বিধিনিষেধ জারি থাকা সত্ত্বেও এপ্রিল মাসে দেশজুড়ে ৩৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৪৫২ জন নিহত ও ৫১৯ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে ৫৪ জন নারী ও ৪৭ জন শিশু রয়েছে। সে হিসেবে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে নিহত হয়েছেন ১৫.০৬ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মাসিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে পৃথকভাবে ১৪৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১৫৮ জন নিহত হয়, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া ৯টি নৌদুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছে চার জন। পাশাপাশি সাতটি রেলপথ দুর্ঘটনায় পাঁচ জন নিহত হন। দেশের সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৫৮ জন, বাস যাত্রী পাঁচ জন, ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি যাত্রী ৬০ জন, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ১১ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু) ৮৯ জন, নসিমন-ভটভটি-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম ২২ জন, বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, পাওয়ারটিলার, ইটভাঙ্গার মেশিন গাড়ির দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১১২টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৩৭ জন। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। ২০টি দুর্ঘটনায় নিহত ২১ জন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২৬টি দুর্ঘটনায় ৩৪ জন নিহত। সবচেয়ে কম পঞ্চগড় জেলায়। দুটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি।
সংগঠনটি জানায়, গত মার্চ মাসে ৪০৯টি দুর্ঘটনায় ৫১৩ জন নিহত হয়েছিলেন। ওই মাসে গড়ে প্রতিদিন নিহত হয়েছিলেন ১৬.৫৪ জন। এপ্রিলে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৫.০৬ জন। এই হিসেবে এপ্রিল মাসে প্রাণহানি কমেছে ৮.৯৪ শতাংশ। প্রাণহানি কমার এই হার কোনোভাবেই উন্নতির সূচক নির্দেশ করছে না। বিধিনিষেধের মধ্যে সারা দেশে যাত্রীবাহী বাস বন্ধ এবং মানুষের যাতায়াত যথেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রিত ছিল। তারপরেও দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির এ হার চরম উদ্বেগজনক।
দুর্ঘটনায় যেসব যানবাহন দায়ী
ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ৩১.৬৬ শতাংশ, ট্রাক্টর, ট্রলি, লরি ৭.২৯ শতাংশ, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, জিপ, পাজেরো ৫ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ৩.০৭ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৮.৫৯ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান, টেম্পো, মিশুক, স্কুটার) ১৫.৯৩ শতাংশ, নসিমন, ভটভটি, আলমসাধু, পাখিভ্যান, টমটম, মাহিন্দ্র, বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা ও ভ্যান ৭.৪৮ শতাংশ এবং অন্যান্য (মাটিকাটা ট্রাক্টর, রোড রোলার, পাওয়ারটিলার, ইটভাঙা মেশিন গাড়ি) ০.৯৫ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি ও গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কয়েকটি সুপারিশ দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা ও বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অন্যতম।