• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট দিতে নারাজ ঢাকা ক্লাব

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

অনড় এনবিআর

ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট দিতে নারাজ ঢাকা ক্লাব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ এপ্রিল ২০২১

ভ্যাট গোয়েন্দাদের তদন্তে ঢাকা ক্লাবের বিরুদ্ধে সুদসহ মোট ১১৬ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ টাকার রাজস্ব আপত্তি উত্থাপন করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।  কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সমঝোতায় শেষ পর্যন্ত ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ টাকা নির্ধারিত হয়। কিন্তু সেই টাকা পরিশোধেও নানাভাবে গড়িমসি শুরু করে ক্লাবটি। বারবার নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও পাওনা পরিশোধ না করায় ক্লাবটির বিষয়ে এনবিআরের কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর টাকা পরিশোধে ইতিবাচক মনোভাব দেখায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে এনবিআর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ক্লাব কর্তৃপক্ষের কয়েক দফা মিটিংও হয়।  ক্লাব কমিটির মিটিং এবং হিসাবনিকাশ চূড়ান্ত করাসহ নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে ক্লাবটি। এত কিছুর পর শেষ পর্যন্ত ক্লাব কর্তৃপক্ষ ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা থেকে অব্যাহতি পেতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু তাদের এই আবেদন গ্রহণ করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গত ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে এনবিআরের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) সৈয়দ মু’মেন।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্লাব লিমিটেডের পক্ষ থেকে বকেয়া বা ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের টাকা থেকে অব্যাহতি চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে গত ২৯ মার্চ ঢাকা ক্লাবের সেই আবেদন নাকচ করে দেয় এনবিআর। বিষয়টি জানিয়ে ঢাকা ক্লাবকে একটি চিঠিও দিয়েছে রাজস্ব বোর্ড।

এনবিআরের মূসক আইন ও বিধি শাখার দ্বিতীয় সচিব কাজী রেজাউল হাসান সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত করে অভিজাত ক্লাবটির বিরুদ্ধে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ মেলে।

ভ্যাট গোয়েন্দা তদন্তে সুদসহ মোট ১১৬ কোটি ৮১ লাখ ৭২ হাজার ১২৪ টাকার রাজস্ব আপত্তি উত্থাপন করে প্রতিবেদন দেওয়া হলেও সমঝোতার মাধ্যমে ৩৩ কোটি ৭৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ টাকা নির্ধারিত হয়। দীর্ঘদিনের অনাদায়ী রাজস্ব আদায়ের অগ্রগতি জানতে সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যাট গোয়েন্দা থেকে তাগিদপত্র দেওয়া হয়।

 এ ব্যাপারে নিয়ম অনুযায়ী দাবিনামা চূড়ান্ত করে নোটিশ দিলেও রাজস্ব পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। বিভিন্ন সময়ে ১০ বার দাবিনামা জারি করলেও সময় আবেদনের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণের পথ বেছে নেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত পাঁচবার সময় চেয়ে আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত পাওনা পরিশোধ করেনি তারা। সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে পৃথক দুইটি দাবিনামা ইস্যু করলেও রাজস্ব পরিশোধে গড়িমসি করায় এ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে রাজস্ব বোর্ড।

ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার প্রমীলা সরকার বাংলাদেশের খবরকে গত ১ মার্চ জানিয়েছিলেন যে, ক্লাব কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে (আন-অফিসিয়ালি) তাদের এক সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে তারা টাকা পরিশোধ না করলে ক্লাবের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে। কিন্তু এরই মধ্যে কয়েক সপ্তাহ পার হলেও ক্লাবটির বিরুদ্ধে এখনো আইনি  ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এনবিআর।

এনবিআরের ঢাকা দক্ষিণ অফিস সূত্র বলছে, ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত মূসক বাবদ ক্লাবটির কাছে মোট পাওনা ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকা। যারমধ্যে সেবা বিক্রয় খাতে সুদসহ আদায়যোগ্য সম্পূরক শুল্ক এবং সুদসহ উৎসে মূসক বাবদ পাওনা সাত কোটি ১০ লাখ পাঁচ হাজার ২৫৮ টাকা, সি.এ ফার্মের অডিট রিপোর্টে বিভিন্ন সেবা ক্রয়ের বিপরীতে সুদসহ কর্তনযোগ্য ভ্যাট ৫২ লাখ ৫১ হাজার ২৪১ টাকা ও নিরীক্ষা মেয়াদে স্থান ও স্থাপনা ভাড়া গ্রহণ খাতে অপরিশোধিত মূসক বাবদ এক লাখ দুই হাজার ১০৪ টাকা পাওনা।

গত ২৫ জানুয়ারি অপরিশোধিত মূসক বাবদ পাওনা ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৭৩ টাকার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে সুদ ব্যতীত মোট সাত কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৮ টাকার সরকারি পাওনা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পরিশোধ করতে প্রতিষ্ঠানটিকে বলা হয়। অন্যথায়, প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব অপরিচালনযোগ্য করাসহ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু কোনো সতর্ক বার্তাই আমলে নিচ্ছেনা ঢাকা ক্লাব কর্তৃপক্ষ। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads