• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

চাচা ও ভাই থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুনিয়াকে কুক্ষিগত করে নুসরাত, পরিণত করে টাকা বানানোর মেশিনে

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৪ মে ২০২১

অন্ধকার জগতের সম্রাজ্ঞী হিসেবে আলোচিত পিয়াসার হাত ধরেই অভিজাত মহলে পরিচিত হন নুসরাত, পরবর্তীতে নিজেই সেসব রংমহলের সঙ্গে যোগসূত্র ঘটিয়ে দেন মুনিয়ার। নিত্য নতুন পরিচিত ধনাঢ্যদের মাহফিলে প্রায়ই ডাক পড়তো তাদের। জমকালো সব মাহফিল থেকে নেশার আসর পর্যন্ত সর্বত্রই কদর ছিল নুসরাত মুনিয়ার। প্রথমদিকে বড় বোন নুসরাত ছাড়া কোথাও পা ফেলতেন না মুনিয়া। কিন্তু খুব অল্প সময়ে সবকিছুতেই অভ্যস্ত হওয়া মুনিয়া একাকীই সব আসর মাতিয়ে তোলায় অভিজ্ঞ হয়ে উঠেন। এরপর থেকেই আর দুই বোনকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। একজনের পর একজনের কাধে হাত রেখে তরতর করে উঠে গেছেন তারা আভিজাত্যের শীর্ষে।

আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেকে ফাঁসানো সেই পিয়াসা এখন অভিজাতপাড়ার ডাকসাইটে মক্ষিরাণী। নুসরাতই এই পিয়াসা আর পাপিয়া সিন্ডিকেটের হাতেই তুলে দেয়া হয় মুনিয়াকে। নুসরাতের বিত্তশালি হওয়ার লোভই মূলত মুনিয়াকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। মুনিয়া, নুসরাত, পিয়াসা ও পাপিয়ার কল লিস্টের সূত্র ধরেই এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, জানা যাচ্ছে আরো অনেক অজানা কাহিনী।

মুনিয়ার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট, স্ক্রিনশট, কথোপকথন ও ডাইরির সূত্র ধরেই বেরিয়ে এসেছে পিয়াসা, পাপিয়া ও শারুন সিন্ডিকেটের সঙ্গে গভীর সখ্য থাকার নানা রহস্য। পিয়াসাই মূলত অর্ধশতাধিক ধনাঢ্য যুবকের সঙ্গে মুনিয়ার গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে দেয়। মুনিয়ার অভিভাবক নুসরাতও নানাভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। নানারকম পার্টিতে অংশগ্রহণ, মডেল হিসেবে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মানের নামে লং ড্রাইভে নিয়ে যাওয়া, সিলেট, কক্সবাজার, ভাওয়ালগড়, রাঙ্গামাটির বিভিন্ন কটেজে অবস্থানের বিষয়ে সরাসরি নুসরাতের সঙ্গেই চুক্তি করতে হতো। এ পর্যন্ত মুনিয়ার কোনো বিজ্ঞাপনচিত্র আলোর মুখ না দেখলেও মডেল হিসেবে তাকে ব্যবহার বাবদ নুসরাতকে টাকা পয়সা প্রদানের নানা কাহিনী জানা গেছে। নুসরাতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যবেক্ষণ এবং তার ব্যাংক একাউন্ট তল্লাশিসহ তাকে যৌথ সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই সবকিছু পরিস্কারভাবে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মুনিয়াকে নানাভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যাতে পারিবারিকভাবে বিশেষ করে চাচা ও বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে কোনরকম বাধা না আসে সে ব্যপারেও আগাম ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিল নুসরাত। নিজে বাদী হয়ে চাচা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে এমনকি মুনিয়ার দ্বারাও ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে তাদেরকে রীতিমত শত্রুতে পরিণত করে রেখেছিল। তাদের সঙ্গে মুনিয়ার মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ ছিল, কুশল বিনিময়ের বিন্দুমাত্র সুযোগও ছিল না। এমনকি মুনিয়ার মোবাইল ফোনে তার চাচা ও ভাইয়ের নাম্বার বরাবরই ব্ল্যাকলিস্ট করে রাখা ছিল বলেও ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফলে মুনিয়াকে এককভাবেই কুক্ষিগত রেখে নুসরাত তাকে যেমন খুশি তেমনভাবেই ব্যবহার করেছে। এ কারণে মুনিয়ার পারিবারিক জীবনটা ছিল অশান্তির অনলে ঢাকা। বরাবরই টাকা বানানোর মেশিন হিসেবেই ব্যবহরি করা হয়েছে তাকে।

এদিকে মুনিয়ার আত্মহত্যার দিনের ঘটনা, এজাহার দাখিল, বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে নুসরাতের অতিউৎসাহী ভূমিকা লক্ষ্য করা গেছে। তার কোনো বক্তব্যের সঙ্গে কোনো বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এসব খুঁজতে গিয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা নতুন নতুন মোড় দেখতে পাচ্ছেন। মুনিয়ার আত্মহত্যা পরবর্তী সময়ে তিনটি বহুদামী গাড়িতে নুসরাতকে দিগ্বিবিদিক ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এসব গাড়ির মালিক কারা কারা সে তথ্য পাওয়া গেলেও অনেক রহস্যের জট খুলবে বলে ধারণা করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

অপরদিকে মুনিয়ার আত্মহত্যা পরবর্তী সময়ে পুলিশের এক কর্মকর্তারও অতিউৎসাহী ভূমিকা নিয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পর্যালোচনা করে দেখছেন। হত্যা না আত্মহত্যা এটা চিহ্নিত হওয়ার আগেই অতিউৎসাহী ওই পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশেই ‘মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা’ সংক্রান্ত মামলা দায়ের এবং আসামির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আবেদন বিদ্যুতবেগে আলাদতে পাঠানোসহ নানা হুমকি ধমকি দৌড়ঝাঁপের পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল সেসবও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি, কারো ইন্ধন নাকি প্রভাবশালী কোনো মহলের চাপে ‘অতিউৎসাহী’ ভূমিকা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন কি না তা এখনো স্পষ্ট হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads