• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
সংকটে পড়ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

সংকটে পড়ছে জনশক্তি রপ্তানি খাত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ এপ্রিল ২০২১

বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সংকট। কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নতুন করে আরো নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যকে রক্ষা করতে বাংলাদেশসহ চারটি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার। নতুন ভ্যারিয়েন্টের করোনা বিস্তার রোধে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে দেশটি। আপাতত এই চার দেশকে লাল তালিকায় রেখেছে তারা। এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের অন্যান্য শ্রমবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ‘বায়রা’র সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখা এই খাতটি বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। সৌদি আরবে প্রায় ৫০ হাজার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ৪০ হাজার ভিসা এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশেও বেশকিছু ভিসা প্রক্রিয়াধীন আছে। এরমধ্যে অধিকাংশ ভিসা ও বিমানভাড়া বাবদ সকল খরচ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু নতুন করে করোনা পরিস্থিতি অবনতির কারণে আমরা চরম দুশ্চিন্তায় আছি। করোনার কারণে এসব দেশে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা এবং বিদেশগামী কর্মীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বো। কারণ এসব ভিসা বাবদ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ অনেক দেশই করোনা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। আমরাও করোনা প্রতিরোধে তাদের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে এক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারি। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মতে, করোনার পরিস্থিতির কারণে মালয়েশিয়াসহ গত এক বছরে বন্ধ থাকা অন্যান্য শ্রমবাজারগুলো খুলে দেওয়ার জন্য জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই ফের নতুন ভেরিয়েন্টের করোনা বৈদেশিক শ্রমবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ফেলে দিল। এমনিতেই করোনা মহামারীর কারণে গত এক বছরে বৈদেশিক শ্রমবাজার থেকে ছিটকে পড়েছে কমপক্ষে ১২ লাখ বাংলাদেশি, যাদের অন্তত ৮০ ভাগেরই বিকল্প আয়ের কোনো উৎস নেই। দেশের অর্থনীতির জন্য এটা একটা অশনি সংকেত বলে মনে করছেন তারা। তারা জানান, এমনিতেই করোনা সংকট শুরুর সময় ছুটিতে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় দুই লাখ প্রবাসী কর্মী। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি অন্তত আরো এক লাখ। বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন আরো প্রায় দুই লাখ কর্মী। জীবিকার পথ বন্ধ হওয়ায় এই পাঁচ লাখ মানুষ এখন দিশেহারা।

ব্রাক-এর অভিবাসন বিভাগ বলছে, করোনার কারণে প্রবাসীদের পরিবারের কথা ধরলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আরো বেশি হবে। ফেরত আসা ৮৭ ভাগ কর্মীর আয়ের বিকল্প কোনো উৎস নেই। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। অভিবাসন কর্মীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা আইওএম বলছে, বিদেশফেরত ৭০ শতাংশ কর্মীই এখন জীবিকা সংকটে। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি এনজিও সংস্থা রামরু-র জরিপ বলছে, বিদেশে চাকরি হারানোয় করোনার মধ্যে ৬১ শতাংশ পরিবারে রেমিটেন্স আসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে বিদেশ থেকে ফিরে আসা কর্মীদের কর্মসংস্থানে সরকার ৭০০ কোটি টাকার ঋণ তহবিল গঠন করলেও শর্তের বেড়াজালে ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেশিরভাগ কর্মী। তবে এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক। করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত শ্রমিক ও স্বল্প আয়ের শহরের যুব উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ২০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সমান। শিগগিরই এ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হবে বলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস জানায়।

বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিবিদ ও প্রকল্পের টিম লিডার সৈয়দ ওমর আহমেদ জানান, এই প্রকল্পের আওতায় তথ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও সংহতকরণ হবে যাতে বিদেশফেরত এবং বিদেশগামী শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা সেবা দেওয়া যায়। তবে কোভিডের কারণে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেমবন জানান, অনানুষ্ঠানিক এবং জনশক্তি রপ্তানিকারক খাত গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্যবিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে এই দুই খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিএমইটির মহাপরিচালক শামসুল আলম বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারীর কারণে নতুন করে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সর ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads