• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সরকারি কল সেন্টার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২০ জুন ২০২১

ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দেশের সরকারি কল সেন্টার বা হেল্পলাইনগুলো। এসব কল সেন্টারের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেবাপ্রার্থী এসব কল সেন্টারে কল করে সেবা গ্রহণ করছেন। মানুষের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে এসব কল সেন্টার।

বিশেষ করে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, স্বাস্থ্য বাতায়ন, সুখী পরিবার কল সেন্টার, কৃষি কল সেন্টার, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলসহ বর্তমানে প্রায় ২০টি সরকারি কল সেন্টার সেবা দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে।

সরকারি কল সেন্টারগুলোর মধ্যে দ্রুততম সময়ে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। জাতীয় জরুরি সেবা কার্যালয়ের এক হিসাবে দেখা যায়, গত ২০ মাসে ৯৯৯ থেকে সেবা পেতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭২৩ জন ফোন দিয়েছেন। ৯৯৯ জরুরি সেবা বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে পরিচালিত একটি জরুরি কল সেন্টার। এখান থেকে জরুরি পুলিশ, জরুরি ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়। দেশের যে-কোনো প্রাপ্ত থেকে যে-কোনো ব্যক্তি ৯৯৯ কল করার মাধ্যমে এসব জরুরি সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। সর্বস্তরের নাগরিকদের জরুরি সেবা প্রদানের উদ্দেশ্য ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশ এই কল সেন্টার সেবাটি চালু করে। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে এ কল সেন্টার। ৯৯৯ একটি টোল ফ্রি নাম্বার। এই নাম্বারে কল করার জন্য কলারকে কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। বর্তমানে এই কল সেন্টারে শতাধিক এজেন্ট জরুরি সেবা দিতে কাজ করে যাচ্ছে।

২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের উদ্যোগে এবং আইসিটি ও ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি’র সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত হচ্ছে ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ কল সেন্টার। মিনিট প্রতি ২ টাকা ৪৫ পয়সা ব্যায়ে এই নম্বরে কল করে যে কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ, হাসপাতাল সম্পর্কিত যে-কোনো তথ্য ও ফোন নম্বর পেতে পারেন।

করোনাকালীন ১ কোটির বেশি মানুষকে সেবা দিয়েছে স্বাস্থ্য বাতায়ন-১৬২৬৩। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮০ জন মানুষ স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে বিভিন্ন পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। স্বাস্থ্য বাতায়ন বাংলাদেশের প্রথম এবং বৃহত্তম টেলিহেলথ সেন্টার।

পেশাগত জীবন ও পরিবার সামলাতে গিয়ে নারীরা ভোগেন নানা রকম শারীরিক-মানসিক সমস্যায়। নারীর এ সমস্যা থেকে কাটিয়ে ওঠার পথে বাধা লোকলজ্জা, কুসংস্কার ও পরিবারের অবহেলা। আর এ থেকে উত্তরণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিকল্পিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চালু করেছে ‘সুখী পরিবার কল সেন্টার ১৬৭৬৭’। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ১৬৭৬৭ নম্বরে কল করে ঘরে বসেই যে কেউ নিতে পারবে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য, মাসিক সংক্রান্ত জটিলতা ও মাসিক নিয়মিতকরণ সেবা, গর্ভকালীন ও গর্ভপরবর্তী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, নবজাতক-শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সকল তথ্য ও সেবা এবং রেফারেল সেবা। তথ্যমতে, প্রতিদিনই কল সেন্টারের মাধ্যমেসেবা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে। গত ১ নভেম্বর থেকে গত ৩১ মে পর্যন্ত ৭ মাসে ১৬৭৬৭ নম্বরে কল করে ২৭ হাজার ২৬৮ জন এই সেবা গ্রহণ করেছেন।

পরিচয় গোপন রেখে দুর্নীতি সম্পকে যে কেউ তথ্য দিতে পারে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এ জন্য চালু করা হয়েছে টোল ফ্রি হট নম্বর ১০৬।

কৃষিবিষয়ক তথ্য সহায়তার জন্য ২০১৪ সালের জুন মাসে চালু করা হয় সরকারি কৃষি কল সেন্টার; যার নম্বর ১৬১২৩। প্রতি মিনিটে ২৯ পয়সা ব্যায়ে যে কেউ এখানে ফোন করলে কৃষি সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য জানতে পারছেন। তবে গ্রামীণ ফোন নম্বর থেকে কল করলে কোনো টাকা কাটা হয় না।

২০১৫ সালের ২১ মে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশসন কোম্পানি (বিটিসিএল) চালু করে তাদের নিজস্ব কল সেন্টার নম্বর-১৬৪০২। সেবাগ্রহীতারা সাধারণ কল রেটে এখনে ফোন করে যে-কোনো ধরনের হয়রানি, ভোগান্তিসহ টেলিফোন সংক্রান্ত সেবা নিতে পারেন। তবে এই সেবাটি শুধু ঢাকা জেলার জন্য সীমাবদ্ধ।

‘তথ্য আপা ১০৯২২’ কল সেন্টারটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কল সেন্টার নম্বর। এটি বাস্তবায়ন করছে জাতীয় মহিলা সংস্থা। এই হট নম্বর ব্যাবহার করে যে-কোনো নারী আইনগত, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জেন্টার সম্পর্কিত তথ্য, সেবা ও পরামর্শ পেতে পারেন। এটি চালু হয় ২০১১ সালের ৫ জুলাই। এর কল রেট মিনিট প্রতি ২ টাকা।

দুর্যোগের আগাম বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের মার্চে চালু করা হয় ১০৯৪১ হেল্প লাইনটি। এর কল রেট ২ টাকা ৪৫ পয়সা। আবহাওয়া ও দুর্যোগ বার্তাসহ বন্যা পূর্বাভাস জানা যাবে এই নম্বরে কল করে। তবে সম্প্রতি সরকার দুর্যোগের আগাম বার্তা জানার জন্য ১০৯০ নম্বর বরাদ্দ দিয়েছে। টেলিটক ও গ্রামীণ ফোন নম্বর থেকে এই নম্বরে ফোন করলে পাওয়া যাবে দুর্যোগের আগাম বার্তা।

সুবিধাবঞ্চিত ও নির্যাতিত শিশুদের সার্বক্ষণিক সহায়তা করার লক্ষ্যে ২০১১ সাল থেকে চালু আছে হেল্প লাইন ১০৯৮। এটি সম্পূর্ণ টোল ফ্রি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে অপরাজেয় বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা কল সেন্টারটি পরিচালনা করছে।

ব্যাংকিং সেবা পেতে হয়রানীর শিকার হলে কিংবা ব্যাংকিং সংক্রান্ত যে-কোনো অভিযোগের জন্য বাংলঅদেশ ব্যংকের হেল্প লাইন হচ্ছে ১৬২৩৬, যা চালু আছে ২০১১ সাল থেকে। যে-কোনো অপারেটর থেকে সাধারণ কল রেটে এই নম্বরে কথা বলা যায়।

নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে ২০১২ সালের ২৯ জুন চালু করা হয় ‘নারী ও শিশু বিষয়ক হেল্পলাইন’। এই কল সেন্টারটির দুটি নম্বর। যে-কোনো অপারেটর থেকে কল করতে ১০৯ এবং বাংলালিংক ও জিপি ছাড়া অন্য অপারেটর থেকে ১০৯২১ নম্বরে কল করা যায়। এখানে ফোন করলে স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, পুলিশ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট এনজিও এই চার জায়গায় বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এর কল চার্জও নেই। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে গঠিত মাল্টি সেক্টরাল কর্মসূচির আওতায় এই কল সেন্টারটি পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কল সেন্টারের নম্বর হচ্ছে ১০০। যে কোনো ফোন অপারেটরের বিরুদ্ধে যে-কোনো ধরনের অভিযোগ করা যায় এই নম্বরে। এ জন্য নির্ধারিত চার্জ আছে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে-কোনো ধরনের আইনি পরামর্শ, কাউন্সেলিং ও তথ্য দেওয়ার জন্য ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর চালু করা হয় দুটি হট লাইন নম্বর। এগুলো হচ্ছে ০১৭৯৯০৯০০১১ এবং ০১৭৯৯০৯০০২২। এই হট লাইন সন্বন্ধে ফোন দিলে কোনো টাকা কাটা যাবে না। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এটি পরিচালনা করছে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের নিবন্ধন, সংশোধন ও হালনাগাদ সংক্রান্ত ত্য জানতে জাতীয় নির্বাচন কমিশন ২০১৫ সালের নভেম্বরে চালু করে হটলাইনন নম্বর ১০৫। মিনিট প্রতি ২ টাকা ৪৫ পয়সা ব্যয়ে যে কেউ এই নম্বরে ফোন করে সেবা পেতে পারেন।

দরিদ্র ও দুস্থ ব্যাক্তিদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আইন ও বিচার বিভাগের অধীন জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা যে হটলাইনট পরিচালনা করছে সেটি হচ্ছে ১৬৪৩০, এটি সম্পূর্ণ টোল ফ্রি।

ইউনিয়ন পর্যায়ে যে-কোনো সরকারি ভাতা বা অনুদান সংক্রান্ত তথ্য জানতে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে ১৬২৫৬ হটলাইন নম্বরটি। এর কল চার্জ ২ টাকা ৪৫ পয়সা প্রতি মিনিট।

এছাড়া ঢাকা ওয়াসার কল সেন্টারের ১৬১৬২ নম্বরে রেগুলার কল চার্জের মাধ্যমে কল করা যায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads