• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

‘বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা অবিশ্বাস্য’

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২১ মে ২০২১

বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদান বাংলাদেশি মানুষের অবিশ্বাস্য ভালোবাসার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশি জনগণ এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর কোনো শব্দ আমি অভিধানে খুঁজে পাইনি। আমি কাউকে খুশি করার জন্য বলছি না। আমার অন্তর থেকে এটাই প্রকৃত অভিব্যক্তি। আমি এমন কিছু বিষয় প্রত্যক্ষ করেছি যা কখনো আমি স্বপ্নে দেখব বলেও ভাবিনি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার সংহতি প্রকাশের জন্য রাজধানীর বারিধারা ফিলিস্তিনি দূতাবাসে যান কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেছি; কিন্তু বাংলাদেশ আমার কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জনগণ ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা চোখে দেখে বসে থাকেনি, তারা বিভিন্নভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে আমাদের পাশে দাড়াতে। আমরা এদেশের জনগণের কাছ থেকে এমন সাড়া পেয়েছি, যা বিস্ময়কর। আজ যেভাবে দূতাবাসে বাংলাদেশি জনগণ সহায়তা নিয়ে ভিড় করেছে, গত ১০ দিন ধরে এভাবেই তারা এখানে এসে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা জানি না কীভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাব। এদেশের জনগণ শুধু টাকাপয়সা এবং অন্য সহায়তাই নয়, তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য তাদের জীবন বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত বলে আমাদের জানিয়েছেন।’

জেরুজালেমে মুসলমানদের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা প্রাঙ্গণে সম্প্রতি ইসরাইলের হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে এ ধরনের জঘন্যতম হামলা বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রদূত জানান, ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আমরা হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক এবং আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের যে-কোনো দেশে এ ধরনের জঘন্যতম হামলার অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানোর পাশাপাশি তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের এই অবস্থান খুবই পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে। প্রথমত ফিলিস্তিনিদের প্রতি বার্তা দিয়েছে যে, তারা একা নয়। তাদের পাশে তাদের ভাই-বোনেরা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, যারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং জনগণকে প্রতিপক্ষ করেছে তাদের কাছে এটি একটি বার্তা যে, তারা যদি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বর্বরতা চালায় তাহলে বাংলাদেশও তাদের বিপক্ষে। সেইসাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চাপ সৃষ্টির বার্তা দিয়েছে। তাই বাংলাদেশে ব্যাপারে যা-ই বলিনা কেন যথেষ্ট নয়।’

এ সময় রাষ্ট্রদূত আরো জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ফিলিস্তিনিদের কাছে খুবই পরিচিত একজন মানুষ। আমার পূর্বে আমার পিতাও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, দরিদ্র মানুষকে সহায়তা এবং জনগণের স্বাধীকার রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা সম্পর্কে জানতেন। ফিলিস্তিনে তার নামে একটি প্রধান সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি জাতিসংঘে এবং ঢাকায় বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। তার কন্যা শেখ হাসিনাও একই পথ অনুসরণ করছেন।’

ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকারও প্রশংসা করেন ইউসেফ রামাদান। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন বাংলাদেশি নিউজপেপারগুলো পড়ি। সেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চালানো ইসরাইলি বর্বরতা এবং তাদের দুঃখ-দুর্দশার খবর গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ধনী-গরিব, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক-বেসমারিক প্রশাসনসহ সব শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে আমরা সহায়তা পাচ্ছি। এমনকি বিদেশ থেকেও অনেক বাংলাদেশি আমার সাথে ফোন এবং ই-মেইলে যোগাযোগ করছে এবং সহায়তা প্রদান করছে। এটি আমাদের আমৃত্যু সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।’

তিনি আশা প্রকাশ করেন, একদিন নিশ্চয়ই ইসরাইলিদের যত ক্ষমতা, অর্থ এবং অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র থাকুক না কেন বাংলাদেশের মতো অসংখ্য মানুষের সমর্থন এবং আল্লাহর সাহায্যে ফিলিস্তিন একদিন স্বাধীন হবে। সেদিন বিশ্ব মুসলিম বায়তুল মোকাদ্দাসে এক সারিতে নামায আদায় করবে।

এদিকে ফিলিস্তিনি জনগণকে সাহায্য প্রদানে দূতাবাসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ দূতাবাসে যাচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাড়িধারা ডিওএইচ থেকে আফরিন নামের এক নারী ফিলিস্তিনি দূতাবাসে যান অর্থ সহায়তা প্রদানের জন্য। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ বিশেষ করে নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষের প্রাণহানি এবং বসতভিটা হারানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা হয়তো তাদের সরাসরি কোনো সহায়তা করতে পারব না। তাই কিছু নগদ অর্থ প্রদান করে হলেও তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। ইরফান নামের আরেক ব্যক্তি আসেন রাজধানীর মালিবাগ থেকে। তিনি বলেন, একজন মুসলমান হিসেবেই নয়, মানবতার পাশে দাঁড়াতেই আমি আমার সাধ্যমতো সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

অন্যদিকে সরাসরি সহায়তার পাশাপাশি বিকাশ, রকেট, নগদের পাশাপাশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাহায্যের পাঠানো যাবে বলে জানিয়েছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নম্বরে অর্থ পাঠানো যাবে-

০১৭১৫৮৩৩৩৩০২ (রকেট, পারসোনাল), ০১৭১৫০৮১৮৩৯ (বিকাশ, পারসোনাল), ০১৭১৫০৮১৮৩৯ (নগদ, পারসোনাল), ০১৩০১৭৯৪২৯৫ (বিকাশ, পারসোনাল), ০১৫৩১৭১২৯৪৫ (বিকাশ, পারসোনাল)। এসব নম্বরে অনুদান পাঠানোর পর অর্থের অঙ্ক ও প্রেরকের পরিচয় ০১৯৮৮১৪১৪১৪ নম্বরে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

নতুন যুক্ত করা আরো কয়েকটি নম্বর হলো : বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট-০১৯৩৭৭৯১২৫৪, নগদ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট-০১৯৩৭৭৯১২৫৪, উপায় মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট-০১৯৩৭৭৯১২৫৪ নম্বরগুলোতেও টাকা পাঠানো যাবে।  

এ ছাড়া ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের কর্পোরেট শাখার নিম্নোক্ত নম্বরেও টাকা পাঠানো যাবে- অ্যাকাউন্ট নাম-ঊসনধংংু ড়ভ ঃযব ংঃধঃব ড়ভ চধষবংঃরহব, উযধশধ. অপপড়ঁহঃ হড়: ০৯৫১৩০১০০০০০১৮৩৬, জড়ঁঃরহম হড়: ২৪৫২৬১৭৩৮, ঝডওঋঞ : টঈইখইউউঐঅেই.

গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আহত হয়েছে প্রায় ২ হাজার। ইসরাইল বিমান ও ক্ষেপইাস্ত্র হামলা চালিয়ে িড়য়ে দিয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনিদের শত শত বাড়িঘর। এতে সেখানে মানবিক বিপর্যয়ে সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে গত কয়েকদিনের হামলায় গৃহহীন হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি। এ অবস্থায় আহতদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীর পাশাপাশি জরুরি খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশে অবস্থিত ফিলিস্তিনি দূতাবাস এ সহায়তার আহ্বান জানায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads