• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
ছোট মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আসছে নিষেধাজ্ঞা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ছোট মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আসছে নিষেধাজ্ঞা

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৪ জুন ২০২১

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে একটি নির্দিষ্ট সময় ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ছোট মাছের জাত সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যও আসছে নিষেধাজ্ঞা। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মধ্যে ১৪৩ প্রজাতিই ছোট মাছ। আর ৬৪ প্রজাতির মাছই বিলুপ্তপ্রায়। তবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিলুপ্তির পথে থাকা ২৩ প্রজাতির ছোট জাতের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশীয় মাছ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ ৮৩ হাজার টন। আর দেশের মৎস্য উৎপাদনে দেশীয় ছোট মাছের অবদান ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। এ মাছের চাষ বাড়ায় বর্তমানে হ্যাচারিতে ব্যাপক পোনা উৎপাদিত হচ্ছে। পোনাপ্রাপ্তি সহজ হওয়ায় বর্তমানে মাঠপর্যায়ে পাবদা, গুলশা, শিং, টেংরা, মাগুর ও কৈ মাছ ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। পাবদা, গুলশা, গুজি আইড়, রাজপুঁটি, চিতল, মেনি, ট্যাংরা, ফলি, বালাচাটা, শিং, মহাশোল, গুতুম, মাগুর, বৈড়ালী, ভাগনা, কুচিয়া, খলিশা, কালবাউশ, কই, বাটা, গজার, সরপুঁটি ও গনিয়া—এই ২৩ প্রজাতির মাছ আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এক সময় দেশের খাল,বিল, নিচু জলাভূমিতে প্রায় সারা বছরই দেশি কৈ, শিং, মাগুর, শোল, টাকি, রয়না, সরপুঁটি, টেংরা,বাইনসহ আরো অনেক ধরনের মাছে ভরপুর ছিল। কিন্তুু বেশ কয়েক বছর ধরে বাজারে দেশি অনেক প্রজাতির মাছেরই দেখা মিলে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রজনন মৌসুমে ছোট মাছ ধরার ফলে এসব মাছের উৎপাদন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। আবার খাল, বিল ও নিচু জলাভূমি ভারট হয়ে যাওয়া এবং বেশি হারে মাছ ও শামুক ধরা, কীটনাশক ব্যবহার, অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ছোট প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্তির পথে।  এমন অবস্থায় ছোট মাছের জাত সংরক্ষণের উপর জোর দেয়ার কথা জনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। এজন্য স্থায়ীভাবে মা-মাছ সংরক্ষণে বছরব্যাপী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে প্রজননকাল নির্ধারণ করে সাফল্য আসবে না। মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস্ আফরোজ বলেন, দেশীয় মাছের প্রজননকাল নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর কাজ করছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে নতুন প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তা ছাড়া জনগণকে সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাছের অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও বিএফআরআই উদ্ভাবিত মাছের চাষ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মৎস্য অধিদফতর কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার রাজধানীর মৎস্য ভবনে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) আয়োজিত ‘বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের প্রজননকাল নির্ধারণ ও সংরক্ষণ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ সংরক্ষণে প্রজনন সময় নির্ধারণ করে সেসময় নিষিদ্ধকাল আরোপ করা হবে। তবে নিষিদ্ধকাল হবে স্বল্পসময়ের জন্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেতে হবে। এজন্য একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনে উপজেলাভিত্তিক পাইলটিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ সংরক্ষণে সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততাও অত্যন্ত  গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, দেশের মৎস্য খাতের প্রবৃদ্ধি অভাবনীয়। যে কয়টি বিষয়ে সফলতা ও গর্বের কথা বলা হয় মৎস্য খাত এর মধ্যে অন্যতম। জলাশয় কমে যাওয়াসহ নানা প্রতিকুলতা সত্ত্বেও বর্তমানে দেশে মাছের উৎপাদন প্রায় ৪৬ লাখ মেট্রিক টন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads