নিমতলীর ট্র্যাজেডির পর সরকার পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর জন্য কেরানীগঞ্জে স্থায়ী রাসায়নিক পল্লি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কথা ছিল বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক)। ২০১০ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ১০ বছর পার হয়ে গেলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের বিন্দুমাত্র অগ্রগতি হয়নি। সবকিছুই রয়ে গেছে কাগজে-কলমে। আর একটার পর একটা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। পুড়ে মরছে সাধারণ মানুষ। প্রতিবারই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর প্রশাসন নানা ধরনের আশ্বাস দিয়ে যায়। কোনোটাই বাস্তবায়িত হয় না।
২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামে বিস্ফোরণে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ হয় অনেকে। সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সাধারণ অগ্নিকাণ্ড বিস্ফোরণে রূপ নেয় রাসায়নিক দ্রব্যের কারণে। এর পর আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার যে কথা বলেছিল সরকার। তা বাস্তবায়ন হলে পরবর্তী দুর্ঘটনাগুলো ঘটত না। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় ২০১৯ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। তখনো গুদাম সরিয়ে নিতে তোড়জোর শুরু হয়। নেওয়া হয় স্থায়ী কেমিক্যাল পল্লি গঠনের উদ্যোগ। তবে দুই বছরে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৩টার দিকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় আবাসিক ভবনের রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। বিস্ফোরকে ঠাসা গুদামের সে আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের নেভাতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চারজনে। আহত অন্তত ২১ জন। অগ্নিদগ্ধদের কয়েকজন রয়েছেন আইসিউতে। আহতদের ভর্তি করা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। এটির সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, দগ্ধদের কেউ আশঙ্কামুক্ত নন। দিনের পর দিন দুর্ঘটনায় নিহতের তালিকা লম্বা হচ্ছে। খুব জানতে ইচ্ছে করে, বিস্ফোরকমুক্ত পুরান ঢাকা পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে? কবে সরবে ব্যবসায়ীদের রাসায়নিক কারখানা?
প্রথম ঘটনা থেকে সর্বশেষ ঘটনার সময়ের দূরত্ব ১১ বছর হলেও পুরান ঢাকার চিত্র কিন্তু একই। এই ১১ বছরে তিনটি বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও পুরান ঢাকা থেকে সরেনি রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম। কয়েক বছর পরপর এমন বড় দুর্ঘটনা ঘটে, প্রাণ যায় অনেকের। আর তখন কিছুদিনের জন্য তৎপর হতে দেখা যায় প্রশাসনকে। সময়ের ব্যবধানে মানুষ যখন এসব ঘটনা ভুলে যায়, তখন সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়ের লোক দেখানো অভিযানও বন্ধ হয়ে যায়। পরে ধীরে ধীরে ফের পুরান ঢাকা তার স্বরূপে ফিরতে থাকে। যেন অপেক্ষায় থাকে বড় একটি রাসায়নিক দুর্ঘটনার, লোভের আগুনে মানুষ পোড়া গন্ধের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিমতলী ও চুড়িহাট্টার পর সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আরমানিটোলার ঘটনা ঘটছে। নিমতলীর পর যদি সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিত তাহলে চুড়িহাট্টা হতো না। আর চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি না হলে আরমানিটোলাও সৃষ্টি হতো না। সরকার এসব দুর্ঘটনার পর বরাবরই শুধু আশ্বাস ও লোক দেখানো অভিযানে সময় পার করছে। কিন্তু পুরান ঢাকার ঘনবসতি এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, পুরান ঢাকায় যারা রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসা করে, তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। সামাজিকভাবেও তারা খুব সংঘবদ্ধ। এ কারণে কোনো সরকার এখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে তাদের বাধ্য করতে পারছে না। রাজনৈতিকভাবেও তারা অনেক প্রভাবশালী। তাই সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে রাসায়নিক গুদাম সরানোর যে প্রকল্প শিল্প মন্ত্রণালয় নিয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার পেছনে সংঘবদ্ধ ওই ব্যবসায়ীদের গোষ্ঠী থাকতে পারে। তবে সরকার যদি দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাহলে ব্যবসায়ীদের ওইখানে (নির্ধারিত স্থান) যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জুনে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরে জন্য আলাদা পল্লি নির্মাণের স্থান ঠিক করা হয় কেরানীগঞ্জে। এর আট বছর পর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ‘বিসিক কেমিক্যাল পল্লি- ঢাকা নামে একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। পরে ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর সবার টনক নড়ে। কেরানীগঞ্জে রাসায়নিক পল্লি স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে তখন নতুন স্থান ঠিক হয় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের জুন।
শুধু সময়ই বাড়েনি, নাম পরিবর্তন হয়ে এটি ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সীগঞ্জ হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে আট গুণ। প্রথমে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সংশোধনের পর প্রকল্পের ব্যয় পাঁচ গুণ বেড়ে নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে হওয়ার কথা থাকলেও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার তুলশিখালী ব্রিজসংলগ্ন গোয়ালিয়া, চিত্রকোট ও কামারকান্দা নামক তিনটি মৌজার মোট ৩১০ একর জমির ওপর ২ হাজার ১৫৪টি শিল্প প্লট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে শিল্প মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দুই বছর চলে গেছে শুধু জমি অধিগ্রহণেই। এখনো মাটি ফেলে সেই জায়গা ও অবকাঠামো নির্মাণ উপযোগী করে তুলতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিসিক।
ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৫৪০ কোটি টাকার মতো। বাস্তবায়ন মাত্র ৩৩ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থবছরে প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬২ কোটি টাকা। কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সংশোধিত এডিপিতে তা আরো কমিয়ে করা হয় ২৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে কাজ শেষ করার সময় রয়েছে এক বছর। কিন্তু এ সময়ে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি কাজ করতে হবে। মাটি ভরাটসহ অবকাঠামো নির্মাণও শেষ করতে হবে। অথচ প্রথম পরিকল্পনামতে এটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের কাজ শেষ হতে আরো দুই বছর লাগতে পরে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জে শিল্প মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় রাসায়নিক শিল্প পল্লি নির্মাণের চলমান প্রকল্পের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, মূল কাজ হচ্ছে মাটি ভরাট করা। মাটি ভরাট হয়ে গেলে বাকি কাজ এক-দুই মাসের মধ্যে টেন্ডার করা হবে। টেন্ডার হয়ে গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্প সমাপ্ত করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সভায় মাটি ভরাটের কাজের অনুমোদন হয়ে গেছে। আমরা প্রথমে বিমানবাহিনী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজটি করার জন্য প্রস্তাব করেছি। সে সময় আমাদের এ প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়নি। তখন অনুমোদন হয়ে গেলে এত দিনে মাটি ভরাটের কাজটি হয়ে যেত।
এ ছাড়া ২০১৯ সালের জুনে শিল্প মন্ত্রণালয়ে জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয় মুন্সীগঞ্জ প্রস্তুত হওয়ার আগে সাময়িকভাবে রাসায়নিক কারখানা ঢাকার শ্যামপুরে উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে নেওয়া হবে। ছয় মাসের মধ্যে এগুলো স্থানান্তরের জন্য ব্যবসায়ীদের জায়গা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুই বছরে একটি রাসায়নিক কারখানাও সরেনি। কদমতলী থানার শ্যামপুরে বিসিআইসির উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায় বিএসইসির খালি জায়গায় রাসায়নিক গুদাম সরাতে নেওয়া হয় প্রকল্প। এক বছরের মধ্যে যা বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু দুই বছর পরও সেগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকভাবে দুটি স্থানে ১২ দশমিক ১৭ একর জমিতে ৪ লাখ বর্গফুট আয়তনের স্টিল শেড নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারি খরচে নির্মিত অবকাঠামোতে ব্যবসায়ীরা সেখানে ন্যায্য ভাড়ায় রাসায়নিক পদার্থ রাখতে পারবেন।
চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগের সচিব (আইএমডি) প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করি। সেখান এখন পর্যন্ত শুধু জমি অধিগ্রহণই হয়েছে মাত্র। পরিদর্শন শেষে আইএমইডি করণীয় সম্পর্কে সুপরিশ দিয়ে প্রতিবেদনও করেছে। তা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোও হয়েছে। চুড়িহাট্টার ঘটনায় তদন্ত শেষে পুরান ঢাকার গোডাউন দ্রুত সরিয়ে নেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম। পরবর্তী কার্যক্রম দেখা বা সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার কথা শিল্প মন্ত্রণালয়ের। তারাই ভালো বলতে পারবে, কতটুকু কী করেছে। এ বিষয়ে শিল্প সচিব কে এম আলী আজম ও বিসিক চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান, এনডিসির মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। এমনকি ফোনে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর মেলেনি।
চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিও বেশ কিছু সুপারিশ করে। এসব সুপারিশও বাস্তবায়ন করা হয়নি। কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ঢাকা বিভাগ) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গোডাউনগুলো যত দ্রুত সম্ভব সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এগুলো সেখান থেকে না গেলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাই আরো প্রাণহানি ঘটার আগে দ্রুত সংস্থার সমন্বয়ে গোডাউনগুলো সরিয়ে নিতে হবে। আমরা প্রায় ১৮টি সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু তার কোনোটি বাস্তবায়ন হয়েছে বলে শুনিনি।
পুরান ঢাকার বাসিন্দারা জানান, সেখানকার প্রায় সব বাসা-বাড়ির নিচতলা বা আন্ডারগ্রাউন্ডে কেমিক্যালের গোডাউন রয়েছে। এসব গুদামে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে কেমিক্যাল মজুত করা হয় না। ছোট ছোট দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সেগুলো সামনেও আসে না। ফলে সব সময় তারা আতঙ্কে থাকেন। বেশি ভাড়া পেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বাড়ির মালিকেরা গোডাউন ভাড়া দিচ্ছে। এতে আবাসিক ভবনে কেমিক্যাল গোডাউন ও ঝুঁকিপূর্ণ কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। ভবন মালিকদের লোভের আগুনে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণার পর টানা ১৫ দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলে। অভিযানে পুরান ঢাকার অনেক রাসায়নিক গুদাম সিলগালাও করা হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় এসব অভিযান। আবারো ধীরে ধীরে পুরান ঢাকায় জমে ওঠে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসা। অভিযানে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাসায়নিক গুদামগুলোর মালিকরাও আবার ভিন্ন নামে ভিন্ন জায়গায় ব্যবসা শুরু করেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সরেজমিন দেখা যায়, পুরো পুরান ঢাকাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য রাসায়নিক গুদাম। বিভিন্ন অলিতে-গলিতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এসব রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসা চলছে। অবৈধভাবে রাসায়নিক দ্রব্যের এই ব্যবসা চলছে প্রশাসনের কিছু লোকজনকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ২০ হাজারের বেশি রাসায়নিক গুদাম আছে। এসব গুদামের অধিকাংশের কোনো অনুমোদন নেই। অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম চলছে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েই। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমরা পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের ব্যবসা করতে আর কোনো ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি না। কেমিক্যাল গুদাম অপসারণের মূল কাজটি করছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এই ক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া পুরান ঢাকায় যারা কেমিক্যালের ব্যবসা করছে, এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো নজরদারি রয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, আমাদেরও সেটা প্রশ্ন- ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া একটা লোক কীভাবে ব্যবসা করে, ব্যাংক লোন নেয়। তবে মাঠ পর্যায়ে আমাদের তদারকি রয়েছে। আমরা যখন মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে যাই, তখন তারা দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এসব ব্যবসায়ীদের একটা তালিকা করছি আমরা। এই তালিকা আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও পাঠাব।