• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
বাতিল অর্ধেক বিশেষ ফ্লাইট

প্রবাসী যাত্রীরা গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে টিকিটের জন্য ভিড় করে। টিকিট না পয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেন

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

বাতিল অর্ধেক বিশেষ ফ্লাইট

  • রবিউল হক
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০২১

কঠোর লকডাউনে প্রবাসী কর্মীদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুর এই ৫টি দেশে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার প্রথম দিনেই বড় ধাক্কা খেল। গতকাল শনিবার ১২টি এয়ারলাইনসের ১৪টি ফ্লাইটের মধ্যে কমপক্ষে সাতটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এ খবর শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রবাসী কর্মীরা বিক্ষোভ করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এয়ারলাইনস অফিসের সামনে। চট্টগ্রামেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। বিভিন্ন জায়গায় প্রবাসীরা সড়ক অবরোধও করেন। এয়ারলাইনসগুলোর দাবি, সৌদি আরবের ল্যান্ডিং অনুমতি না পাওয়া এবং পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। অথচ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সৌদি আরবসহ পাঁচ দেশে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ১২টি এয়ারলাইনসকে অনুমতি দেয়। এই ১২টি এয়ারলাইনস হচ্ছে-বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস, ওমান এয়ার, সালাম এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ, এমিরেটস, ইতিহাদ, এয়ার অ্যারাবিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া আবুধাবি, ফ্লাই দুবাই এবং সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিমানবন্দরে এবং এয়ারলাইনস অফিসে এসে প্রবাসীরা জানতে পারেন ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফ্লাইট চালুর দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন প্রবাসীরা কর্মীরা।

বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের রিয়াদগামী ফ্লাইট (বিজি-৫০৩৯) গতকাল শনিবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ কারণে এয়ারলাইনসের নির্দেশনা অনুসারে ৬ ঘণ্টা আগে রাত ১টার মধ্যেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাতে প্রবাসী কর্মীরা বিক্ষোভ করেন বিমানবন্দরে। পরে এসব যাত্রীকে হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করে বিমান। ফ্লাইট বাতিল করার খবরে চট্টগ্রামেও বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। নগরের ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা ফ্লাইট চালুর দাবি জানান। গতকাল বিমানের পাঁচটি ফ্লাইট ছিল। এর মধ্যে চারটি বাতিল করা হয়। বাতিল হওয়ার ফ্লাইটের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরবের দাম্মামে একটি, রিয়াদে একটি, দুবাইয়ে দুটি ফ্লাইট। তবে রাতে সৌদি আরবে জেদ্দাগামী ফ্লাইট বাতিল করেনি বিমান। তারা সৌদি আরবে অনুমতির আশায় রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে অনেক যাত্রী টিকিট কেনেন। ফ্লাইট বাতিল হলে ট্রাভেল এজেন্টদের মোবাইলে তা জানিয়ে দেওয়া হয় বিমানের পক্ষ থেকে। কিন্তু এ তথ্য অনেক সময় ট্রাভেল এজেন্টদের কাছ থেকে যাত্রীরা পান না। এতে তারা দুর্ভোগে পড়েন।

সৌদি এয়ারলাইনসেরও গতকাল বিকালে একটি ফ্লাইট ছিল। কিন্তু ফ্লাইটটি আদৌ যাবে কি না কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি। ফলে ভোর থেকেই রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় সোনারগাঁও হোটেলের সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে অপেক্ষা করেন প্রবাসীরা। অপেক্ষারত সৌদিগামী যাত্রীরা বলেন, আজ (গতকাল) সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিল, সেটি ছাড়বে কি না, তারা যেতে পারবেন কি না এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এখানে অপেক্ষা করছেন। এখন পর্যন্ত সৌদি এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের কেউ তাদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেনি। পরে গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সামনে তারা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় কারওয়ানবাজার থেকে ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। 

সৌদি এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে বলা হয়, আজ রোববার থেকে তাদের সিডিউল ফ্লাইট চলবে। যাদের ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত টিকিট করা আছে, তাদের নতুন করে টিকিট রি-ইস্যু করতে হবে। বিমানবন্দরে না গিয়ে প্রথমে ১৪ থেকে ২১ তারিখের টিকিটগুলো রি-ইস্যু করতে হবে। এরপর করোনা টেস্ট করে গমন করতে হবে। পর্যায়ক্রমে এপ্রিলের ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ তারিখের যাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

এদিকে টিকিট নিতে আসা সৌদি প্রবাসী আবু কাওসার জানান, লকডাউনে এমনিতেই পরিবহন বন্ধ। গাড়ি ভাড়া করে ঢাকায় আসার পর জানা যাচ্ছে ফ্লাইট বাতিল। এখন আমরা কোথায় যাব, আবার গাড়ি ভাড়া কে দেবে। আর যাদের ভিসার মেয়াদ বেশি দিন নেই, তাদের কপাল পুড়বে সময়মতো যেতে না পারলে। টাঙ্গাইল থেকে সুমন হোসেন জানান, গত ১৪ এপ্রিল তার সৌদি ফেরার কথা ছিল এবং টিকিটও কাটা আছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে ফ্লাইট বন্ধ। এখন বিশেষ ফ্লাইট চালু হবে শুনে জানতে এসেছি কবে আমার ফ্লাইট হবে।

কুষ্টিয়া থেকে আসা সাব্বির মাহমুদ জানায়, আমি দেশে এসেছি গত জানুয়ারিতে। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে আটকা পড়ি। সৌদি আরবে আমার ফ্লাইট ছিল ১৫ এপ্রিল। ফ্লাইটের জন্য আমি ১২ এপ্রিল ঢাকায় এসে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছি। এর মধ্যে আমার টিকিট ক্যানসেল হয়েছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ২০ এপ্রিল। তিনি বলেন, আমরা প্রবাসীরা যেন বিদেশে পৌঁছাতে পারি, সে ব্যবস্থা যেন সরকার আমাদের জন্য করে। আমাদের সরকারের কাছে আর কোনো কিছু চাওয়ার নেই।

ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহে ৯টি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দুবাই, সাতটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে মাসকাট, চারটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দোহা ও একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে পরিচালনা করা হবে। তবে প্রথম দিনে দুবাইয়ের একটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। মাত্র ২০ জনের মতো যাত্রী পাওয়া গেছে। এখানে শুধু যাত্রী থাকলেই হচ্ছে না, করোনা টেস্টের রিপোর্টও লাগবে। লকডাউনে অনেকে আসতেও পারছেন না। সব মিলিয়ে যাত্রী সংকট আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads