• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ভবন নির্মাণ শিখতে বিদেশ যাবেন ৩০ কর্মকর্তা

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

ভবন নির্মাণ শিখতে বিদেশ যাবেন ৩০ কর্মকর্তা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০২১

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়কে আধুনিক সুবিধাসংবলিত বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে ৫২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ভবন নির্মাণ শিখতে বিদেশ ভ্রমণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য ৩০ কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠানো হবে। ব্যয় হবে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হবে পরামর্শক খাতে। টানা চার বছর ১০ পরামর্শকের পেছনে প্রতি মাসে ব্যয় হবে ৩০ লাখ ৫৮ হাজার ১০০ টাকা। মহমারীর এ সময়ে এমন ব্যয় অযৌক্তিক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে চলছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম। মহামারীর কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বারবার হোঁচট খেয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। ফলে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ভাটা পড়েছে। এর মধ্যেও নেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প। বেশির ভাগ প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়টি বাতিল করে দিচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই যত্নসহকারে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পূর্বের অভিজ্ঞতা আছে, সেগুলোতেও বিদেশ সফরের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকছে না।

গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের বহুতল ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ সময়ের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে গণগ্রন্থাগার ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণের অনেক অভিজ্ঞতা আছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের। কিন্তু এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠানো হবে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিদেশ ভ্রমণ ছাড়াও অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) দেখা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় হবে। টানা চার বছর প্রায় ১০ জন পরামর্শক এ প্রকল্পে কাজ করবেন। অর্থাৎ প্রত্যেক পরামর্শকের পেছনে প্রকল্পটির মেয়াদকালে এক কোটি ৪৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৯৯ টাকা ব্যয় হবে। গড় হিসাবে একজন পরামর্শকের পেছনে প্রতি মাসে ব্যয় হবে তিন লাখ পাঁচ হাজার ৮১০ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় ১০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ, অনাবাসিক ভবন নির্মাণ (দুটি বেজমেন্টসহ নয় তলা ভবন), মোটরযান ক্রয় (দুটি জিপ, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মিনিবাস), পরামর্শক সেবা, বই ও সাময়িকী ক্রয়, অফিস ভাড়া, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং অফিস সরঞ্জাম সংগ্রহ করাহবে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, ভবন নির্মাণ শিখতে ৩০ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি না দেখে বলা যাবে না। তবে, ডিপিপিতে বিদেশ ভ্রমণ যেহেতু আছে, সেহেতু কাজও আছে। যে-কোনো প্রকল্পেই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দেশের মধ্যে ও বাইরে কাজ থাকে।

ভবন নির্মাণ দেখতে বিদেশে যাওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলেন, এখানে শুধু ভবন নির্মাণ নয়, প্রকল্পের সঙ্গে মাল্টিপারপাসসহ অনেক উদ্দেশ্য রয়েছে। এখানে একটা পাঠাগার, একটা অডিটোরিয়াম, আইটি ল্যাব থাকবে। প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের পড়ার সুযোগ থাকবে। একনেকে যেভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রী অনেক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে কালচারাল একটা হাব হবে। এখন যেটা আছে, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি কাজ হবে প্রকল্পে। প্রধানমন্ত্রী একনেকে বলেছেন এটা আরো আগে হওয়া উচিত ছিল।

ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ৩০ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, গ্রন্থাগারের ভবন নির্মাণের জন্য বিদেশ ভ্রমণের দরকার কী? একনেকে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা দেখেই তো প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করবেন। একনেকে যাওয়ার আগে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ও পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যারা প্রকল্পটি মূল্যায়ন করে তাদের বিষয়গুলো নজরে আনা উচিত ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতেন। যাই হোক, আমি মনে করি বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের প্রকল্প না নেওয়াই সমীচীন। প্রকল্পে পরামর্শক খাতে বরাদ্দের বিষয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের কোনো বরাদ্দ বা অনুমোদন না দেওয়াই উচিত।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads