• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

অতি উচ্চ ঝুঁকিতে ৫৯ জেলা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ জুন ২০২১

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরো ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৩ জনে। গত এক সপ্তাহে শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া দেশের ৬৪ জেলার ৫৯টিই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন (সিআরআইডিএ)।

গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত  একদিনে  ১৯ হাজার ২৬২টি নমুনা পরীক্ষায় চার হাজার ৩৩৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ।  তবে শুরু থেকে মোট পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ১৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৮টি নমুনা। অর্থাৎ, মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৮১টি নমুনা। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন আট লাখ ৮৩ হাজার ১৩৮ জন। তাদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ২৯৫ জনসহ মোট আট লাখ ৮৫৪ জন সুস্থ হয়েছেন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। নতুন করে যে ৭৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে ৪৫ জন পুরুষ ও ২৯ জন নারী। তাদের মধ্যে ৭২ জনের হাসপাতালে (সরকারিতে ৬৫ জন, বেসরকারিতে সাত জন) ও বাড়িতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও মৃত অবস্থায় হাসপাতালে একজনকে আনা হয়েছে। তারাসহ মৃতের মোট সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৩। মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৫৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৪৩ জন পুরুষ মারা গেছেন যা মোট মৃত্যুর ৭১ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং চার হাজার ২০ জন নারী মৃত্যুবরণ করেছেন যা মোট মৃত্যুর ২৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়েছে। একইসঙ্গে মৃত্যুর হার বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার হারও বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হারের ওপর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২০ জুন থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত সময়ে এক লাখ ৭৬ হাজার ৮৭৮টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৫ হাজার ১১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ৫৮৭ জনের। এছাড়া করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ২০ হাজার ৭০৮ জন। এর আগে ১৩ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত এক লাখ ৪৯ হাজার ১৪০টি নমুনা পরীক্ষায় ২৩ হাজার ৫৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়, মৃত্যু হয় ৩৯৫ জনের।

সারা দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের অবিশ্বাস্য ঊর্ধ্বগতি হয়েছে জানিয়েছে সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন (সিআরআইডিএ)। প্রতিষ্ঠািনটির তথ্য মতে,  দেশে মোট ৬৪ জেলার ৫৯টিই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

গতকাল প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শাহরিয়ার রোজেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিআরআইডিএ জানিয়েছে, গত ১৪ থেকে ২০ জুনের সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের ৪০টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে ২০ জুনের পর সংক্রমণের মাত্রা আরো অনেক বেড়ে গেছে। সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে (১৮-২৪ জুন) দেখা যায় যে, দেশের ৫৯টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি)। এর মধ্যে ৩৯টি জেলায় সংক্রমণের হার ভয়াবহ পর্যায়ের (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি)।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মাত্র ৭ দিনের ব্যবধানে মৃত্যুহার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। জুনের ১৮ তারিখে দৈনিক মৃত্যু ছিল ৫৪, যা ৭ দিনের ব্যবধানে বেড়ে ১০৮ হয়েছে।

সংক্রমণ বাড়ার কারণ জানিয়ে বলা হয়, ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে বাংলাদেশে সংক্রমণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটিই সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রমণক্ষম যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট থেকেও কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বেশি সংক্রামক এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।

এসব প্রসঙ্গে ডা. শাহরিয়ার রোজেন বলেন, ফাইজার এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দুটি ডোজ ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে কার্যকর। তবে বাংলাদেশে খুব অল্প মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসায় (৪ শতাংশের কম) অধিকাংশ মানুষ প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে আছে। সংক্রমণের হার যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা দিয়ে তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন আর কেবল সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন বা শাটডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, বরং সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে জনসাধারণকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়ানো এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এই সহজ কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো শত বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হয়েছিল এবং করোনার সব বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টকে এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বিশ্লেষণ ও লেখচিত্র প্রস্তুত করেছেন সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশনের এপিডেমিওলজি বিভাগের ডা. কেএম তৌহিদুর রহমান, ডা. আয়শা আকতার, ডা. শাহরিয়ার রোজেন, ডা. নওরিন আহমেদ, ডা. নাজিফ মাহবুব, ডা. মামুনুর রহমান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মেথডোলজি ব্যবহার করে ৭ দিনের গড় শনাক্তের হারকে সূচক হিসেবে ব্যবহার করে তথ্যচিত্রটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

এর আগে গত ২১ জুন বাংলাদেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৪ থেকে ২০ জুন এই এক সপ্তাহের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় তারা জানিয়েছিল, ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর বাইরে আরো ১৫টি জেলা আছে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে। সংক্রমণের মধ্যম ঝুঁকিতে আছে ৮টি জেলা। বান্দরবানে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় সেটি বিবেচনায় আনা হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads