• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সরকারি হাসপাতালে বাড়ছে সেবার মান

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০২১

বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে বেশ কয়েকটি নতুন সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি আধুনিকায়নসহ পুরোনো হাসপাতালগুলোয় বাড়ানো হয়েছে চিকিৎসা সক্ষমতা। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও অনেক আধুনিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এসব হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে কয়েক দশকের পুরোনো অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী। আর এই অর্গানোগ্রাম জটিলতার প্রভাব পড়েছে বড় বড় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে শুরু করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত।

এসব হাসপাতাল পরিচালনা ও চিকিৎসাসেবা দিতে নেই পর্যান্ত জনবল। আর পুরোনো অর্গানোগ্রামে চিকিৎসক ও নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। এ অবস্থায় সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জনশক্তি সংকট নিরসনে নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন এ অর্গানোগ্রাম অনুমোদন হলে সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়োগ পাবে প্রয়োজনীয় জনবল। এতে বাড়বে চিকিৎসাসেবার মান।

প্রতিটি সরকারি অফিস-দপ্তরের কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন জনবল। আর সেই জনবল কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হলো অর্গানোগ্রাম। একটি অর্গানোগ্রামের মধ্যে কোন স্তরে কতজন লোকবল থাকবে বা নিয়োগ হবে তা ঠিক করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর অর্গানোগ্রাম নতুন করে না করায় দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাস্থ্যসবো কেন্দ্রগুলোতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্রমতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অর্গানোগ্রামটি তৈরি হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। ওই অর্গানোগ্রামে ১৬০০ রোগী শয্যার বিপরীতেই জনবল নিয়োগ অনুমোদন রয়েছে। পরবর্তীতে এ হাসপাতালটি ২৬০০ শয্যাসংখ্যায় রূপান্তরিত হলেও নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়নি। এমনকি হাসপাতালের বিদ্যমান ১৬০০ শয্যাবিশিষ্ট অর্গানোগ্রাম অনুযায়ীও পর্যাপ্ত জনবল নেই। এর মধ্যে রোগী চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রতিদিন ৪,২০০ এরও বেশি শয্যায় রোগী সেবা নিচ্ছে।

রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (এসএসএমসি) ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট রয়েছে। ৯০০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি প্রতিদিন দুই-তৃতীয়াংশ জনবল নিয়ে চলছে। এ জনবল দিয়েই এখানে প্রতিদিন ১৫০০-এরও বেশি রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শুধু চিকিৎসকের কমপক্ষে ১৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকের ৪০টি পদ এবং তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ১০৯ পদসহ প্রায় ২৩৬টি পদ শূন্য রয়েছে। একই অবস্থা দেশের সকল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। 

অন্যদিকে অর্গানোগ্রাম জটিলতায় দেশের অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসক সংকট। উদাহরনস্বরূপ দেখানো যায় যে, দীর্ঘদিন ধরে জনবল ও চিকিৎসক সংকটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে দায়িত্বশীলরা প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্ততের কয়েক দফা আবেদন করেও কাজে আসেনি।

বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি মাত্র তিন বছর আগে উদ্বোধন হয়েছে। চিকিৎসক সংকটে এ সময়ের মধ্যে এখানে চালু হয়নি জরুরি সেবা কার্যক্রম। এখানে কনসালট্যান্টসহ দশজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র দুজন। ফলে সেবা পাওয়া নিয়ে রয়েছে অভিযোগ। অন্যদিকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আধুনিক চিকিৎসার সরঞ্জাম থাকলেও ব্যবহারে নেই দক্ষ জনবল। ফলে আট বছর ধরে বন্ধ এখানকার অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম। 

এদিকে গুরুতর জনবল সংকটের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারি সকল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে একটি স্ট্যান্ডার্ড অর্গানোগ্রাম চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) মহাপরিচালকের তত্বাবধায়নে এ অর্গানোগ্রাম তৈরি হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

নতুন এ অর্গানোগ্রামকে ‘মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ট্যান্ডার্ড সেটআপ’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। নতুন এ অর্গানোগ্রম অর্থাৎ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর স্ট্যান্ডার্ড সেটআপের সদস্য সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (মানবসম্পদ) ডা. আমির হোসেন রাহাত জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাস্থ্যসেবা খাতের সংকট নিরসনে সরকারের নির্দেশে কাজ করছে তারা। এ জনবল সংকট নিরসনে অধিদপ্তর কিছু স্লট স্থাপন করে স্ট্যান্ডার্ড অর্গানোগ্রামের বিষয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করেছে। জনবল নিয়োগের মান নির্ধারণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেতৃত্বে একটি কমিটি তার স্টেকহোল্ডারদের সাথে কয়েক ডজন সভা হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা পর্যালচনা শেষে এটি তৈরি হয়েছে। এ অর্গানোগ্রামের ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন ‘স্ট্যান্ডার্ড সেটআপ’ প্রবর্তনের পরে কোনও প্রতিষ্ঠানকে সরকারের কাছ থেকে অর্গানগ্রামের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অর্গানোগ্রামের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে অনুমোদনের পরে জনশক্তি নিয়োগ করতে হবে। নতুন অর্গানোগ্রামের প্রস্তবনা অনুযায়ী, ৫০০, ১০০০, ১৫০০, ২০০০, ২৫০০, ৩০০০ ও ৪০০০ হিসাবে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার ওপর নির্ভর করে জনবল নিয়োগের কয়েকটি স্তর করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ আলম জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে নতুন অর্গানোগ্রামের বিষয়ে তারা একটি প্রস্তাব পেয়েছেন। এটি একটি রুটিন কাজ, আমরা বছরের পর বছর এ জাতীয় ইস্যু নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়নেও মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ট্যার্ন্ডড সেটআপ’ সম্পূর্ণ অনুমোদন পেতে আরো বেশ কয়েটি ধাপ পার হতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ ‘স্ট্যান্ডার্ড সেটআপ’ অর্গানোগ্রাম প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠাবে।  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই এটি চূড়ান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads