• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

মিড-ডে মিলে ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০২১

সারা দেশের প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক বেলা (মিড-ডে মিল) খাবার সরবরাহের জন্য ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯’ এর খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছর থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরে খাবার সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।  খাবারের মেন্যুতে খিচুড়ি, ডিম ও কলার পাশাপাশি বিস্কুটও দেওয়া হবে।

দেশের ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে ১৫ হাজার ৩৪৯টি স্কুলের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে খাওয়ানো হচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় ২০০০ সাল থেকে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চলছে।

সূত্র জানায়, সরকার আশা করছে দুপুরে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহ করলে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার অনেক কমে যাবে। কারণ, দেশের বিপুল সংখ্যক শিশু দারিদ্র্যতার জন্য সংসারের বোঝা ঘাড়ে তুলে নিতে বাধ্য হয়। ফলে তারা শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ঝরে পড়ে। তাই সরকারের এই উদ্যোগ।

বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ১০৪টি উপজেলার ১৫,৩৪৯টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একবেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি উপজেলায় রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। বাকিগুলোতে পুষ্টিকর বিস্কুট দেওয়া হয়। এরফলে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। এর মধ্যে রান্না করা খাবার দিলে ১১ শতাংশ উপস্থিতি বেড়ে যায়। আর বিস্কুট দিলে উপস্থিতি ৬ শতাংশ বাড়ে।

সূত্র জানায়, সরকারি পরিকল্পনা হলো-যে এলাকায় যে ধরনের খাবারের প্রয়োজন সে এলাকায় সে ধরনের খাবার দেওয়া হবে। প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র্য থাকবে। মিড-ডে মিলের সবচেয়ে লাভজনক দিক হলো, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমবে ও  শিক্ষার মান বাড়বে। প্রথমদিকে, সপ্তাহে তিনদিন সবজি খিচুড়ি, বাকি তিনদিন বিস্কুট দেওয়া হবে। প্রতিদিন প্রতিটি শিশুকে ৫৩৩ ক্যালরি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার দেওয়া হবে। তবে যেদিন ডিম-খিচুড়ি দেওয়া হবে সেদিন ৬৩০ ক্যালরি পাবে শিক্ষার্থীরা। 

২০১৯ সালে মিড-ডে মিল নিয়ে যে নীতিমালা করা হয় তাতে বলা হয়েছে, দেশের অনেক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে মিড-ডে মিল চালু হয়েছে। এগুলোকে কী করে সমন্বিতভাবে সারা দেশে ছড়ানো যায় তার জন্য এই নীতিমালা। এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল বা ইউনিট কাজ করবে। কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণে প্রয়োজনবোধে প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। স্কুল মিল কর্মসূচির কার্যক্রমের ধরন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে গাইডলাইন সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তি চাহিদার ক্যালরির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। যা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ৩-১২ বছরের ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

সূত্র জানায়,  নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল মিল উপদেষ্টা কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে সরকার মনোনীত উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে এই কমিটি কর্মপরিধি, কার্যকারিতা, অর্থায়ন ও মূল্যায়নে কাজ করবে। সরকার মনোনীত বিশিষ্ট ব্যক্তির সভাপতিত্বে এই কমিটির সদস্যদের নির্দিষ্ট মেয়াদে নিয়োগ দেবে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুল মিল কর্মসূচির প্রধান নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। এতে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সহকারী উপপরিচালক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সম্পৃক্ত থাকবেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের অংশ হিসাবে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত থাকবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন,  এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা দেখেছি যে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে। রান্না করে খাবার দিলে ১১ শতাংশ উপস্থিতির হার বাড়বে। শুধু বিস্কুট দিলে উপস্থিতির হার বাড়ে ৬ শতাংশ। কর্মসূচির আওতাধীন এলাকায় ঝরে পড়ার হার ৬ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে এবং শারীরিক অবস্থাও অনুকূল দেখেছি। রান্না করা খাবার এলাকায় ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বিস্কুট দেওয়া এলাকায় ৪ দশমিক ৭ শতাংশ রক্ত স্বল্পতা কমেছে। এই বিবেচনায় জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা জেনেছি একই বিস্কুট বাচ্চারা খেতে চায় না-খাবারের বৈচিত্র্য বিবেচনায় আমরা বিস্কুট, কলা ও ডিম কমন রাখার চেষ্টা করছি। আর বৃহস্পতিবার অর্ধদিবসে শুধু বিস্কুট রাখা হবে।  যদি সব প্রাইমারি স্কুলকে এই মিড-ডে মিলের আওতায় নিয়ে আসা হয় তবে, শুধু বিস্কুট দিলে প্রতিদিন প্রতি শিক্ষার্থীর ৯ টাকা হারে বছরে ২ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, পাঁচ দিন রান্না করা খাবার ও এক দিন বিস্কুট দিলে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। বিস্কুট এবং ডিম, কলা ও রুটি দিলে ২৫ টাকা হারে খরচ হবে ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। সবগুলো মডেল পরীক্ষা করা হবে, যেখানে যেটা প্রযোজ্য, চলবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads