• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন এখন নিজ পায়ে দাঁড়াতে শিখছে

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন এখন নিজ পায়ে দাঁড়াতে শিখছে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ মার্চ ২০২১

প্রতিদিনই বাসে, সিগনালে, ফেরিতে, পার্কেসহ বিভিন্ন স্থানে দিনে ও রাতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করে তৃতীয় লিঙ্গের কিছু মানুষ। যা ভালো চোখে দেখছেন না তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের গুরু মাতারা।

তারা বলছেন, এ ধরনের কর্মকান্ডের জন্য সাধারণ মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ছে এবং এটা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবনমান উন্নয়নের পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে। সেজন্য গুরু মাতারা এই চাঁদা নেওয়া বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু পারছেন না। তাই প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন এই চাঁদা আদায়কারীদের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের। 

আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ তৃতীয় লিঙ্গের গুরুমাতাদের পক্ষে রাখি শেখ।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আমরা যারা তৃতীয় লিঙ্গের তাদেরও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। আমরা যারা তৃতীয় লিঙ্গের তারা, এখন কর্মমুখী হওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচিতি পেলে নিজ পরিবার কিংবা সমাজ থেকে তাকে আলাদা চোখে দেখা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, প্রতিবেশি কিংবা সমাজে অবহেলিত হওয়ার পর তৃতীয় লিঙ্গের সেই মানুষটিকে আশ্রয় দেয় একজন বয়স্ক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। যিনি গুরুমা হিসেবে পরিচিত। অনেকেই আশ্রয় নেন একজন গুরুমার কাছে। গুরুমাই তাদের ভরণ পোষণ ভালোমন্দের দেখাশুনা করেন। এখন আমরা যারা এখানে গুরুমা আছি, আমাদের আশ্রয়ে যারা আছে, আমরা তাদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যে, যে কাজে আগ্রহী বা পারদর্শী তাকে সেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। কেউ পোশাক তৈরির কাজ করছে, কেউ পার্লারে কাজ করছে।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষজন এখন নিজ পায়ে দাঁড়াতে শিখছে উল্লেখ করে রাখি বলেন, সরকারি-বেসরকারি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাদের প্রতি পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আমাদের প্রতি অনেকের দৃষ্টি ভঙ্গি বদলাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমাদের কমিউনিটির বেশির ভাগ মানুষ যখন জীবনমান উন্নয়নে, কর্মমুখী পথে অগ্রসর হচ্ছে, ঠিক তখনই একটি চক্র আমাদের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার কোন ভিত্তি নেই উল্লেখ করে বলেন, আমরা পাবলিক পরিবহনে সাধারণ মানুষদের বিরক্ত করে চাঁদা তোলার বিপক্ষে। মাদক বিক্রি, ছিনতাই, চুরি, যৌনকর্মের সমর্থন করিনা। যারা এধরনের কাজ করছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা চাই না, তাদের এ ধরনের কর্মকান্ডের কারণে আমাদের প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হোক। আমরা আমাদের পরম্পরায় পাওয়া যেমন: বিয়ে অনুষ্টান, বাচ্চা নাচনো, বিভিন্ন উৎসবে মানুষ খুশি হয়ে যা দেয় তা নিয়েই সন্তুষ্ট।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আমাদের জীবন মান উন্নয়নে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে আসছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমাদের স্বাবলম্বী করতে সহায়তা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন। যার ফলে আমরা সমাজের অবহেলা বঞ্চনা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, আমরাও সমাজের অন্য দশজন মানুষের মত স্বাভাবিক ভাবেই বেঁচে থাকতে চাই। গুরু পরম পরায় যেটা শত বছর হয়ে আসছে সেটা করতে চাই। যারা বাস, সিগনাল, ফেরি নাইট সাধারণ মানুষকে বিরক্ত করে, জোর করে টাকা নিচ্ছে আমরা আশা করবো প্রশাসন তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সংবাদ সম্মেলন, আসমানী, বকুল হাজী, রনি হাজী, আনোয়ারি, কাজল, কচি হাজী, পলি, সামিমা, রশিদা, রাশিদা, সারিকা, স্বপ্না, সুমিসহ আরো অনেক গুরু মাতা উপন্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads