• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

স্বাগতম নরেন্দ্র মোদি

ঢাকা-দিল্লি নতুন অধ্যায়ের সূচনা

  • কূটনৈতিক প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ মার্চ ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের সরকারি সফরে আজ সকালে ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরকালে মোদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে উভয়দেশ কীভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। এ ছাড়া মোদির সফরে দুদেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা চুক্তিও সই হবে। তার এই সফরে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কোন্নয়নে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। 

সফরসূচি অনুযায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সকাল ১১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাকে গার্ড অন অনার দেওয়া হবে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বিকেলে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে স্বাধীনতা দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মোদির সফরকালে ভারতের সঙ্গে ৩টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা। অন্য দুটি হচ্ছে-উভয় দেশের ইনস্টিটিউটশনের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে সহযোগিতা। এ ছাড়া মুজিবনগর স্বাধীনতা সড়ক, ঢাকা-জলপাইগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস, বঙ্গবন্ধু- বাপু মিউজিয়াম উদ্বোধন করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কানেকটিভিটি, বাণিজ্য, কোভিড প্রতিরোধ, পানিবণ্টন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, বিদ্যুৎ সহযোগিতার ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

সফরকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শনিবার সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জ যাবেন। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী মন্দিরে যাবেন। সেখানে তিনি প্রার্থনা করবেন। একই সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। মোদি ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা যাবেন হেলিকপ্টারে। সাতক্ষীরা সফর শেষে সেখান থেকে যাবেন গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। টুঙ্গিপাড়ায় তাকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে কাশিয়ানির ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের মন্দির পরিদর্শন করবেন। এই মন্দির পরিদর্শন শেষে মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করবেন। তারপর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরবেন। এদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। বৈঠকের আগে তারা কিছুক্ষণ একান্ত আলোচনা করবেন। এই আলোচনায় দুই প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে ঢাকা ও দিল্লির অবস্থান কী হবে। এরপর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুদেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন নরেন্দ্র মোদি। বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মোদি। এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। বঙ্গভবনের ভিজিটর বইতেও স্বাক্ষর করবেন মোদি। বঙ্গভবন থেকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি সরাসরি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাবেন।

মোদির ঢাকা সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান জানাতে ঢাকায় আসছেন। তিনি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। করোনাকালে এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর। এটা আমাদের জন্য সম্মানের। এই সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঘিরে যে আন্দোলন হচ্ছে এতে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের গণতান্ত্রিক দেশ। এখানে সব মতের মানুষের বক্তব্য প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কেউ কেউ হয়তো মোদির সফরের বিরোধিতা করছেন। তবে দুই দেশের বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ তার আগমন উপলক্ষে খুব খুশি। প্রেস ক্লাবের সামনে দুই চারজন এনে বিক্ষোভ করালে কী হবে? দুই দেশের সম্পর্কে সেটি কোনো প্রভাব ফেলবে না। আর রাষ্ট্রীয় অতিথি যারা ঢাকা সফর করছেন বা করবেন, বাংলাদেশ সরকার তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে।

এদিকে মোদির ঢাকা সফর সামনে রেখে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জানিয়েছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। এই সফর হবে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি মাইল ফলক। সফরকালে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের ৬ থেকে ৭ জুন প্রথমবার ঢাকা সফর করেন। এবার তিনি দ্বিতীয় দফায় ঢাকা সফরে আসছেন।

মোদির সফর উপলক্ষে ভারত থেকে উপহার হিসেবে আরো ১২ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সচিব। সচিব বলেন, ভারত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি বন্ধের কোনো খবর সরকারের হাতে নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads