• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ধানের চেয়ে শ্রমের মূল্য বেশি

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ধানের চেয়ে শ্রমের মূল্য বেশি

  • ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৭ মে ২০২১

এক মণ ধানের চেয়েও একদিনে একজন শ্রমিকের মূল্য বেশি। ধানকাটার শেষ দিকে এসে এমনই পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহে। যেখানে এক মণ ধানের মূল্য ৬০০ টাকা সেখানে একজন শ্রমিকের সারা দিনের মজুরি এখন ৭০০ টাকা। প্রথম দিকে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি কিছুটা কম থাকলেও শেষের দিকে তা বেড়ে প্রায় এক মণ ধানের সমান হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার হালুয়াঘাটের ধারাবাজার বাসট্যান্ড এলাকায় প্রতি বছরের মতো এবারও নিয়মিত শ্রমিকদের হাট বসছে। প্রথম দিকে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা থাকলেও তা এখন বেড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা করা হয়েছে। সঙ্গে দিতে হচ্ছে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার। দৈনিক মজুরি বাড়ার কারণ হিসেবে শ্রমিকরা গত কয়েক দিনের দাবদাহকে দায়ী করছেন। এছাড়া সম্প্রতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাতেও শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের শ্রমিক হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত এই শ্রমিক হাট বসে। এখানে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ শ্রমিক আসেন প্রতিদিন। কৃষকরা সকালে এসে চাহিদা অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণ করে শ্রমিক নিয়ে যান। যেদিন বাজারে শ্রমিক কম আসে সেদিন শ্রমিকের মূল্য ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। শ্রম বিক্রি করতে হাটে আসা শ্রমিক বজলুর রহমান বলেন, কৃষকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করাতে চান। তীব্র গরমে কাজ করা খুব কষ্টের। শেষ পর্যায়ে এসে বিলের পানিতে ধান কাটতে হয়। তাই, এখন দৈনিক মজুরি বেশি।

হাটে শ্রমিক নিতে আসা ধুরাইল ইউনিয়নের জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রায় তিন একর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ করেছিলাম। ধান ভালো হলেও মূল্য কম। অন্যদিকে একজন শ্রমিকের দৈনিক শ্রমের মূল্য প্রায় এক মণ ধানের দামের চাইতেও বেশি। এখন কীভাবে ধান কাটব, ভেবে পাচ্ছি না।’

হালুয়াঘাটে বাজারে ধানের দাম সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মণ শুকনা আঠাশ ধান ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রায় একই দামে ঊনত্রিশ ধান। মোটা ধান ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।

জেলার সদরের চর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানেও শ্রমিকের দৈনিক শ্রমমূল্যও প্রায় এক মণ ধানের দামের সমান। চর এলাকাতেও কৃষকরা শেষ পর্যায়ে এসে ধান কাটার শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

এবিষয়ে কথা হয় চর ঈশ্বরদিয়া এলাকার কৃষক জমশেদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক মণ ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিক পাওয়া যায় না। একদিকে ধান কেটেছি, অন্যদিকে ধান বিক্রি করে শ্রমিকের দৈনিক মজুরি দিয়েছি। এমন করতে করতে সব ধান বিক্রি করে দিয়েছি।’

কৃষক মোশাররফ মিয়া বলেন, ৪ কাঠা  জমির জমির ধান কেটেছি ৩০০ হাজার টাকায়। ধান বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরি ও ক্ষেতের মালিকের ধান দিয়ে সব শেষ।

কথা হয় এই এলাকায় দৈনিক মজুরিতে কাজ করা হেলাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ৬০০ টাকার নিচে দৈনিক মজুরিতে কাজ করে পেট চলে না। এবছর গরম অনেক বেশি। তাই মজুরিও একটু বেশি।

এদিকে শম্ভুগঞ্জ বাজারে ধানের মূল্য সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি মণ শুকনা আঠাশ ধান ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঊনত্রিশ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। মোটা ধান ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এবিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, ‘এ বছর জেলার দুই লাখ ৬৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে হিটশকে জেলার দুই হাজার ৬৩০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া অন্য কোনোভাবে ধান নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads