• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০২১

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ১৯টি কেন্দ্রে ৫৫টি ভেন্যুর ৭৫টি হলে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ভর্তি পরীক্ষায় স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি থাকলেও শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করেই কেন্দ্রে ঢুকেছেন; বাইরে ভিড় করেন অভিভাবকরাও। তবে পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কড়াকড়ি ছিল; যদিও কেন্দ্রের বাইরে তা মানা হয়নি। এতে আলোচনা-সমালোচনা মধ্যেই শেষ হয়েছে এবারের ভর্তি পরীক্ষা।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী এদিন সকাল ১০টায় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। এক ঘণ্টাব্যাপী এ পরীক্ষা আগের নিয়মানুযায়ী হয়েছে। সারাদেশে একযোগে সকাল ১০টায় শুরু হয় পরীক্ষা।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে সকাল ৭টা থেকেই প্রতি কেন্দ্রে ভিড় জমাতে থাকেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ফলে সকাল ৮টা দিকে রাজধানীর পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে পরিণত হয় জনসমুদ্র। প্রতিটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রে প্রবেশের কড়াকড়ি থাকলেও বাইরে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি।

এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের জন্য পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়। পরিদর্শক টিম পরীক্ষার দিন কেন্দ্র পরিদর্শন করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে ভিড় করেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরু হওয়ার দুই ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন পরীক্ষার্থীরা। কেন্দ্রে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা পরিমাপ ও হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হয়। কিন্তু বাইরে পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরা মানেননি নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি।

রাজধানীর উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষারত অভিভাবক নুরুল আজম বলেন, ‘এখানে নিরাপত্তাকর্মী আছেন মাত্র পাঁচ থেকে ছয় জন। তাদের পক্ষে এত ভিড় সামলানো সম্ভব না। তা ছাড়া, অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব আছে। ঢোকার সময় গেটের সামনে অভিভাবকরা জটলা বেঁধে দাঁড়িয়েছিলেন। বের হওয়ার সময়ও তাই। শিক্ষার্থীদের যে লাইন তার পাশেই ধাক্কাধাক্কি করছেন অভিভাবকরা।’

স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষা শেষ হয়েছে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী মাস্ক পরে কেন্দ্রে এসেছেন। পরীক্ষা দিতে মাস্ক পরে আসা বাধ্যতামূলক ছিল। তবু যারা ভুল করে মাস্ক না পরে পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছেন তাদের মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন কেন্দ্রটিও দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো সার্বিক চেষ্টা করেছি। দেখেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া তো খুব কঠিন।’

জানা যায়, আগের নিয়মেই হয়েছে এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা। ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জিপিএর ১০০ নম্বরসহ মোট ২০০ নম্বরের ভিত্তিতে জাতীয় মেধা তালিকা করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে মেডিকেল কলেজগুলোতে।

রাজশাহী : স্বাস্ব্যবিধি মানার কথা বলা হলেও কেন্দ্রের বাইরে গাদাগাদি আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রের বাইরে কোনো রকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। তা ছাড়া কোনো কেন্দ্রের ফটকে শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র বা থার্মাল স্ক্যানার দেখা যায়নি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তবে কেন্দ্রের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজটির অধ্যক্ষ নওশের আলী। তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, টিটি কলেজ, নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ, মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহী কলেজ, মহিলা কলেজ ও সিটি কলেজ- সাতটি কেন্দ্রে ১০ হাজার ২৮৩ জন পরীক্ষার্থী ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। আমরা কেন্দ্রের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেছি। কেন্দ্রের বাইরে কী হয়েছে তা বলতে পারব না। সেটি মানুষের সচেতনতার বিষয়। অনেক মানুষ গাদাগাদি করে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হয়নি।’

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে চারটি কেন্দ্রে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। কেন্দ্রগুলোর সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

কলেজটির অধ্যক্ষ চিত্ররঞ্জন দেবনাথ বলেন, এবার পরীক্ষায় ময়মনসিংহে চারটি কেন্দ্রে ১১ হাজার ৫৭১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তিনি বলেন, সকল স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেই তাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী কেন্দ্রে ঢোকার আগে তাপমাত্রা মাপা, হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছে কি না তা তাদের জানার বিষয় না বলে তিনি জানান।

কোতোয়ালি থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, আনন্দ মোহন কলেজ ও মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ভর্তিপরীক্ষা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই পুলিশ সব জায়গায় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিল। কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সঙ্গে হাজার হাজার অভিভাবক আসায় সবকিছু ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সবাইকে অনুরোধ করেও দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়নি। সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরু হয়ে ১১টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সকাল আটটা থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কেন্দ্রের সামনে ভিড় জমান।’

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ৭টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চমেক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের দামপাড়া ও জিইসি ক্যাম্পাস, কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন ১০ হাজার ৯০৫ জন। 

এই ভর্তি পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রামে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। গত বছর পরীক্ষার্থী ছিল ৬ হাজার ২১১ জন। সারাদেশে এ বছর ১ লাখ ২২ হাজার ৭৬১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করেন। আসনপ্রতি ২৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রতি বছর বিদেশি সহ ২৩০ জন শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি) কোর্সে ভর্তি করা হয়। বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) কোর্সে ভর্তি করা হয় ৫০ জন। 

এ ছাড়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্মি মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম (এএমসিসি)-এ মেডিকেল ক্যাডেট (এএফএমসি) এবং আর্মি মেডিক্যাল কর্পস ক্যাডেট (এএমসি) হিসেবে ভর্তি করা হয় ১০০ জন শিক্ষার্থী। বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) এর চিকিৎসা অনুষদের অধীনে প্রতি ব্যাচে ৭৫ জন দেশি ও ২৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির নিয়ম রয়েছে। চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজে ৯০ জন, আগ্রাবাদের চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজে ১০০ জন, নাসিরাবাদ এলাকার সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজে ৬৫ জন, চন্দ্রনগর এলাকার মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন, চান্দগাঁও শমসের পাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী মেডিক্যাল কলেজে (আইআইএমসিএইচ)৫০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এসব মেডিক্যাল কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।

সিলেট : নগরীর প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার্থীদের হলে প্রবেশ করানো হলেও কেন্দ্রের বাইরে দেখা গেছে এক ভিন্ন পরিবেশ। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকেন। মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। উপেক্ষিত থাকে স্বাস্থ্যবিধিও।

উল্লেখ্য, দেশের ৪৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা চার হাজার ৩৫০টি। এ ছাড়া, আরো ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আরও আট হাজার ৩৪০ জন ভর্তি হতে পারবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads