• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বিশ্বে শিশুশ্রমিক ১৬ কোটি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ জুন ২০২১

জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্বজুড়ে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি। এতে আরো জানানো হয়, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার বছরে এ তালিকায় যোগ হয়েছে ৮৪ লাখ নতুন নাম, ২০ বছরে যা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

‘চাইল্ড লেবার : গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২০, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল বৃহস্পতিবার যৌথভাবে প্রকাশ করে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারী ও লকডাউনের প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট গত এক বছরে আরো কোটিখানেক শিশুকে ঠেলে দিয়েছে একই দুর্ভাগ্যের দিকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে শিশুশ্রমিকের তালিকায় নতুন ৯ কোটি ৪০ লাখ নাম যুক্ত হয়েছে। ২০১৬ সালের পর থেকে ক্রমেই বাড়তে শুরু করে এ সংখ্যা। অর্থাৎ মহামারীর আগে থেকেই বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী।

করোনাভাইরাস যখন কেবল বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেবে নেবে করছে, তখনই বিশ্বে প্রতি ১০ শিশুর একজন মজুরিভিত্তিক কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে। এ চিত্র সবচেয়ে ভয়াবহ আফ্রিকার সাব-সাহারান এলাকায়। জাতিসংঘ বলছে, আগের তুলনায় প্রতি বছর নতুন যোগ দেওয়া শিশুশ্রমিকের হার বদলায়নি; বরং ২০১৬ সালের হারই বিদ্যমান এখনো। কিন্তু বৈশ্বিক জনসংখ্যা বেড়েছে বলে হার একই থাকলেও নতুন শিশুশ্রমিকের সংখ্যা নিঃসন্দেহে বেড়েছে।

মহামারীকাল শিশুদের জন্য পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলে বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, আগামী দুই বছরে তালিকায় যুক্ত হতে পারে পাঁচ কোটি শিশুশ্রমিক।

এ অবস্থায় নতুন করে দারিদ্র্যের মুখে পড়া লাখ লাখ পরিবারের সহায়তায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে আইএলও ও ইউনিসেফ।

ইউনিসেফের প্রধান হেনরিয়েত্তা ফোর সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিশুশ্রম বন্ধের লড়াইয়ে আমরা হারতে বসেছি। করোনাভাইরাস মহামারী আমাদের অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে। বৈশ্বিক লকডাউন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, অচল অর্থনীতি ও জাতীয় বাজেট সংকোচনের দ্বিতীয় বছর চলছে। এ পরিস্থিতিতে অনেক পরিবারকে বাধ্য হয়ে সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ করে কাজে পাঠানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

৪ বছর পরপর প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বিশ্বের মোট শিশুশ্রমিকের অর্ধেকেরই বয়স ৫ থেকে ১১ বছর। শিশুশ্রমিকদের বেশিরভাগই ছেলে। ১৬ কোটি শিশুশ্রমিকের মধ্যে ছেলের সংখ্যা ৯ কোটি ৭০ লাখ। জাতিসংঘ বলছে, জেন্ডার বৈষম্য হিসেবে ধরলে ছেলে ও মেয়ে শিশুশ্রমিকের সংখ্যার পার্থক্য কমে যায়।

কারণ আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়া মেয়েশিশুদের বেশিরভাগই যুক্ত হয়ে যায় গৃহস্থালি কাজে। এর আর্থিক মূল্য দেওয়া না হলেও প্রতি সপ্তাহে এসব কাজে তাদের সময় ব্যয় হয় গড়ে কমপক্ষে ২১ ঘণ্টা।

এ ছাড়া ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের বিপজ্জনক কাজে লাগানো নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলেছে, এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়।

খনি বা ভারী উৎপাদন শিল্পে বিপজ্জনক কাজে জড়িত শিশুরা সপ্তাহে ৪৩ ঘণ্টার বেশি শ্রম দেয়। এর ফলে কাজের পাশাপাশি তাদের পড়াশোনা একেবারেই অসম্ভব হয়ে যায়।

এ ধরনের কাজে যুক্ত শিশুর সংখ্যা ২০২০ সালের শুরুতে ছিল প্রায় আট কোটি। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল সোয়া সাত কোটি। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে বিপজ্জনক কাজে নতুন যুক্ত হয়েছে ৬৫ লাখ শিশু।

শিশুশ্রমিকদের প্রায় ৭০ শতাংশই কৃষি খাতে নিয়োজিত। বিশ্বজুড়ে এ সংখ্যা ১১ কোটি ২০ লাখ। তাদের মধ্যে সেবা খাতে নিয়োজিত ২০ শতাংশ, শিল্প খাতে ১০ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads