• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
মার্কেট ও শপিংমলে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

মার্কেট ও শপিংমলে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ এপ্রিল ২০২১

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধি-নিষেধ কিংবা লকডাউনের পঞ্চম দিন গতকাল শুক্রবার শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে সব মার্কেটের দোকানপাট খোলার কথা থাকলেও তা মানেননি অনেকেই।

এদিন রাজধানীর একাধিক শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, প্রবেশপথে নিরাপত্তারক্ষীরা স্যাভলন মিশ্রিত পানি ছিটান আগতদের হাতে। দোকানগুলোতে ছিল না সামাজিক দূরত্ব। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক থাকলেও, সেটি সঠিক স্থানে ছিল না।

আবার কিছু কিছু শপিংমল ছিল ব্যতিক্রম। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির সুরক্ষা করতে দেখা যায়। অনেক মার্কেটে আগতদের ফ্রি মাস্ক বিতরণ করতেও দেখা যায়।

এদিকে শর্তসাপেক্ষে মার্কেট খোলার অনুমতি দেওয়ায় সরকারের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান অনেকে। দোকান মালিকরা বলছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানলে মার্কেট থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা কম।

গত ৫ এপ্রিল ৭ দিনব্যাপী লকডাউন ঘোষণার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় তারা স্লোগান দেন-‘স্বাস্থ্যবিধি মানব, দোকানপাট খুলব।’ এমন অবস্থায় গতকাল থেকে পাঁচ দিন কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শপিংমল খোলা রাখা যাবে বলে ঘোষণা দেয় সরকার।

স্বাস্থ্যবিধির সুরক্ষা না করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। তবে মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেট ও হাতেগোনা কয়েকটি ফ্যাশন হাউসে প্রবেশ করতে গেলে হাতে ছিটিয়ে দেওয়া হয় স্যাভলন মিশ্রিত পানি।

মিরপুর শাহ আলীর এক সিকিউরিটি গার্ড বলেন, ‘আমাদের অফিস থেকে এগুলোই দিতে বলছে। এর আগেও স্যাভলনের পানি দিয়েছি।’ মার্কেটের জুতার ব্যবসায়ী কামাল আহমেদ বলেন, ‘৫ দিন পর দোকান খুলেছি। আমরা মাস্ক ছাড়া কাউকে দোকানে ঢুকতে দিচ্ছি না।’ সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক কাস্টমার ঢুকে পড়ে। আমরা তাড়াতাড়ি বিদায় করার চেষ্টা করি।’

মিরপুর ২ নম্বরে বাচ্চাদের জামা-কাপড় বিক্রি করেন জুয়েল হাসান। তিনি বলেন, মার্কেটগুলোর সামনে গত ঈদের আগে এসব বেসিন ছিল। ঈদের পর ব্যবহার হয় না দেখে এইগুলো নিয়ে গেছে। এখন একটাও নেই।

এদিকে মিরপুর ১০ থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত ফুটপাতে ব্যবসায়ীরা বসেছেন। তবে মাস্ক ছাড়া কেউই আর কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ফুটপাতের দোকানদার শরিফ আহমেদ বলেন, ‘দোকান খুলছি ঠিক আছে, তবে বিক্রি তো হয় নাই। আমাদের তো দিনে এনে দিন খাওয়ার অবস্থা। একদিন বিক্রি না হলে ফ্যামিলি নিয়ে চলতে কষ্ট হয়।’

ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, মাস্ক পরা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই সমান অনাগ্রহ। এ জন্য তাদের কাছে আছে গরম লাগা, কথা বলতে না পরাসহ নানা অজুহাত। মিরপুর-২ নম্বরে এক ক্রেতাকে মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে, তিনি বলেন ‘মাস্ক পরি নাই তো কী হইছে?’

দোকান-মার্কেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি মানা হচ্ছে কি না তা তদারকি করতে দোকান মালিক সমিতি, পুলিশ কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট কারো উপস্থিতি চোখে পড়েনি। মিরপুর-২-এর জুতার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, দোকানের বাইরে রশি টানিয়ে দিয়েছি। বাইরে থেকে বেচাকেনা করছি। কাউকে দোকানের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি না। মাস্ক ছাড়া কারো কাছে পণ্য বিক্রি করছি না।’ তিনি বলেন, ‘যারা সামনে থেকে করোনা রোগী দেখেছে বা আত্মীয় স্বজনকে অসুস্থ হতে দেখেছে, একমাত্র তারাই জানে করোনা কতটা ভয়াবহ। ম্যাজিস্ট্রেট আসলে জরিমানা করলে অন্য ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালানো সম্ভব। প্রথম দিকেই যদি কার্যকর লকডাউন দিত, তাহলে পরিস্থিতি এমন হতো না।’

গাউছিয়া এবং মহানগর দক্ষিণ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান বাবু বলেন, লকডাউনের মধ্যেও মানবিক কারণে মার্কেট খুলে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানার অঙ্গীকার করেছি। তাই নিজে গেটে দাঁড়িয়ে থেকে যাদের মাস্ক নাই, তাদের মাস্ক দিচ্ছি। সব দোকান মালিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য নোটিশ দিয়েছি। আশা করছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা চালাতে পারব।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির ব্যবস্থাপক ফিরোজুল ইসলাম বলেন, আমরা মার্কেট কমিটির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য মাইকিং করছি, মাস্ক ছাড়া দোকানি বা ক্রেতা কাউকেই মার্কেটে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না, মার্কেটে জটলা বা ভিড় না করার জন্য বলা হয়েছে, প্রতিটি গেটে জীবানুনাশক ছিটানো হচ্ছে।

ইস্টার্ন মল্লিকা দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সরওয়ার উদ্দিন খান বলেন, হ্যান্ড সেনিটাইজার, গেটে জীবাণুনাশক ছিটানো, মাস্ক বিতরণ করছি। দোকানের শাটারের বাইরে কাউকে মালামাল না ঝোলানোর জন্য মাইকিং করছি।

বসুন্ধরা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, শপিংমলগুলোর কাছে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বসুন্ধরা সিটি রোল মডেল। অন্যান্য শপিংমলে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়টি অনুকরণ করতে পারে। তিনি বলেন, বসুন্ধরা সিটিতে মাস্ক ছাড়া ঘোরা অসম্ভব। সেইসঙ্গে প্রবেশের আগেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে শরীরের তাপমাত্রা মাপারও ব্যবস্থা। কারো শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকলে আমরা তাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি না।

তিনি জানান, সরকারি নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে বার বার মাইকিং করার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক একাধিক দল টহল দিচ্ছে। যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানেন, তাদের জন্য প্রতীকী শাস্তির ব্যবস্থাও রেখেছি আমরা।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দোকান বন্ধ করে দেওয়া হবে। দোকান মালিকদের উদ্দেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। ক্রেতা সাধারণকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে কেনাকাটা করার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, সামনে পহেলা বৈশাখ ও কিছুদিন পরেই ঈদ। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কারণে আমরা ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads