিলতায় এনটিআরসিএ

পেরিয়ে যাচ্ছে নিবন্ধনধারীর চাকরিতে প্রবেশের বয়স

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০২১

একের পর এক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন এবং সনদ দিয়ে জটিলতা তৈরি করে বিপাকে পড়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। হাজারো নিবন্ধনধারী নিয়োগের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর পার করে ফেলেছেন। এখনো সঠিক  সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করে আপিল করে সেই মামলাতেও হেরেছে এনটিআরসিএ। শুধু তাই নয়, বিধি না মেনে ১২তম নিবন্ধন প্রার্থীদের নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। যদিও পরে তা সংশোধন করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সনদধারী প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে এনটিআরসিএ।

উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে নিয়োগ বঞ্চিত প্রথম থেকে ১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৭ হাজার ২৩৪ জনকে নিয়োগ দিতে হবে। আর ১৩তম থেকে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আরো ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এ ছাড়া রয়েছে দ্বিতীয় নিয়োগ চক্রের সুপারিশ করা এক হাজার ২৮৪ জন। বর্তমানে শূন্যপদ রয়েছে প্রায় ৫৭ হাজার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে বেকয়দায় পড়েছে এনটিআরসিএ। মন্ত্রণালয়ও রয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেতে। প্রথম থেকে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেছেন মোট ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৮৫ জন। এই তালিকা থেকে অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয় ৩৬ হাজার জনকে। দেশের বিভিন্ন বেসরকরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মোট ৩৮ হাজার ৮০০ জন শিক্ষকের তালিকা পাঠানো হয়।

অন্যদিকে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি জারির ঠিক আগমুহূর্তে নিয়োগ পেতে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে চাকরিবঞ্চিত ২ হাজার ২০০ জন হাইকোর্টে মামলা করেন। এরপর আর গণবিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। বন্ধ থাকে শিক্ষক নিয়োগ। ২০১৭ সালে নিয়োগ বঞ্চিতদের ১৫ দিনের মধ্যে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জানান, মূলত হাইকোর্টের আগের রায় বাস্তবায়ন না করায় আদালত অবমাননার মামলার শুনানিতে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। তখন আদালত অবমাননার বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি দিতে পারবে না বলেও আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি রায় দেন। ওই রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। তার মধ্যে সম্মিলিত মেধা তালিকা অনুযায়ী রিট আবেদনকারী এবং অন্যান্য আবেদনকারীর নামে সনদ জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নিবন্ধনধারীদের মধ্যে ১৭ হাজার ২৩৪ জন রিট করেছিলেন।

রিটকারী পক্ষের সনদধারী মো. আতিকুর রহমান বলেন, ১৭ হাজার ২৩৪ জন নিবন্ধনধারী রিট করেছিলাম। আমরা ২০১৭ সালের নিয়োগবঞ্চিত। দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ৭ থেকে ৮ হাজার প্রার্থী রয়েছেন নিয়োগের অপেক্ষায়। অন্যরা বিভিন্ন চাকরিতে চলে গেছেন। আর বর্তমানে শূন্যপদ রয়েছে ৫০ হাজার। ফলে এই অল্প সংখ্যক প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।  রিটকারীরা জানান, তাদের বেশির ভাগের বয়স ৩৫ বছর পার হয়ে গেছে। আদালতের রায় মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নিয়োগ সম্পন্ন করা উচিত। নিয়োগ বঞ্চিত পরিতোষ চন্দ্র হালদার বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে ১৭ হাজার ২৩৪ শিক্ষককে নিয়োগের সুপারিশ সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষায় যেসব প্রার্থীদের বয়স ৩৫ বছর পর হয়ে গেছে তাদের জন্য আবেদন চাইতে হবে। আবেদনের পর দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

জানা গেছে, প্রথম থেকে ১২তম নিয়োগ চক্র পর্যন্ত বিধি ভঙ্গ করে এনটিআরসিএ। বিধি অনুযায়ী শূন্য পদের বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রার্থীকে পাস করিয়ে সনদ দেওয়ার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত প্রার্থী পাস করিয়ে সনদ দেওয়া হয়েছে। এতে হাজার হাজার নিবন্ধনকারীর বয়স ৩৫ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশ করতে পারেননি।

এই পরিস্থিতিতে নিবন্ধনধারীরা মামলা করলে আদালতের নির্দেশনায় নিয়ম মেনে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রার্থীদের ২০ শতাংশ অতিরিক্ত রেখে সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা নেয়। বর্তমানে ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা সনদ পেয়েছেন। আর ১৬তম নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা চলমান রয়েছে বলে জানান এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক ফিরোজ আহমেদ।

১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনে চাকরিবঞ্চিত ২ হাজার ২০০ জন চাকরি না পেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। এ ছাড়া ১৪তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ১৮ হাজার ৩১২ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১১ হাজার ১৩০ জন। ১৬তম নিবন্ধনে ২২ হাজার ৩৯৮ জন প্রার্থী। তাদের মৌখিক পরীক্ষা চলমান রয়েছে।

প্রথম নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা ২০টি মামলা করেন  বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় ৩৫ বছরের বেশি বয়সী সনদধারীদের নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। ২০১৯ সালের ২২ মে হাইকোর্ট ৩৫ বছর বেশি বয়সী সনদধারীদের নিয়োগের নির্দেশ দেন। আপিলেও (২০২০ সালের ১১ অক্টোবর) হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। আর পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ হয় এ বছর ৯ ফেব্রুয়ারি। এনটিআরসিএর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয় বিভিন্ন কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে প্রায় ৩০০টি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর  চেয়ারম্যান মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ৫৭ হাজার ৫০৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া যাবে। এর মধ্যে ১ হাজার ১ হাজার ২৮৪টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনের সমস্যা ছিল তাদের আবেদনের জন্য সময় দেওয়া আছে। গণবিজ্ঞপ্তির জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। অনেক কাজ রয়েছে, সে কারণে কবে গণবিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হবে তা এখনই বলতে পারছি না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads