• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ২৯ জুন ২০২১

আতঙ্কের আর এক নাম করোনাভাইরাস। একের পর এক দেশের বিভিন্ন জেলায় অবিশ্বাস্য গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামণ। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুধু লকডাউন বা শাটডাউন নয়, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর অবস্থানে থাকবে সরকার। কারণ, এবার থাকছে না পুলিশের মুভমেন্ট পাস। অতি জরুরি ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবে না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাঠে থাকেবে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। বাস্তবায়ন কৌশল ঠিক করতে আজ বা  আগামীকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি হবে। ওই আদেশে জানা যাবে রিকশা চলাচলসহ লকডাউনের পোশাক কারখানা ও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খোলা থাকবে কিনা।

এদিকে লকডাউন নিয়ে সরকারের সমন্বয়হীন পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে ছেলেখেলা চলছে বলে মন্তব্য করেছে নাগরিক সমাজ। তারা বলছেন, লাখ লাখ মানুষকে অভুক্ত রেখে লকডাউন কোনো কাজে আসবে না। মানুষকে ঘরে রাখতে হলে কয়েক কোটি শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষ ও দিনমজুরদের কাছে খাদ্য ও নগদ অর্থ পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। নইলে ক্ষুধার্ত পেট লকডাউন বুঝবে না।

অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লকডাউনের ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র মানুষের জন্য বিশেষ সহায়তা করা হবে। এ কাজের জন্য একটা প্রোগ্রাম ছকআউট তৈরি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে শহর এলাকায় যেন সমস্যা না হয়, সেজন্য যথাযথভাবে সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে। এরই মধ্যে বিধিনিষেধে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, দুঃস্থ, অসচ্ছল ও কর্মহীন ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা দিতে সারা দেশের জন্য ২৩ কোটি ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

সারা দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ যেভাবে বাড়তে শুরু করেছে, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই করোনা হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যাও পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও জাতীয় রোগনিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। গত এক মাসের তুলনায় সংক্রমণের সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালগুলোতে আবারো করোনা আক্রান্ত রোগীদের ভিড় আমরা দেখতে পাচ্ছি। হাসপাতালগুলোতে দ্রুতই শয্যা সংখ্যা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালের আইসিইউ পূরণ হয়ে গেছে। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউও পূরণ হয়ে যাচ্ছে। মাত্র ২৮১টি শয্যা খালি রয়েছে। গত মাসের তুলনায় প্রায় ৫০ ভাগ শয্যাই পূরণ হয়ে গেছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর যেসব জায়গাতেই সংক্রমণ বেশি, সেগুলোতেই মৃত্যু বেশি। বর্তমান অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে রাখতে কঠোর লাকডউন ছাড়া বিকল্প নেই।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মানুষ জীবন রক্ষার জন্য সরকার লকডউন দিচ্ছে সেটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সেটা হতে হবে আমাদের পরিকল্পিত। করোনা মহামারির জন্য পরিস্থিতিতে সরকারের একের পর এক উদ্ভট পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত কোটি কোটি মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ ডেকে নিয়ে এসেছে। নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্তসমূহ কারা, কীভাবে নেয়-এটা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের সমন্বয়হীনতার এই চিত্র তাদের লেজে-গোবরে অবস্থারই প্রতিফলন। একদিকে বলা হচ্ছে সর্বাত্মক লকডাউন, আবার অন্যদিকে গার্মেন্টসসহ ক্ষমতাবানদের কলকারখানা খোলা রাখার পাঁয়তারা পরস্পরবিরোধী। সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের জন্য অন্তত খাদ্যের নিশ্চয়তা সরকারকে করতে হবে। নইলে মানুষকে অভুক্ত রেখে লকডাউন-শাটডাউন কোনোটাই কাজে আসবে না। পেটের জন্য মানুষ রাস্তায় নেমে পড়বেই। 

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) শীর্ষ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, টানা এই লকডাউনে শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষ যারা প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল তারা সংকটের মধ্যে পড়েছেন। লকডাউনের কারণে কাজ না থাকায় এই দিনমজুর, শ্রমজীবী মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে, তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে কঠোর লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় এসব দরিদ্র মানুষের মধ্যে দ্রুত খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। এদিকে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কিছু বাস্তব কারণের জন্য আমরা ৩০ জুন পর্যন্ত (কঠোর বিধিনিষেধ) করতে পারছি না। সেজন্য ১ তারিখ থেকে ’স্ট্রিক্ট রেস্ট্রিকশনে’ যাচ্ছি আমরা। ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ দিতে যাচ্ছে সরকার। এই সময়ে ঘরের বাইরে আসা যাবে না, থাকবে না মুভমেন্ট পাসও। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী, বিজিবিও মাঠে থাকবে। তাদের যতটুকু সময় যা দরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অথরিটি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যাতে কোনোভাবেই মানুষ গণহারে লকডাউন ব্রেক করতে না পারে। সেটা তারা মনিটরিং করবে। কঠোর বিধিনিষেধের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে আজ মঙ্গলবার অথবা বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

তিনি বলেন, খুবই স্ট্রিক্ট ভিউতে, কারণ চারটি জেলার সঙ্গে আমরা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত পর্যালোচনা করে দেখেছি। সেখানে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, ডিআইজি, এসপি, সিভিল সার্জন, পরিচালক, জনপ্রতিনিধি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান সবাই ছিলেন। সবারই বক্তব্য এবং সেখানে গ্রাফিক প্রেজেন্টেশন তাতে দেখা যাচ্ছে যে, দেশের একটা বড় অংশ অরেঞ্জ, রেড বা ব্রাউন হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এখন আমাদের বিধিনিষেধ আরোপ করা ছাড়া উপায় নেই। এবার মুভমেন্ট পাস থাকবে না। কেউ বের হতে পারবে না, পরিষ্কার কথা। যারা জরুরি কাজের সঙ্গে জড়িত তারা চলাচল করবে। দাফন-কাফনের কাজ করা যাবে। কোনো রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাবেন সেটা যেতে পারবেন।

লকডাউনে দরিদ্র মানুষের কী হবে, এ বিষয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, আজকে (গতকাল) ক্যাবিনেট মিটিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীকে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে-সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় যথাসম্ভব গত বছর যেভাবে করা হয়েছিল, সেভাবে একটা প্রোগ্রাম ছকআউট করে করার জন্য বলা হয়েছে। রিকশা কিংবা শিল্পকারখানা খোলা থাকবে কিনা-এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কালকে (মঙ্গলবার) আমরা বিস্তারিত অর্ডার করে দেব। আরেকটু আলোচনা করে নিই।

৭ জুলাইয়ের পর বিধিনিষেধ বাড়বে কি-না, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা দেখি, আমাদের যে অভিজ্ঞতা সেখানে দেখেছি, ১৫-২০ দিনে সুপারভাইস করছি, যেসব এলাকায় যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্ট্রিকলি ব্লক করে দেওয়াতে (করোনা সংক্রমণ) অনেক কমে গেছে। সাতক্ষীরাতে ইমপ্রুভ করেছে। যেখানে যেখানে আইসোলেটেড করে দিয়েছি, মুভমেন্ট রেস্ট্রিকটেড করে দিছি, সেখানে সেখানে ইম্প্রুভ করেছে। সরকার যদি মনে করে আরো সাত দিন যেতে হবে, সেটাও বিবেচনায় আছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads