• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সুরক্ষিত হচ্ছে দুর্গম সীমান্ত

সুযোগ বন্ধ হচ্ছে চোরাকারবারিদের

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৭ মে ২০২১

ভারতের মিজোরাম সীমান্তঘেঁষা রাঙ্গামাটির দুর্গম অঞ্চল। পাহাড়ের খাঁজে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাউন্টার ইন্টারজেন্সি অপারেশনস বিওপি দুমদুমিয়া। মূল ব্যাটেলিয়ন থেকে দুর্গম এ অঞ্চলের পথ প্রায় ৩ দিন। ‘দিন রাত্রি আগলে রাখি মাতৃভূমির প্রতিটি কোণা’-এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২৪ ঘণ্টা সীমান্ত আগলে রাখার কাজ করে যাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সদস্যরা।

ঈদের দিন দুর্গম এ অঞ্চলের দায়িত্ব পালন করা সদস্যদের মনোবল বাড়াতে তাদের সাথে সময় কাটাতে যান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম। পরিদর্শনকালে তিনি দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে বিজিবি সদস্যদের দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা, সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে পবিত্র দায়িত্ব পালনের জন্য বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।

বিজিবি মহাপরিচালক কাপ্তাই ব্যাটালিয়নের অধীন রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম পার্বত্য এলাকায় ‘দুমদুমিয়া সিআইও ক্যাম্প’ এবং রাজনগর ব্যাটালিয়নের অধীন ‘বদিপাড়া বিওপি’ পরিদর্শন এবং সেখানে কর্মরত বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি বিজিবি সদস্যদের অভিনন্দন জানান। সেখানে তিনি গাছের চারা রোপণ করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুর্গম অঞ্চলকে সুরক্ষার আওতায় আনছি। সীমান্তের কোনো অঞ্চল যেন অরক্ষিত না থাকে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, মূল ব্যাটালিয়ন থেকে দুই তিনদিনের যে পথ, এটি কমিয়ে আনার জন্য ইতিমধ্যে রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। এটি শেষ হলেই অপারেশনাল অনেক কাজই সহজ হবে।  যেসব দুর্বৃত্ত সুযোগ নিতে চায় তাদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

বিজিবি সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন ও প্রশিক্ষণ), বিজিবি রাঙ্গামাটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারসহ অন্য কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, বর্তমানে দুর্গম এ অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। বিশেষ করে সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ উন্নয়নের ফলে দুর্গম এ অঞ্চলকে সহজেই সুরক্ষার আওতায় সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, সীমান্ত এলাকায় নতুন বিওপি নির্মাণ এবং পুরাতন বিওপি পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। বর্তমানে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির ৭৩টি কম্পোজিট আধুনিক বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) নির্মাণ কাজ চলছে। এর মাধ্যমে সীমান্তে অপারেশন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের সুরক্ষিত অবস্থান নিশ্চিত করা হবে। সীমান্ত এলাকায় অপারেশনে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের জন্য উন্নত বাসস্থানও নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘সীমান্ত এলাকায় বিজিবির ৭৩টি কম্পোজিট/আধুনিক বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। প্রকল্পটির জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। জানা গেছে, বিওপি বর্তমান স্থাপনাগুলো অতি পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং কোথাও কোথাও বিওপিগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব বেশি। এ প্রেক্ষিতে চোরাচালান ও মাদক প্রতিরোধ এবং সীমান্ত সমস্যা মোকাবিলায় সমতল, পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলে ৪৯টি বিওপি পুনঃনির্মাণ এবং ২৪টি নতুন বিওপিসহ সর্বমোট ৭৩টি স্থানে বিওপি নির্মাণ করা জরুরি। সেই প্রেক্ষিতে বিজিবির যশোর, রংপুর, সরাইল, চট্টগ্রাম ও রামু রিজিয়নের অন্তর্গত স্থানগুলোতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের সীমান্ত রক্ষায় ৬৮৭টি বিওপি রয়েছে। যা আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, মানব পাচার, অবৈধ বাণিজ্য ইত্যাদি প্রতিরোধে অপ্রতুল। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের অপারেশনাল ও আভিযানিক কার্যক্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি, প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক কাঠামো জোরদার করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, প্যারামিলিটারি ফোর্স হিসেবে বিজিবির প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়া। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার এবং মায়ানমারের সঙ্গে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার পাশাপাশি মানব পাচার, মাদক ও অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই বাহিনীর মূল অভিযানগুলো সাধারণত বিওপি থেকে পরিচালনা করা হয়। তবে সীমান্তের কোথাও অরক্ষিত, কোথাও স্পর্শকাতর এবং কোথাও দুর্গম রয়েছে। সীমান্ত এলাকা সুরক্ষিত হলে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে বিজিবি।

জানা গেছে, এর আগে বিওপির চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে ১৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ওই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০১৯ সাল পর্যন্ত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads