• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

দেশে ৩৪ বছর ধরে এলএসডি মাদক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ মে ২০২১

রাজধানীর একটি বাসা থেকে এলএসডি (লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড) নামক মাদক জব্দের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে সাত দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। মামলার আসামিরা হলেন-নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র সাদমান সাকিব রুপল ও আসহাব ওয়াদুদ তূর্য এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আদিন আশরাফ। আগামীকাল রোববার এ শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

এদিকে বাংলাদেশে এই মাদকের ব্যবহারে বহু বছর আগেই শুরু হয়েছে। তবে এর ব্যাপক বিস্তার হয়নি। ৩৪ বছর ধরেই দেশে এলএসডি মাদক রয়েছে।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের সাত দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে রোববার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একদিকে যেমন হাফিজুরের রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্তে অগ্রগতি হবে, অপরদিকে এলএসডি মাদক বিষয়ে আরো তথ্য আসবে। এদিকে দুই বছর আগেও একবার রাজধানীতে এলএসডি মাদক জব্দ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মহাখালী থেকে ওই সময় এলএসডি সেবন ও বিক্রির অভিযোগে দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএনসি দাবি করে বলছে, এলএসডি নতুন কোনো মাদক নয়। বাংলাদেশে এই মাদকের ব্যবহারে বহু বছর আগেই শুরু হয়েছে। তবে এর ব্যাপক বিস্তার হয়নি। কেননা এই মাদকের দাম বেশি এবং এটি ইউরোপের দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে। নব্বইয়ের দশকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দেশে আসায় এলএসডির ব্যবহার সেভাবে দেখা যায়নি। তবে ৩-৪ বছর ধরে কিছু কিছু তরুণের মধ্যে এই মাদক নেওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। 

সূত্র বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যু তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডি মাদক আবার সামনে এসেছে।

ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক শামীম আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তারা মহাখালী ডিওএইচএস থেকে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই এলএসডিসহ দুজনকে হাতেনাতে ধরেন। এ ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি মামলাও হয়। মামলা নম্বর ২১। গ্রেপ্তার করা হয় রেদোয়ান আনান ও সৈয়দ আহনাদ আতিফ মাহমুদ নামে দুজনকে। ডিএনসির সুপারিনটেনডেন্ট ফজলুল হক খান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করেন পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান। তদন্তের পর ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এখন মামলাটি বিচারাধীন আছে।

শামীম আহমেদ বলেন, ওই দুই তরুণের কাছ থেকে ৪৬ স্ট্রিপ এলএসডি উদ্ধার করা হয়। ওই সময় প্রতিটি স্ট্রিপ ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। গ্রেপ্তার দুজন নিজেরা এলএসডি সেবন ও বিক্রিও করতেন।

এদিকে গত বুধবার রাতে রাজধানীর একটি বাসা থেকে এলএসডি মাদক জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ। ডিবি বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তারা এই মাদকের সন্ধান পেয়েছে।

এলএসডি বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বুধবার রাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

ডিবির ওই সূত্র বলেছে, ফেসবুকে ‘আপনার আব্বা’ নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে ওই মাদকের ক্রেতা সংগ্রহ করা হয়। গ্রুপে সদস্যসংখ্যা এক হাজারের বেশি। গ্রেপ্তার রুপল গ্রুপটি পরিচালনা করেন। রুপল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর ছাত্র ছিলেন। ড্রপ আউট হওয়ার পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

ডিবি বলছে, নেদারল্যান্ডস থেকে এলএসডি মাদক আমদানি করা হয়।

অনলাইনভিত্তিক অর্থ লেনদেন (পেমেন্ট) ব্যবস্থা পেপ্যালের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়। এই তিনজনের কাছ থেকে ২০০টি এলএসডি জব্দ করা হয়েছে। প্রতিটি তিন হাজার টাকা মূল্যে তারা বিক্রি করেন।

ডিবি সূত্রের দাবি, ১৫ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় তার তিন বন্ধু এলএসডি সেবন করান। এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তিনি শুধু একটি শর্টস পরে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে তিনি নিজের গলায় আঘাত করেন।

সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা হিসেবে তার মৃত্যু হয়। এর আট দিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে হাফিজুরের ভাই তার লাশ শনাক্ত করেন।

হাফিজের মৃত্যু, তার চিকিৎসা এবং অজ্ঞাতনামা হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে তার লাশ আট দিন পড়ে থাকার ঘটনার তদন্ত দাবি করে আসছেন সহপাঠীরা।

ডিবি পুলিশের দাবি, যে তিন বন্ধু হাফিজুর রহমানকে এলএসডি সেবন করিয়েছেন, তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন ফার্মাসিউটিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া ড্রাগস ডটকমের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, লাইসারজিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয় এলএসডি। এই এসিড বিভিন্ন দানাদার শস্যে থাকা এরগোট ছত্রাকে পাওয়া যায়। ১৯৩৮ সালে বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণে প্রথম এলএসডি তৈরি হয়। এটি এতই শক্তিশালী যে এর ডোজগুলো সাধারণত মাইক্রোগ্রাম হিসেবে নেওয়া হয়। এটি মনের ওপর প্রভাব ফেলে। কখনো কখনো এর প্রভাবে ভীতিকর অনুভূতি তৈরি হয়। এমনটা ঘটলে একে ‘ব্যাড ট্রিপ’ বলা হয়।

নানাভাবে এলএসডি বাজারজাত করা হয়। যেমন, ব্লটার পেপার বা নকশা করা বিশেষ কাগজে এলএসডি মেশানো হয়। এভাবেই এলএসডি বেশি সহজলভ্য। এ ছাড়া ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে, তরল বা কিউব আকারে পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads