• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

ঢাকা-চিটাগাং সড়কের শনির আখড়ায় গতকাল হেফাজতের হরতাল চলাকালে সমর্থকদের টায়ায় জ্বালিয়ে বিক্ষোভ

বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

হেফাজতের হরতালে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ : পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০২১

রাজধানী ঢাকায় হরতালে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও দেশের কয়েকটি স্থানে তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল রোববার আবারো দফায় দয়ায় সংঘর্ষে জড়িয়েছিল হেফাজত কর্মীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায় চারজন। এছাড়া চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হামলা চালানো হয় ডাকবাংলোয়। রাজশাহীতে বিআরটিসির দুটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জে প্রবেশের মুখ সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজত কর্মী ও পুলিশের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সরেজিমনে রাজধানীর বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা যায়, রোববার সকাল ৯ টা পর্যন্ত হেফাজতের কোনো মিছিল ও সমাবেশ লক্ষ করা যায়নি। এমনকী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ও পল্টন এলাকা ছিল হেফাজত শূন্য। পুলিশ সদস্যদের অলস সময় কাটাতেও দেখা গেছে। এসময় যানবাহন আগের দিনের তুলনায় কম ছিল। তবে সকাল ৯ টার পরে মোহাম্মদপুরের বসিলা রোডে হেফাজতের কর্মীরা প্রথম মিছিল বের করে। এ সময় মিছিলকারীদের পুলিশ রাস্তা থেকে সরে যেতে বললে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা হরতালবিরোধী মিছিল বের করলে দুপক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় পুলিশও যোগ দিয়ে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট  নিক্ষেপে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বেলা বাড়তে থাকলে রাজধানীর যানচলাচলও বেড়ে যায়। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা কম থাকলেও সিএনজি, রিকশা ছিল বেশি। গণপরিবহনও অন্যান্য দিনের ন্যায় কিছু কম চলতে দেখা যায়। বেলা ১১ টার দিকে  পল্টন বায়তুল মোকারম এলাকায় হেফাজত কর্মীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সাড়ে ১১ টার কিছু পর উত্তরগেট সংলগ্ন এলাকায় হেফাজত কর্মীরা মিছিল বের করে। এ সময় দক্ষিণগেট এলাকায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরাও মিছিল বের করে। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। শুরু হয় দুপক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পরে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে হেফাজত কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে হেফাজত কর্মীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের ভেতর ঢুকে যায়। পরে সেখান থেকে হেফাজত কর্মীরা আর বের হননি।

এর কিছুক্ষণ পর হেফাজতের হরতাল শান্তিপূর্ণ দাবি করে সংগঠনের নেতা মামুনুল হক বলেন, ‘আমাদের শান্ত থাকতে দিন। আবার যদি আমার কোনো ভাইয়ের রক্ত ঝরে, হত্যা করা হয়, আর একটি গুলিও যদি ছোঁড়া হয়, তাহলে গোটা দেশকে অচল করে দেওয়া হবে।’

মামুনুলের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা বায়তুল মোকাররম ও আশপাশে অবস্থান নিয়ে মিছিল করেন। দেশের নানা প্রান্ত সহিংস হয়ে উঠলেও এখানে তারা ছিলেন অনেকটাই শান্ত। দুপুর ২ টার পর হরতাল সমর্থনে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে পল্টন, দৈনিক বাংলা সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

বেলা বাড়তে থাকলে রাজধানীর সড়কে যানবাহন আরো বেড়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে গেন্ডারিয়ার হেফাজতের সমর্থনে মিছিল বের করে মাদরাসার ছাত্ররা। পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে ইটপাটকেল মারতে থাকে। এ সময় পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ইটের আঘাতে পুলিশের একজন এডিসিসহ কয়েকজন সদস্য আহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বিকেল ৩ টার দিকে হেফাজত কর্মীরা কুড়িল বিশ্বরোড অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ এসে হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে ১০ মিনিটের মধ্যে তারা রাস্তা ছেড়ে দেয়।  এছাড়াও মহাসড়কের কয়েকটা বাধাপ্রাপ্ত ছাড়া প্রায় সকল রুটেই যানচলাচল ছিল স্বাভাবিক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারো তাণ্ডব আরো ৪ জনের মৃত্যু, আহত ৫০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, বিজিবির সঙ্গে হেফাজতের কর্মীদের সংঘর্ষে আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে দুইদিনে মোট ৯ জনের মৃত্যু হলো। এছাড়া অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল রোববার জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন-নন্দনপুরের সাদু মিয়ার ছেলে নুরুল আমিন (২২), সরাইলের সৈয়দটুলা গ্রামের  সফি আলী মিয়ার ছেলে আলামিন (১৯) সরাইলের খাটিহাতা বিশ্বরোডের অলতু মিয়ার ছেলে কালন মিয়া ও একজন অজ্ঞাত (৪০)।

এলাকাবাসী জানান, শনিবার বিকালে হরতালের পক্ষে বুধল এলাকা থেকে একটি মোদিবিরোধীদের একটি মিছিল শুরু হয়। এ সময় বিজিবি, পুলিশ ও কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হলে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরুল আমিনের মৃত্যু হয়।

হরতালের পক্ষে-বিক্ষোভ মিছিলের সময় জেলা সদরের পশ্চিম মেড্ডা এলাকায় জেলা পুলিশ লাইনে হামলা চালান তারা। এসময় পুলিশের গুলিতে অজ্ঞাত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অন্যদিকে জেলার সরাইলের বিশ্বরোড এলাকায় পুলিশের সাথে হরতালকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুঁড়ে। এ সময় আলামিন ও কালন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে আনা হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় নিহতরা হলেন নন্দনপুর হারিয়া গ্রামের আবদুল লতিফ মিয়ার ছেলে ওয়ার্কশপের দোকানি জুরু আলম (৩৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দাবিড় মিয়ার ছেলে শ্রমিক বাদল মিয়া (২৪) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারিউড়া এলাকার মৈন্দ গ্রামের জুরু আলীর ছেলে সুজন মিয়া (২২), আলী আহমেদের ছেলে শ্রমিক কাউসার মিয়া (২৫) ও বউধল এলাকার জুবায়ের (১৪)।

এদিকে গতকাল সকালে জেলার আশুগঞ্জে হেফাজতের লোকজন একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করলে মিছিলটি থেকে আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম টোলপ্লাজায় হামলা চালায়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা টোলপ্লাজা ভাঙচুর করে। পরে তারা টোলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া মহাসড়কের ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশ কয়েকটি তোরণ ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হাজি সফিউল্লাহ মিয়া ও যুগ্ম-আহ্বায়ক আবু নাছের আহমেদ ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শোভনের বাড়িতেও হামলা ও আগুন দেয় তারা। এর আগে রোববার ভোর থেকে হরতাল সফল করতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নেন উপজেলার স্থানীয় শীর্ষ উলামাসহ মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রানা নূরুস সামস হাসপাতালে আনা ৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, ‘আজকের পরিস্থিতি আপনারা নিজেরাই দেখছেন। জনগণের জানমালের রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এসব তাণ্ডব চালাচ্ছে জামায়াত, শিবির ও বিএনপি।’

তিনি বলেন, খুবই সুপরিকল্পিতভাবে এই হামলাগুলো চালানো হচ্ছে। হেফাজতের ব্যানারে এখানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মীরা জড়িত রয়েছে। আমরা গোয়েন্দা তথ্যে জানতে পেরেছি। সব ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা হচ্ছে। দোষীদের কাউকেও ছাড়া হবেনা।

সিদ্ধিরগঞ্জ রণক্ষেত্র

আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান,  সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজত ইসলাম নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ হয় দুইজন। চারটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে হরতালপালনকারীরা। বেলা ১২ টার দিকে শিমরাইল মোড়, মৌচাক ও মাদানীনগর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ সাংবাদিকসহ আহত হয় অন্তত ২০ জন।

পূর্বঘোষিত হরতাল পালন করতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার কওমী মাদরাসার হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক গতকাল রোববার ফজরের নামাজের পর ভোর ৬ টা থেকে সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয়। টায়ার ও কাঠের স্তূপ করে আগুন ধরিয়ে দেয় মহাসড়কে কমপক্ষে ৩০ টি স্পটে। চলতে দেয়নি কোনো যানবাহন। যানবাহনহীন ফাঁকা সড়কে লাঠি হাতে নিয়ে বিভিন্ন  স্লোগান দেয় হরতাল পালনকারীরা। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল। চরম ভোগান্তিতে পড়ে হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ।

সকাল ৯ টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলমের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্য হারতাল পালনকারীদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তারা কর্ণপাত করেননি; বরং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মুফতি বশির উল্লাহ প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করব। বাধা দিলে ভয়াবহ পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।

বেলা ১২ টার দিকে পুলিশ কঠোর হয়। হেফাজত নেতাকর্মীদের সরিয়ে মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়। এসময় হরতালকারীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ প্রথমে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এতে হেফাজতকর্মীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা মাদানীনগর কওমী মাদরাসার সামনে মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস, একটি ট্রাক, দুইটি কাভার্ডভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ছবি তুলতে গেলে অনেক গণমাধ্যম কর্মীদের মারধর, ক্যামেরা ভাংচুর করে হরতালকারীরা।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এসময় শিমরাইল মোড়ে ডাক্তার শফিক ও মাদানীনগর এলাকায় এক বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়। তার পরিচয় জানা যায়নি।

 হাটহাজারির ডাকবাংলোয় আগুন :

হাটহাজারিতে সরকারি ডাকবাংলোতে আগুন দিয়েছে হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীরা। এসময় বাংলোর ভেতরে থাকা দুটি মোটরসাইকেলও জ্বালিয়ে দেয় তারা। হাটহাজারী থানার তদন্ত ওসি রাজিব শর্মা বলেন, বেশ কিছু নেতাকর্মী  বিক্ষুব্ধ হয়ে ডাকবাংলোয় আগুন ধরিয়ে দেন। এতে নিচ তলার স্টোররুমে থাকা দুটি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়।

হবিগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের আজমরীগঞ্জে হেফাজত কর্মীদের হামলায় ওসিসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের দুই এসআইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের দুটি মোটর সাইকেলসহ ৩টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।

আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. নুরুল ইসলাম জানান, রবিবার দুপুরে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার নোয়াগর এলাকায় হেফাজত কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হেফাজত কর্মীরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। এসময় থানার ওসি নুরুল ইসলামসহ ৫ পুলিশ আহত হয়ে।

কটিয়াদীতে সংঘর্ষ

কটিয়াদী  প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় গতকাল রোববার সকালে হেফাজত ইসলামীর কর্মীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। উপজেলার ভোগপাড়া নামক এলাকায় হরতালের সমর্থনে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা লাঠি ও ইটের টুকরা নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ানো বিআরটিসির বাসে ও উপজেলা অফিসে হামলার উদ্দেশে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হয় এবং রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে  হেফাজত কর্মী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পল্টা ধাওয়া হয়, এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এতে কটিয়াদী মডেল থানার ওসি শাহদাত হোসেনসহ ১০ পুলিশ আহত হয়। পুলিশ হেফাজত কর্মীদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অংগ সংগঠনের কর্মীরাও অংশ নেয়।

মুন্সীগঞ্জে  সংঘর্ষে আহত শতাধিক, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আওয়ামী লীগ পুলিশ ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। এতে সিরাজদিখান থানার ওসিসহ ২ পুলিশ এবং উভয়পক্ষের শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার দুপুর একটার দিকে উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের শুলপুর-নিমতলা সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

এঘটনায় হেফাজত নেতা মধুপুর পিরসাহেব আব্দুল হামিদ, মাওলা বসির আহম্মেদ, সিরাজদিখান থানার ওসি এস এম জালাল উদ্দিন, থানার উপ-পরিদর্শক সেকান্দর আলীসহ শতাধিক আহত হয়। আহতরা সিরাজদিখান ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন জানান, সিরাজদিখান থানার ওসির মাথা ফেটে গেছে। আরো কয়েকজন আহত হয়েছে পুলিশ সদস্য। বিস্তারিত জেনে বলা যাবে বলে জানান তিনি।

বিশ্বনাথে  সংঘর্ষ

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি জানান, সিলেটের বিশ্বনাথে হরতালের জের ধরে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল ১০ টা থেকে  সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলার বিশ্বনাথ-লামাকাজি রোডের পিছের মুখ নামক স্থানে বৃহত্তর আমতৈল ও ধলিপাড়া গ্রামের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানার পুলিশের ওসি, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকাজুড়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমানে পুলিশের হস্তক্ষেপে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও এলাকাজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজশাহীতে বাসে আগুন

রাজশাহী মহানগরীর ট্রাক টার্মিনালে রাখা দুটি বিআরটিসি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মহানগরীর আমচত্বর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এদিকে বেলা ১১টা থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থা নেয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে সেখান থেকে হরতালবিরোধী মিছিল বের করা হয়। মিছিলে নেতৃত্বে দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। মিছিলটি নগরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads