• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯
কেন্দ্রে থাকবে আইসোলেশন ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা

কেন্দ্রে থাকবে আইসোলেশন ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২১

কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ সময়েই আগামী ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমবিবিএস প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষা। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো তাই এবার প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে অক্সিজেন সিলিন্ডার সুবিধাসহ আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থাপনা। শিক্ষার্থীদের মাঝে যদি কেউ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে থাকে বা সংক্রমণের উপসর্গযুক্ত থাকে তবে তারা যেন আইসোলেশন কক্ষে বসে পরীক্ষা দিতে পারে তাই এমন পদক্ষেপ।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এবার সব পরীক্ষার্থীকে মাস্ক পরে আসতে হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রে পরীক্ষার সময় মাস্ক পরে থাকতে হবে সবাইকে। ক্ষেত্র বিশেষে যদি কেউ ভুলবশত মাস্ক না পরে আসেন তবে তাদের কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হতে পারে। শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্যই নয়, তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্যও পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। আর এক্ষেত্রে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে যেন অভিভাবকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবস্থান করতে পারেন ও তাদের বসার ব্যবস্থাও করবেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর অবস্থাতে আমরা নেই। আর সেই হিসেবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সব কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে। পরীক্ষার দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন সুষ্ঠুভাবে সবকিছু সম্পন্ন করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আশঙ্কা করে থাকেন যে তার মাঝে কোভিড-১৯ উপসর্গ আছে অথবা কারো মাঝে সংক্রমণ থাকে, তবে আমরা তাদের পরীক্ষা আলাদাভাবে বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নেব। এক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো প্রতিটি কেন্দ্রে থাকছে আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থা। তাপমাত্রা পরিমাপ করে সবাইকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। আমরা আশা করছি সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে এবং সবাই যার যার প্রস্তুতি নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে পারবে।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম আহসান হাবিব বলেন, ‘পরীক্ষা পেছানোর আসলে আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। আমরা যখন বৈঠক শুরু করি তখন সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতি ছিল না; কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়েছে। এমন অবস্থায়ও এলে পরীক্ষা পেছানো সম্ভব না। কারণ প্রশ্ন ছাপানো থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে যেখানে সাংবাদিকসহ অন্যরা তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে সবার সঙ্গে কথা বলেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে কিছুটা সময় বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে মেডিকেলের বিভিন্ন পরীক্ষা কিন্তু অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় এই পরীক্ষা গ্রহণের তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে করছি।’ সংক্রমণের শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে-কোনো সময় যে কারো মাঝে তো সংক্রমণের শঙ্কা থাকে। আর তাই এবার প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে আলাদা আইসোলেশন কক্ষ। পরীক্ষা চলাকালে যদি কারো শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় বা কারো মাঝে কোভিড-১৯ উপসর্গ থাকে তবে তাকে সেখানেই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের ও বাইরে অপেক্ষমাণ অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এবার যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন তাদের অবশ্যই মাস্ক পরে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে হবে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার পুরোটা সময়েই মাস্ক পরিহিত থাকতে হবে। যদি কেউ মাস্ক না পরে থাকে বা ভুলে না এনে থাকে তবে কিছুক্ষেত্রে মাস্ক সরবরাহ করা হতে পারে। সেটি অবশ্য সীমিত সংখ্যক আকারে। এ ছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশের সময় যেন পরীক্ষার্থীদের তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায় সেজন্য কেন্দ্রগুলোতে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থাও রাখা হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. মোশতাক আহমেদ বলেন, ‘সংক্রমণ সেখানেই বৃদ্ধি পেতে পারে বা ছড়াতে পারে যেখানে বদ্ধ স্থানে অনেক মানুষ একে অপরের সংস্পর্শে আসবে। কিন্তু এবার যেভাবে পরীক্ষা নেওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি বলা হয়েছে তেমন করা গেলে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা থাকবে না। এক্ষেত্রে তিন ফিট দূরত্ব বজায় রেখে এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে জানালা খোলা রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করা যায় তবে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কমে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা হলে সবাই যদি মাস্ক পরে থাকে তবে অন্তত সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াবে না।’

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু যদি মেডিকেল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়া হয় তবে জাতির মেধাবী পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এসব বিবেচনায় রেখে ২ এপ্রিলই দেশে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে গ্রহণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীরা ৩ ফিট দূরত্ব রেখে বসবে। পরীক্ষার্থীদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সেখানে স্যানিটাইজার থাকবে। ভেন্যুতে অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অভিভাবকরা যেন ভালো অবস্থায় থাকতে পারেন, সে বিষয়গুলোও আমরা নজরে এনেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ বছরের ভর্তি পরীক্ষাটি স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রাখতে সরকারের পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা শাখা, শিক্ষা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব শাখা মিলে টিমওয়ার্ক ও কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে কাজ করছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের আশপাশে এলাকার স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখবে। পরীক্ষার আগে সামাজিকমাধ্যমগুলোতে যেন কোনো গুজব ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিশেষ শাখাগুলো কাজ করবে।’ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখেই এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জানা যায়, ২ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এবারের মেডিকেল প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর মোট ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্র সংখ্যা ১৯টি এবং ভেন্যু সংখ্যা ৫৫টি করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে ফটোকপি মেশিনের দোকান বন্ধ রাখা, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখাসহ অন্যান্য তৎপরতার দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads