• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
আয় কমেছে ৬৬ ভাগ মানুষের

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

আয় কমেছে ৬৬ ভাগ মানুষের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ এপ্রিল ২০২১

করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে দেশে। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। সংক্রমণ রোধে চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে চলছে দেশব্যাপী লকডাউন। এতে বেকায়দায় পড়েছে খেটেখাওয়া মানুষ। গত বছর করোনা সংক্রমণ শুরুর পর তা রোধে ৬৫ দিন লকডাউন ছিল। সেসময় খেটেখাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের অবস্থা খুবই শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়। বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা চলার মধ্যেই আঘাত হানল দ্বিতীয় ঢেউ। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নতুন দরিদ্র ও বেকারের সংখ্যা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাদ্যসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সব মিলিয়ে খেটে খাওয়া, নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের অবস্থা ত্রাহি ত্রহি।

করোনা মহামারীর প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ পর্যন্ত সারা দেশের ৬৫.৭১ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। এ ছাড়া ৩৭.১৪ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে খাদ্যসহ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে বলে জানিয়েছে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ আয়োজিত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাদ্য গ্রহণে প্রভাব শীর্ষক জরিপের ফল নিয়ে এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান।

জরিপের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতি গত বছর থেকেই বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। ইতোমধ্যে চলছে সরকার বিধিনিষেধ। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ বিশেষত দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, রাস্তার হকাররা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা তিন বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। স্বল্প আয়ের এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি সহায়তা দরকার।

বর্তমানে চালের বাজারে সিন্ডিকেটের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু সরকার অনুমোদিত বৃহৎ রাইস মিলাররা যে পরিমাণ চাল মজুত করার এখতিয়ার রাখে তা চালের বাজার অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেন। এগুলো হলো-খাদ্য নিরাপত্তাকে নাগরিকের অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা, খোলা বাজারে চাল বিক্রি বাড়ানো, আগামী এক বছরের জন্য এলাকাভিত্তিক কয়েকটি স্থায়ী খোলা বাজারে বিক্রির জন্য দোকান/স্টোর তৈরি করা, টিসিবির বিক্রির সক্ষমতা বৃদ্ধি, ধনীদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে দ্রব্যসামগ্রী কিনে মজুত করার প্রবণতা পরিহার এবং স্থানীয় পর্যায়ে মুদি দোকানগুলোর মজুত ব্যবস্থা নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থাপিত সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমরা একটি অস্বাভাবিক সময় পার করছি। মানুষের আয় কমে গেছে। আবার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র মানুষকে বিপদগ্রস্ত করেছে। আমরা টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে খাদ্য সামগ্রী বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। আন্তর্জাতিক বাজারেও তেল, চিনি, পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে, যার প্রভাব দেশের বাজারেও পড়ছে। দাম কমানোর জন্য খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমরা মনিটরিং করছি; কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল আমাদের নেই।  রমজানে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির জন্য ৩৫ হাজার টন সয়াবিন তেল বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে এ মুহূর্তে মানুষের কাজ না থাকাটা আসলেই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। সরকার এজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আমাদের এখন কোভিড মাথায় রেখেই পরিকল্পনাগুলো করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম নেই। সেজন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন করা দরকার। খাদ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা দরকার। এক্ষেত্রে শিশুদের পুষ্টির বিষয়টির ওপর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। বলেন, শহরের বস্তিবাসী দরিদ্রদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল বাজেটে। জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কার্যক্রমগুলো যত দ্রুত সম্ভব ডিজিটালাইজেশন করা দরকার।

ওয়েবিনারে আরো বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ এশিয়া ইকো কো-অপারেশন কর্মসূচির পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন। স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads