• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯
প্রস্তুত সোয়া কোটি কোরবানির পশু

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

প্রস্তুত সোয়া কোটি কোরবানির পশু

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ জুন ২০২১

এ বছর দেশের পশু দিয়েই কোরবানির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার পশু। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশীয় গরুতেই চাহিদা পূরণ হওয়ায় বিদেশ থেকে গরু আনা বন্ধে কঠোর নজরদারি রয়েছে।

গত বছর কোরবানির জন্য দেশের বাইরে থেকে গরু আমদানি না করার বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর ছিল। এবারো সেরকম সিদ্ধান্তেই অটল থাকছে সরকার।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে এ বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত পশুর সংখ্যা এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি। যদিও কোরবানি হয়েছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি পশু।

মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এবার ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং অন্যান্য ৪ হাজার ৭৬৫ পশুসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু রয়েছে। চলতি বছর মোটাতাজা গরু-মহিষের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০টি, ছাগল-ভেড়া ২৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৮টি এবং গৃহপালিত গরু-মহিষের সংখ্যা ৬৮ লাখ ৮৮ হাজার ২০০টি, গৃহপালিত ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ২৫২টি।

এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৯২ হাজার ৮২১ জন খামারির ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৬৪টি পশু, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ হাজার ৯৬৩ জন খামারির ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৩টি পশু, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৭ হাজার ২২৭ জন খামারির ৮ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২টি পশু, রাজশাহী বিভাগে ১ লাখ ২৭ হাজার ২৬১ জন খামারির ১৪ লাখ ১০ হাজার ৮০৯টি পশু, রংপুর বিভাগে ২ লাখ ২২ হাজার ৪১৮ জন খামারির ১৩ লাখ ৩ হাজার ২৪১টি পশু, সিলেট বিভাগে ১২ হাজার ৯৭২ জন খামারির ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭২৫টি পশু, বরিশাল বিভাগে ২০ হাজার ৩৮৭ জন খামারির ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৪টি পশু, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৪ হাজার ৬৬ জন খামারির ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৫টি পশু গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাইরে থেকে গরু আসা বন্ধে এবার সীমান্ত এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে। দেশের বাইরে থেকে গরু আনা বন্ধে পশু ও পশু বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ছিনতাই প্রতিরোধে এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে গবাদিপশু অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে জেলা প্রশাসন, জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর, বিজিবি এবং বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ সহযোগিতা চাইবে মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, আসন্ন ঈদে ঢাকাসহ দেশের উল্লেখযোগ্য হাট-বাজারে পশুর স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। গত বছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ২৩টি অস্থায়ী ও একটি স্থায়ী পশুরহাটে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য ২৫টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করে। এ বছরও সেভাবেই পশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, রাসায়নিক ব্যতীত সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গরু হূষ্ট-পুষ্টকরণে খামারিদেরকে উৎসাহিত করার জন্য এবং এ কার্যক্রমে রাসায়নিক ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোটাতাজা গরুর সংখ্যাসহ খামারিদের তথ্য উপজেলা দফতরে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং অন্যান্য বিভাগের সহযোগিতার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলায় কর্মরত কর্মকর্তাদের খামারিদের প্রশিক্ষণ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু মোটাতাজা করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশুর হাটে সুস্থ্য সবল গবাদিপশু সরবরাহ ও বিক্রি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে শিগগিরই বৈঠক করবে। বৈঠকে কোরবানির পশুসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তবে যেহেতু দেশীয় পশু দিয়েই চাহিদা মেটানো সম্ভব, তাই বিদেশ থেকে কোন পশু আনার ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ বিষয়ে কঠোর দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘কোরবানির জন্য দেশে এবার পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। এ বছর কোরবানিযোগ্য ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যাও বেশি। সেজন্য কোনোভাবেই দেশের বাইরে থেকে গরু আনতে দেওয়া হবে না। এজন্য যে যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সব নেব। এছাড়া কোরবানির পশু পরিবহনে ঝামেলা এড়াতে প্রয়োজনে রেল ব্যবহার করা হবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর ঈদ উপলক্ষ্যে ভারত থেকে দেশে বৈধ-অবৈধ পথে অনেক গবাদিপশু আসে এবং মানুষ যাতায়াত করে থাকে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট আমাদের দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোনো অবস্থাতেই যেন ভারত থেকে বৈধ-অবৈধভাবে মানুষ এবং গবাদিপশু না আসে সে জন্য স্ব স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থানে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ রইল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads