• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪২৯
রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৫ ভাগ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৫ ভাগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২১

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর অল্প-বিস্তর প্রভাব দেশের চলমান প্রায় সব প্রকল্পেই পড়েছে। প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যদিও দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে। এরই মধ্যে প্রথম ইউনিটের যন্ত্রাংশ চলে এসেছে; পথে রয়েছে দ্বিতীয় ইউনিটের যন্ত্রাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৩৫ ভাগ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা। আর কাজটি শেষ হলে দেশের ১৩টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৬১০ কিলোমিটার গ্রিডলাইন নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুরে এক হাজার ৬২ একর জমির ওপরে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ নির্মাণ হচ্ছে। মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দুটি ইউনিট ভাগ করে নির্মিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম ইউনিটের কাজ যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি শেষ করা যাবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের মোট ৩৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আর তাতে এ পর্যন্ত কাজে ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৪১ কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

পাবনার রূপপুরে এ প্রকল্পের পারমাণবিক চুল্লির জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বরে কংক্রিটের মূল স্থাপনা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে দ্বিতীয় চুল্লির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সরকার আশা করছে, ২০২৩ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার প্রথম ইউনিট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব। আর ২০২৪ সালে চালুর টার্গেট সমান উৎপাদন ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটিও। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা গেলেও একই সময়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য গ্রিডলাইনের প্রস্তুতি শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালের মধ্যে যদি গ্রিডলাইনের নির্মাণ কাজ শেষ না হয়, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পরও রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হবে না।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গ্রিডলাইন ও সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর একটা বড় অংশ বাস্তবায়িত হচ্ছে ভারতের অর্থায়নে। আর তাদের ঋণে ধীরগতির কারণেই যথাসময়ে নির্মাণ সম্পাদন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন এবং রাশিয়ার সরকারি কোম্পানি রোসাটমের মধ্যে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা) চুক্তি হয়। রুশ সরকারের সহায়তায় নির্মিতব্য ২৪শ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে থাকছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দুটি ইউনিট। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা। তার এক বছর পর দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে এমনটাই রয়েছে পরিকল্পনায়।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রুপে সঞ্চালনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মানে বেশকিছু প্রকল্প নেয় সরকার, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করে থাকে।

সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের অন্তত ১৩ জেলায় পৌঁছে দিতে ৬১০ কিলোমিটার গ্রিডলাইন নির্মাণ বাবদ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা এবং বাকি টাকার সংস্থান হবে ঋণের মাধ্যমে। বৈদেশিক ঋণ হিসেবে ৮ হাজার ২১৯ কোটি দেবে ভারত। ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় এ ঋণ দিতে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে।

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরু হলে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ৩১ মে’র পর সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেওয়ার পাশাপাশি যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সেই মহামারী করোনার ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বিশেষ করা সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেলের মতো কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজের গতি থেমে যায়। কিন্তু এর মধ্যেও রূপপুর কাজ এগিয়ে চলেছে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন রকম পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। কাজে যোগ দেওয়ার আগে প্রতিদিন কর্মীদের তাপমাত্রা মাপা হতো। এদের মধ্যে কারো তাপমাত্রা বেশি থাকলে সাত দিনের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হতো তাকে। এরপর সুস্থ হলে আবার কাজে ফেরানো হতো। এবার করোনার দ্বিতীয় ধাপেও সে পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, আমরা কাজ করছি। কীভাবে আমাদের গ্রিডটাকে নিরবচ্ছিন্ন করা যায় সেজন্য নতুন নতুন সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন, সাব স্টেশন এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ডিস্ট্রিবিউশনে যাচ্ছি। গ্রাহকদের ভূতুড়ে বিল থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা স্মার্ট মিটার লাগাচ্ছি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যতম। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে আট হাজারেরও বেশি জনবল নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। করোনার সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। আশা করি, ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রথম ইউনিট ওপেন করা যাবে। লক্ষ্য রয়েছে এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট চালু করার।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads