• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
মহামারীতে ঋণের বোঝা বাড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

মহামারীতে ঋণের বোঝা বাড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশের প্রান্তিক পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বাড়ছে। খাদ্য ও খাদ্যবর্হিভূত ব্যয় কমানো, সঞ্চয় ভেঙ্গে চলার মতো পদক্ষেপের পরও ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার দেনার মধ্যে পড়েছে বলে অতিমারীর প্রভাব নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে। আগামী বাজেটে এজন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ফেব্রুয়ারি মাসে এ জরিপ পরিচালনা করে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘কীভাবে অতিমারীকে মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী : একটি খানা জরিপের ফলাফল’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ফলাফল উপস্থাপন করেন জরিপের প্রধান গবেষক বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ইশতিয়াক বারী। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য, আর্থিক ও জীবনধারণের ওপর প্রভাব নিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

সারা দেশের এক হাজার ৬০০ খানায় সরাসরি পরিচালিত এ জরিপে কোভিড-১৯ বিষয়ক বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাবও দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। এদের মধ্যে ৮২ শতাংশ পরিবার সরকারের বিনামূল্যের ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। অন্যদিকে ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ করোনাভাইরাস নিয়ে খুব বেশি ভোগেননি বলে জরিপের উপাত্ত তুলে ধরেন গবেষক ইশতিয়াক।

জরিপে দেশের চর, হাওর ও উপকূলীয় এলাকার ১০০ করে ও বস্তির ৪০০ পরিববার এবং ৩০০ আদিবাসী পরিবারের কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

জরিপ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার সরকারি আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙ্গেছে বলে উল্লেখ করে।

অন্যদিকে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার আর্থিক অনটনে পড়ে গবাদিপশু বিক্রি করেছে। ২ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবার জমি বা স্বর্ণ বন্দক দিয়ে অর্থের সংস্থান করেছে।

এই গবেষণার ওপর মূল্যায়ন করতে গিয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অতিমারী চলাকালীন সময়ে প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা যথেষ্ট নয়। এই সহযোগিতা আরো বহুগুণ বাড়ানো উচিত।’

তিনি বলেন, ‘এই অতিমারী সংকটাপন্ন মানুষকে আরো বিপন্ন করেছে। তাদের এই সমস্যা বহুমাত্রিক। এক দিকে তাদের আয় কমে গেছে, খাদ্য সংকটে পড়েছে, আবার ঋণগ্রস্ত হচ্ছে।’

মহামারী মোকাবিলায় আগামী বাজেটে ‘সংহতি তহবিল’ গঠনের পরামর্শ দিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই তহবিল থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ নিশ্চিত করা গেলে প্রান্তিক মানুষের সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির আরেক সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিকুজর রহমান সংহতি তহবিল গঠনকে যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে এটি সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনার কাঠামো গঠনের কথা বলেন। তিনি আগামী বাজেটে এ জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে জরিপের প্রধান গবেষক ইশতিয়াক বলেন, জরিপকালে এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সময়কার কষ্টের মধ্যে টিকে থাকতে প্রথমে খাদ্য বাছাইয়ে সামঞ্জস্য আনার অর্থাৎ সুষম খাবার বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর খাদ্যবহির্ভূত পণ্য কেনা বাদ দিয়েছেন। এরপরও ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার বলেছেন তারা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘মহামারীর মধ্যে তারা চলমান আয় দিয়ে চলতে পারছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে-উপকূলীয় এলাকার ৮৬ শতাংশ, বস্তিবাসীর ৮৭ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি (এমএসএমই) উদ্যোক্তাদের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষ তাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।’

গবেষণার উপাত্ত তুলে ধরে তিনি আরো জানান, অতিমারীর সময়কালে পরিবারগুলোর মধ্যে ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ খাদ্যের জন্য ব্যয় কমিয়েছে। খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় কমিয়েছেন ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরে শিক্ষক ইশতিয়াক বলেন, এ সময়ে চরাঞ্চলের ২১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যান্য এলাকায়ও ১৪ থেকে ১৮ শতাংশের আয় কমেছে। একই সময়ে এদের মধ্যে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ব্যয় কমিয়েছেন।

‘জরিপের তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ মানুষের সঞ্চয় কমে গেছে’ জানান তিনি।

জরিপের তথ্য প্রকাশের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানসহ অতিথিরাজরিপের তথ্য প্রকাশের ভাচুর্য়াল অনুষ্ঠানে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানসহ অতিথিরাজরিপে ৭০ শতাংশ পরিবারের সদস্য জানিয়েছেন, তারা  কোভিড-১৯ টেস্টের প্রয়োজন অনুভব করেননি। ১২ দশমিক ৩ শতাংশ বলেছে আর্থিক অক্ষমতার কারণে তারা টেস্ট করাতে পারেননি।

আবার ২ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষকে চিকিৎসক পরামর্শ দিলেও তারা পরীক্ষা করাননি। এদের মধ্যে কোথায় যেতে হবে তা না জানা এবং সামাজিক নিপীড়নের ভয়ের কথাও উল্লেখ করেন তারা।

‘তবে এসব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরকার ফ্রি ভ্যাকসিন দিলে তা নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ৮২ শতাংশ মানুষ’ জানান এই গবেষক।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, মহামারীকালে ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ সরকারি সহায়তা নিয়েছেন। ১১ দশমিক ৯ শতাংশ পারিবার, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন ২১ দশমিক ৯ শতাংশ। আবার বিভিন্ন দান বা অনুদান নিয়েছেন ৮ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ।

মহামারীর প্রথমদিকে প্রতি ৭০ জনে একজন চাকরি হারিয়েছেন। পরে আবার প্রতি ৯১ জনের মধ্যে একজন চাকরি পেয়েছেন বলে জরিপের আরেক উপাত্তে দেখা গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads