• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
নাশকতার মামলায় নাম নেই হেফাজত নেতাদের

ফাইল ছবি

জাতীয়

নাশকতার মামলায় নাম নেই হেফাজত নেতাদের

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় রাজধানীতে তিনটি মামলা হয়েছে। তবে এসব মামলায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কোনো নেতার নাম নেই। 

মামলায় ঘটনার বর্ণনা থাকলেও সব আসামি অজ্ঞাত। আর হাটহাজারীতে সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলাই হয়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনা তদন্ত করে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদেরই আসামি করা হবে। বর্তমানে পর্যালোচনা চলছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। হেফাজতের আড়ালে জামায়াত-বিএনপি এই হামলা করেছে বলেও দাবি করেছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা।

ঢাকায় তিন মামলা

ঢাকায় হেফাজতের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকাল পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৫ মার্চ মতিঝিল থানায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় অবশ্য ভিপি নুরকে আসামি করা হয়নি। মামলায় হেফাজতের কোনো নেতাকেও আসামি করা হয়নি।

এছাড়া যাত্রাবাড়ী থানায় গত শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলাতেও তিন চার হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হলেও সেখানেও হেফাজতের নাম নেই। তবে এই থানায় চারজন হেফাজত কর্মী গ্রেপ্তার আছে বলে জানিয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবারের ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলেছে।

পল্টন থানায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সেখানেও পাঁচ/ছয় হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তবে হেফাজতের কারো নাম নেই। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম জানান, ‘সাম্প্রতিক সময়ের নাশকতার ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো থানা পুলিশ ও ডিবি তদন্ত করছে। যারা অনলাইনে উসকানি দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল অ্যাক্টেও মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

অতীতে দায়ের করা হেফাজতের মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলাগুলোর তদন্ত অনেক অগ্রসর হয়েছে। মামলায় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ছিল, সেগুলো প্রমাণের অপেক্ষায় হয়তো এতদিন মুলতবি ছিল। তবে সেগুলো আমরা শেষ করে এনেছি। শিগগিরই হয়তো একটি পর্যায়ে আসবে।’

হাটহাজারীতে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজনের মৃত্যু হয়। তবে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশীদুল হক জানান, ওই ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঁচ মামলা

গত ২৬ মার্চ বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে হামলা ভাঙচুর, রেলস্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও মৎস্য ভবনে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় অজ্ঞাত প্রায় পাঁচ/সাত হাজার জনকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় পাঁচটি মামলা করেছে। এ ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে গত রবিবার হরতালের সময় তাণ্ডবের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।

এদিকে, গত সোমবার ১১টার দিকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, এসব ঘটনা তদন্ত করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছয় মামলা

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হেফাজতের ডাকা হরতালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক, সানারপাড় ও শিমরাইল এলাকার মহাসড়কে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় পৃথক পাঁচটি মামলা হয়েছে। তবে মামলায় হেফাজতের কাউকে আসামি করা হয়নি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, হরতালে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৭টি গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, হেফাজতের নামে এসব হামলা জামায়াত ও বিএনপি করেছে।’

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, হরতাল সমর্থকরা মোট আঠারোটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। ছয়টি কাভার্ডভ্যান, নয়টি বড় ট্রাক, একটা বিআরটিসির বাস ও দুইটি মাইক্রোবাস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শর্টগানের রাবার বুলেট ও চাইনিজ রাইফেলের ৪ হাজার গুলি এবং ১৫৫ রাউন্ড টিয়ারসেল ছোঁড়া হয়েছে।

পুলিশের পাঁচ মামলায় ১২৫ থেকে ১৩০ জনের নাম উল্লেখ আর দুই হাজার থেকে আড়াইহাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। র্যাবের মামলায় শুধু ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ছয় মামলায় আসামির সংখ্যা ২ হাজার ৬২৫ থেকে ৩ হাজার ১৫০ জন।

পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, হরতালে সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শর্টগানের রাবার বুলেট ও চায়নিজ রাইফেলের ৪ হাজার রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। এছাড়া পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করতে ১৫৫ রাউন্ড টিয়ারসেলও নিক্ষেপ করা হয়।

গোলাপগঞ্জে যুবদল-পুলিশ সংঘর্ষ, মামলায় আসামি ৯০

সিলেট প্রতিনিধি জানান, সিলেটের গোলাপগঞ্জে যুবদল-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ৩২ জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া আরও ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গত সোমবার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে ৩২ এ মামলা দায়ের করে। মামলা নং (নং-৩২/২৯-০৩-২০২১ইং)। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হারুনূর  রশীদ চৌধুরী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ-সংসদ সদস্য  মোকতাদির

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, হেফাজতের তাণ্ডব ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রশাসনের নির্লিপ্ততাকে দায়ী করে ঘটনার সময় প্রশাসন ও পুলিশের ভূূূমিকা নিষ্ক্রীয় ছিল বলে অভিযোগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।

গত সোমবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। এসময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাদের সাথে ছিলেন।

মোকতাদির চৌধুরী হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি জানান। এ ছাড়া তিনি নিষ্ক্রীয়তার অভিযোগ এনে জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারে কাছে দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, যেহেতু হরতাল হেফাজত ডেকেছে এসব তাণ্ডবের দায় দায়িত্ব হেফাজতকে নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিয়োদ্ধা আল-মামুন সরকার বলেন, দিনভর হেফাজতের তাণ্ডবে বিক্ষুব্ধরা টার্গেট করে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তারা আমার বাড়ি, অফিস ও আমার শ্বশুরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রাণের ভয়ে পরিবারসহ নিরাপদ জায়গায় থাকতে হয়েছে। আমার জীবনের অর্জন করা সব স্মৃতি তারা পুড়ে দিয়েছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বারবার অবহিত করলেও তারা আমাদের কোনো সাহায্য করেনি।

বিশ্বনাথে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের মামলা

বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, সিলেটের বিশ্বনাথে পিকেটিংয়ের জের ধরে মসজিদে মাইকিং করে উপজেলার আমতৈল ও ধলিপাড়া গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) উভয়পক্ষের ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় অ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেন থানার এসআই দিদারুল আলম, (মামলা নং-৩৫)। মঙ্গলবার ওই মামলায় আটককৃত ৫ জনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। ঘটনার দিন (২৮ মার্চ) ঘটনাস্থলে থেকে ওই ৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন সোমবার তাদেরকে ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে পাঠানো হয়।

রূপগঞ্জে সন্ত্রাসবিরোধী মামলা

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান,  নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় ৩০ জনকে এজাহার নামীয় ও অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। এ মামলায় বিএনপির সহযোগী সংগঠনের ৪ নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে রোববার সন্ধ্যায় ভুলতা সাওঘাট এলাকায় একটি ট্রাক ভাংচুরের সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads