• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ঝুঁকি নিয়ে রাজধানী ছাড়ছে লাখো মানুষ

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৭ জুন ২০২১

আবারো শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। এবার ঘর থেকেই বের হতে পারবে না সাধারণ মানুষ। এমন খবরে আবারো গতকাল শনিবার থেকে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন লাখো মানুষ। কোনো নিষেধাজ্ঞা বা স্বাস্থ্যবিধিই মানছেন না তারা। যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোতে আগে থেকে লকডাউন চলায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘরমুখী মানুষ। গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে আর ফেরিঘাটে ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।

বিআইডব্লিউটিসি বলছে, এটা তাদের দায়িত্ব নয়। আর পুলিশ বলছে, মানুষে ঢল সামলানো যাচ্ছে না।

এদিকে লকডাউনের ঘোষণায় গতকাল রাজধানীতে বেড়ে যায় সাধার মানুষের চলাচল ও যানবাহন। এতে বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এরআগে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, লকডাউন যথাযথভাবে কার্যকর করতে পুলিশের পাশাপাশি এবার সেনাবাহিনী ও বিজিবিও মোতায়েন করা হবে। এমন ঘোষণার ঢাকা ছাড়তে শুরু করে সাধারণ মানুষ। যাদের অধিকাংশই শ্রমজীবী। তারা বলছেন, সবকিছু বন্ধ থাকলে কর্মহীন হয়ে পড়বেন। তাই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৩ জুন থেকে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দূরপাল্লার যান বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রামমুখী মানুষকে। সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরমুখো এসব মানুষ রিকশা বা অটোরিকশায় গাবতলী পৌঁছাচ্ছেন। এরপর পায়ে হেঁটে গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে আমিন বাজার থেকে লোকাল বাসে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। এছাড়া, ঢাকামুখী মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। হেঁটে গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে একইভাবেই রাজধানীতে প্রবেশ করছে অনেকে।

মো. তৌহিদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাট পর্যন্ত আসতে তিন বার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। অটোরিকশা ও সিএনজি পুলিশ আটকে দিয়েছে। তাই ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে। অনেক পথ ঘুরে গ্রামের রাস্তা দিয়ে আসতে হচ্ছে। 

গতকাল শনিবার গাবতলী গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা ছাড়ার উদ্দেশে পরিবারসহ হাজারো মানুষ ব্যাগ ও অন্যান্য দরকারি জিনিস নিয়ে জড়ো হয়েছেন। লকডাউন শুরুর আগের দিন যাত্রীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে কিংবা ফেরি ও যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে-এই আশঙ্কায় শনিবার ঢাকা ছাড়ছেন বলে জানান। এছাড়া লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ায় আশঙ্কাও করছেন তারা।

স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে পাঠাতে গাবতলী আসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, প্রাইভেটকার ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। লকডাউন এক থেকে দুই মাস থাকতে পারে। এছাড়া আজকেই সুযোগ, কাল থেকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করায় রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে গতকাল ছিল বিভিন্ন যানবাহন ও মানুষের ভিড়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অনেক বেশি ছিল বলে জানান স্থানীয়রা।

শিমুলিয়া-ভাঙ্গার মোড়ে ঘাট এলাকার প্রবেশমুখ দেখা যায়, যাত্রীরা হেঁটে ঘাটে যাচ্ছেন। এ সময়  কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, কঠোর লকডাউনে বাড়ি থেকে নাকি বের হওয়া যাবে না। কাজ বন্ধ থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। তাই আগেভাগেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন তারা। কিন্তু ফেরিতে কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। আর অনেকের মাস্ক নেই। আবার যারা মাস্ক পরেছেন, তাদের অনেকের থুতনিতে ঝুলছিল।

ঢাকার মগবাজারে রড মিস্ত্রির কাজ করেন সোহেল রানা। তিনি গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরে যেতে হাজির হন ফেরিঘাটে। জানান, লকডাউনে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকায় বেকার বসে টাকা নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না। তাই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

এদিকে ফেরিতে শুধুমাত্র পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন পারাপারের কথা থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়িও পারাপার হতে দেখা যায়। ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে মানুষের বের হওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানা হচ্ছে না। যদিও বিভিন্ন স্থানে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়াঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ বলেন, নৌরুটে বর্তমানে ১৫টি ফেরি সচল রয়েছে। সকাল থেকে যাত্রীদের বেশ ভিড় ছিল। তবে গাড়ির চাপ নেই। তিনি বলেন, লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারের কথা থাকলেও যাত্রীরা ঘাটে আসছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাত্রী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাদের নয়। মানুষ জোর করে ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। তাদের আটকানো যাচ্ছে না। পথে আটকানো না হলে তাদের ঘাট এলাকায় আটকানো সম্ভব নয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি পয়েন্টে ও শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশমুখে রয়েছে পুলিশের একাধিক চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে পুলিশ যাত্রী চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তারা। মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ জাকির হোসেন জানান, লকডাউনের নির্দেশনা মানার জন্য মানুষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীরা বিভিন্নভাবে ঢাকা থেকে ঘাটে আসছে। আবার বাংলাবাজার ঘাট থেকে আসা যাত্রীরা ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদেরকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

কঠোর লকডাউনের ঘোষণার পর রাজধানীর সড়কেও এর প্রভাব পড়ে। ধানমন্ডি, বাড্ডা, বিজয় সরণীসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় তীব্র যানজটের। ধানমন্ডি এলাকায় যানবাহনের বাড়তি চাপ ছিল বলে জানান ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জাহিদ। বিজয় সরণী এলাকায় তীব্র যানজটের কথা জানান সাইমা শেখ আলম নামে একজন যাত্রী। তবে বাড্ডা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ও রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধের কারণে যানজট ছিল বলে জানিয়েছেন গুলশান ট্রফিক জোনের সহকারী কমিশনার নিউটন দাস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads