• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
অক্সিজেনের জন্য স্বজনদের হাহাকার

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

অক্সিজেনের জন্য স্বজনদের হাহাকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০২১

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনাভাইরাস ইউনিটে ভর্তি আছেন নেত্রকোনার হায়দার হোসেন। ৬০ বছরের এ প্রৌঢ়ের ১৫ লিটার করে অক্সিজেন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অক্সিজেন লেভেল কমে চলে আসে ৭৫ শতাংশে। অন্য রোগীর কাছ থেকে অনেকটা জোর করেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা খুলে অক্সিজেন দেওয়া হয় শাহজাহান আলীকে।

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেডই পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। সর্বশেষ খবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, রাজধানীতে মাত্র ৭টি আইসিইউ বেড খালি আছে। এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হয়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যান তাদের বেশিরভাগেরই দরকার হচ্ছে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন। এর জন্য দরকার হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার। কিন্তু এই ক্যানুলার সংখ্যা দেশে একেবারেই অপর্যাপ্ত। এটি পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকলে রোগীদের আইসিইউতে যাওয়ার হার কমানো যায়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ সিলিন্ডারে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের দরকার হয় তাদের ৫০ ভাগ সুস্থ হয়ে যান ১৫ লিটারের মধ্যেই। কিন্তু এরপরও যাদের দরকার হয়, তাদের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা যন্ত্র লাগে। ওটা দিয়ে ৮০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, কোনো কারণে যদি হঠাৎ কারো অবস্থা ভালো হয়, তাকে বুঝিয়ে যার অবস্থা বেশি খারাপ তাকে ক্যানুলা দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। কিন্তু এটা সমাধান নয়। আইসিইউতেও এই একই যন্ত্র দিয়ে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। আর একদম শেষ পর্যায়ে গেলে তবেই রোগীকে ভেন্টিলেশনে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা) দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সারা দেশে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ১১৫৮টি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ৯৫৮টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বিভাগীয় শহরগুলোতেই পর্যাপ্ত নেই; জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তো চিন্তাই করা যায় না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন আইসোলেশন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ডা. শাহরিয়ার খান বলেন, হাসপাতালে ৬০-৭০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন করোনা রোগী ভর্তি আছেন প্রায় এক হাজার। দেখা যাচ্ছে অনেক রোগীর হঠাৎ করেই অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তখন মেশিন নিয়ে শুরু হয় টানাটানি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চিকিৎসক জানান, গতকাল সন্ধ্যা থেকে চারজন রোগী এলো যাদের স্যাচুরেশন ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ। সকলকেই হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া দরকার। অথচ কোনো মেশিন খালি নেই।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, অধিকাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃদু বা মাঝারি লক্ষণ দেখা যায়। কারো আবার কোনো লক্ষণই দেখা যায় না। খুব অল্প সংখ্যকেরই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হয়। পর্যাপ্ত হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই থাকলে তাদের ভেতর থেকে হাতেগোনা দু-একজনের আইসিইউ লাগে।

৮০ লিটার অক্সিজেন দিয়ে সংকটাপন্ন রোগীদের শতকরা ৯০ শতাংশকেই কাভার করা যায় বলে মন্তব্য করেন প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, অধিকাংশ রোগীকেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এবং হাই মাস্কসহ অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে ম্যানেজ করা যায়। যেহেতু অধিকাংশ হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আইসিইউতেই আছে, এ কারণে আইসিইউর দরকার হচ্ছে বেশি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর অনুপাতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল এবং হাই ফ্লো ক্যানুলার লাইন থাকতে হবে। এমনটা জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, সে হিসাবে আমরা অনেক ওভারলোডেড। এ হাসপাতালে প্রায় ১০০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫টি সবসময়ই চলছে। তিনি বলেন, নতুন রোগী এলে দেখা যাচ্ছে তার কিছুক্ষণ পরেই তার হাই ফ্লো ক্যানুলা লাগছে। এখানে স্বল্পতা থাকলেও থাকতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘ইচ্ছে থাকলেও ১০০-এর জায়গায় ১৫০ মেশিন বানানো সম্ভব নয়। কারণ এখানে অক্সিজেন সাপোর্টেরও একটা বড় ব্যাপার রয়েছে। আর আমরা তো এখন সেটা নিয়েও হিমশিম খাচ্ছি।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, এখন রোগীদের এত অক্সিজেন দরকার হচ্ছে যে সংকট লেগেই আছে। এ হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ২০টি। তার মধ্যে কয়েকটি আবার কাজ করে না। ১২-১৩টি ঠিক আছে। অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, ক্যানুলা চালানোর মতো সবাই দক্ষ নয়। চালাতে না পারার কারণেও নষ্ট হয়েছে কিছু। তবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার জন্য ইতোমধ্যে হাসপাতাল তার চাহিদা জানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৩০টি মেশিনের জন্য ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হয়তো এর মধ্যে চলে আসবে।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads