• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
কৌশলে হেফাজতকে সামাল দিতে চায় সরকার

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

কৌশলে হেফাজতকে সামাল দিতে চায় সরকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০২১

হেফাজতে ইসলামকে মোকাবিলায় অতীতের সমঝোতার পথ থেকে সরে এবার কৌশলী হয়েছে সরকার। দেখিয়েছে কঠোরতা। দলটিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে তাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ওপর ভর করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি হেফাজতের জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুরের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতনও করতে চায় সরকার। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজত ইস্যুতে কিছুটা সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। মাদরাসা শিক্ষার সনদের স্বীকৃতিসহ কওমি মাদরাসাকে নানা সুবিধাও দেওয়া হয়েছিল তখন। বলতে গেলে হেফাজতের সঙ্গে কিছুটা সখ্য গড়ে ওঠে সরকারের। সে পথে হেঁটে গত সাত বছর হেফাজতকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। তবে গত বছরের শেষ দিকে দেশের কয়েকটি স্থানে জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপনকে কেন্দ্র করে হেফাজত ফের সক্রিয় হয়। তখনো ধৈর্য দেখিয়ে ও কৌশলী হয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যায় সরকারকে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে হেফাজত তাণ্ডবের পর কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন। তাণ্ডবে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, বিলাসী জীবন, ব্যক্তিগত জীবনে অনৈতিক আচরণ ইত্যাদি ইস্যুতে হেফাজতের দায়িত্বশীলদের আসল চরিত্র উন্মোচিত হোক, এমনটাই চায় সরকারি দল। নারী কেলেঙ্কারির ঘটনার জের ধরে মামুনুল হকের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা দলটির নৈতিক দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করে সরকারি দলের নেতারা। এ ছাড়া হেফাজত সমর্থক রফিকুল ইসলাম মাদানীর মোবাইলে অশ্লীল ভিডিওচিত্র এবং নারীঘটিত ইস্যু বেরিয়ে আসায় হেফাজত নেতাদের সম্পর্কে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে নতুন বার্তা যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে। 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হেফাজতের আমির-মহাসচিবসহ ৫৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি পুনর্বিবেচনার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন হেফাজতের আন্দোলন দমানোর বড় কৌশল হিসেবে এবার এ দুটো বিষয়ও কাজ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, স্থানীয় জনগণের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী গন্ডগোল বাধিয়ে রাখার জন্য ভূমি অফিসের সব কাগজ পুড়িয়ে দিয়েছে হেফাজত। তারা আন্দোলনের নামে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা ইসলাম সমর্থন করে না। মামুনুল হকের নারী কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গে বলেন, তাদের চরিত্র আপনাতেই বেরিয়ে এসেছে। সরকারকে কিছু করতে হয়নি। তবে আমাদের কাজ হবে হেফাজতের নাশকতা ও কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো মানুষকে জানানো। তারা ধর্মকে কলুষিত করছে। ইসলামের নামে নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড যারা করে তারা ইসলামের ধারক-বাহক হতে পারে না। আমরা চাই দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ জানুক কাদের উসকানিতে তাদের শিশু-সন্তানরা কথিত জেহাদের নামে রাস্তায় নেমে অন্ধকার জীবনের দিকে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দিতে বেছে বেছে সরকারি স্থাপনার ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। এর পেছনে বিএনপি-জামায়াতের স্পষ্ট মদত রয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড যদি রাজনৈতিক হতো তাহলে রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলার প্রশ্ন আসত। তাদের তো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। তারা যেটা করছে পুরোটাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করেই তাদের মোকাবিলা করা হবে।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মের নামে অধর্মের কাজ জনগণ কখনো মেনে নেবে না। এ ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে তাণ্ডবে জড়িতদের চিহ্নিত করার কথা বলেন।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads