• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

সাক্ষাৎকার : সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান

নেতৃত্বের সাহসিকতায় সচল অর্থনীতি

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৭ মে ২০২১

গত বছর মহামারীর শুরুর দিকে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি নিয়ে নানা শঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু সরকারের বিচক্ষণ এবং সাহসী বেশ কিছু পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতির চাকা ভালো সচল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেন করোনাকালীন দেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতির নানা দিক নিয়ে। ড. আতিউর রহমান জানান, ‘করোনা সারা পৃথিবীকে আক্রমণ করেছে। এটা একটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ঘটনা ঘটছে এবং প্রতিটি বাড়িতেই আক্রমণ আসছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার নেতৃত্বের বিচক্ষণতা এবং সাহসিকতার গুণে অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। সরকার জীবন এবং জীবিকা দুদিকেই নজর রেখেছে। করোনার শুরুতে গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিডিপি’র প্রায় ৪.৪ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সাধারণ মানুষকে একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে সরকার মানুষকে বাঁচানোর পাশাপাশি জীবিকা সচল রাখতে সীমিত সম্পদ দিয়েই যা করার দরকার তা করবেন এবং তিনি তার কথা রেখেছেন।’

জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংক আভাস দেয় চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু দুই মাসের মাথায় তারা আগের অবস্থান থেকে সরে এসে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে আভাস দেয়। অর্থনীতির এই উন্নতির পেছনে কৃষি, এসএমই খাত এবং রপ্তানি খাত বিশেষ গুরুত্ব ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন ড. আতিউর। রপ্তানিকারকরা যাতে লকডাউনের মধ্যেও কর্মীদের বেতনভাতা দিয়ে কারখানা চালু রাখতে পারে সেজন্য মাত্র দুই শতাংশ রেটে প্রণোদনা সহায়তা দিয়েছে।

এই অর্থনীতিবিদের মতে, সরকারের এসব সিদ্ধান্ত ছিল সময়োপযোগী। এ ছাড়া ছোটখাটো উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান করার পাশাপাশি বড় উদ্যোক্তাদেরও ব্যাংক থেকে লোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সাথে করোনার মাঝেও পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, কর্ণফুলি টানেলসহ বড় বড় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে সেগুলো সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। ড. আতিউর রহমানের মতে, ‘এসব কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য আস্থার পরিবেশ পেয়েছে। ফলে অর্থনীতি ভালোও করছে।’

করোনাকালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে দেশে, যা অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দশতম গভর্নর হিসেবে দায়িত্বপালনকারী এই অর্থনীতিবিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রবাসীদের আয় বৃদ্ধির পেছনে দুটো কারণ থাকতে পারে-একটি হলো, সরকারের দুই শতাংশ ইনসেনটিভের পাশাপাশি কোনো কোনো ব্যাংক তার সাথে আরো এক শতাংশ যুক্ত করেছে। আরেকটি কারণ হতে পারে, যারা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে তাদের টাকাটা যাতে স্বজনদের কাছে দ্রুত পৌঁছতে পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ। একেবারে গ্রামে-গঞ্জে মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল ফাইন্যান্সিংয়ের কারণে অল্প সময়ে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মনীতিও অনেক সহজ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের কাছে কাগজপত্রও কম চায়। এ কারণে প্রবাসী আয় অনেক বেড়ে গেছে। আর প্রবাসী আয় আসা মানে গ্রামে টাকা চলে যাওয়া। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা ছিল।’

দেশের মুদ্রা বাজারে তারল্য ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণ ডলার কিনে নেয়। গত ১০ মাসে ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি তারা কিনেছে বাজার থেকে। এতে একদিকে বাড়ছে রিজার্ভ, অনদিকে বাজারে অনেক বেশি টাকা ছাড়ার কারণে তারল্য সংকটে পড়তে হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অর্থনীতির সাবেক এই শিক্ষক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই কাজটি খুব মুনশিয়ানার সাথে করা হয়েছে। এ কারণে দেশে এখন আর তারল্য সংকট নেই। ছোটখাটো এবং মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা কম সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারছেন।’

তবে অর্থনীতির বর্তমান অবস্থাকে আরো গতিশীল করতে হলে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব টিকা প্রদান কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দেন ড. আতিউর। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির স্বার্থে যেখান থেকে যেভাবেই হোক, যত টাকাই লাগুক টিকা সরবরাহের ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ দ্রুত টিকা নিশ্চিত করতে পারলে ব্যবসায়ীরা আস্থা ফিরে পাবেন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরে যেখানে ঘনবসতি সেখানে সবাইকে টিকা দিয়ে ফেলতে পারলে মোটামুটি সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। গ্রামে একটু পরে দেওয়া হলেও তেমন সমস্যা হবে না।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads