• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

অফিসগামীদের দুর্ভোগ চরমে

সব বাধা পেরিয়ে ঢাকা ছাড়ছেন কর্মহীন মানুষ

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২৯ জুন ২০২১

দেশজুড়ে চলছে সীমিত পরিসরে লকডাউন। গতকাল সোমবার এ লকডাউনের প্রথমদিনে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল সরকারি-বেসরকারি অফিস। তাই সকাল না হতেই চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় রাজধানীর অফিসগামী ও কর্মজীবীদের। এদিকে, দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকার পরও শত বাধা পেরিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা ছাড়েন অসংখ্য মানুষ। যাদের পথে পথে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে কর্মস্থলগামী হাজারো মানুষ হেঁটেই ছুটেছেন যার যার অফিসে। শুরুর দিন রাজধানীর সড়কগুলো ছিল রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। এতে বিভিন্ন সড়কে যানজটেও ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। তবে রাস্তাজুড়ে রিকশা চললেও ভাড়া হাঁকাচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। সাবিহা আক্তার কাজ করেন রাজধানীর মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় অন্য দিনের তুলনায় একটু আগেভাগেই বনশ্রীর বাসা থেকে বের হন। জানালেন, রাস্তায় গাড়ি বলতে শুধু রিকশা। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিকশাওয়ালাদের চাহিদা বেড়ে গেছে। রামপুরা থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে থেকে তার অফিস পর্যন্ত আড়াই-শো টাকা ভাড়া দাবি করছে রিকশাওয়ালারা। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সরকার বৃহস্পতিবার কঠোর লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছে। তখন অফিস আদালতও বন্ধ থাকবে। সেটাইতো ভালো। কিন্তু এর আগে কয়েকদিনের জন্য এভাবে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে আমাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলার কি দরকার ছিল।’ 

সাবিহা আক্তারের মতো অসংখ্য কর্মজীবী মানুষের ভরসা কেবলই রিকশা এবং কিছু মোটরসাইকেল। অনেককে আবার দীর্ঘক্ষণ গাড়ির অপেক্ষা করে পিকআপ ভ্যানে কর্মস্থলে ছুটতে দেখা গেছে। তাদেরকে ভোগান্তির কথা জিজ্ঞেস করতেই কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কেউ কেউ বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ না পারি কইতে, না পারি সইতে।’ 

অনেকেই ভাড়া বেশি কিংবা যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই রওয়ানা হন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। একারণে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর স্থানে স্থানে অফিসগামী মানুষের ভিড়ের চিত্র ছিল রীতিমতো ছোটখাটো মিছিলের মতো। অফিসগুলোকে তাদের কর্মী আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হলেও বহু প্রতিষ্ঠানই তা করেনি। ফলে অফিসগামী মানুষদের এমন অসহনীয় দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়।

এদিকে, আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এক সপ্তাহের কঠোর  লকডাউন। এবারের লকডাউনে সরকার আরো কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করবে। মাঠে থাকবে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি এবং প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও। কঠোর লকডাউনের প্রস্তুতি হিসেবে সোমবার থেকেই গণপরিবহন এবং দূরপাল্লার যানবাহনের পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট, শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁ। ফলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। এবারের লকডাউন কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে কর্মহীন এসব মানুষের মাঝে ভর করেছে অজানা শঙ্কা। তাই অনেকে আবারো ছুটছেন নিজ নিজ জেলায়। এছাড়া, ঈদুল আযহাকে ঘিরে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ গ্রামে যান। লকডাউন বাড়লে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে যেতে না পারার শঙ্কায় যানবাহন না থাকা সত্ত্বেও লকডাউন উপেক্ষা করেই ছাড়েন অসংখ্য মানুষ।

দূরপাল্লার গাড়ি না থাকলেও ‘ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়’ যেন এমন মন্ত্রেই উজ্জীবিত হয়ে ঢাকা ছাড়ছেন তারা। এক্ষেত্রে উপায় এসবের জন্য উপায় বের করে দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরাই। রাজধানীর প্রবেশমুখের বিভিন্ন বাস কাউন্টার কিংবা স্টপেজেই মিলছে কয়েকগুণ ভাড়ায় মাইক্রোবাস কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ির টিকিট। প্রবেশমুখে পুলিশের কড়াকড়ি এড়াতে কিছুটা পথ পায়ে হেঁটে গেলেই মিলছে এসব পরিবহন।

সরেজমিনে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় দেখা গেছে, চেকপোস্টে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রায় প্রতিটি গাড়ির। একইভাবে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে ও টঙ্গী এলাকায় দেখা গেছে, এই পয়েন্ট দিয়ে ঢাকার বাইরে থেকে প্রবেশ কিংবা ঢাকা থেকে কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। তবে বাস ও সিএনজি না থাকলেও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, রিকশা ও অটোরিকশায় সাধারণ মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটেছেন ভারী ব্যাগ হাতে। যাদের অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নআয়ের মানুষ।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোমবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার ঘরমুখী মানুষকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের ফেরিতে পারাপার হতে দেখা গেছে। যদিও ঘাটে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, শিমুলিয়া মোড়ে চেকপোস্ট আছে। ঘাটের প্রবেশ মুখেও চেকপোস্ট আছে। জরুরি প্রয়োজন ও ডাক্তারি কাগজপত্র ছাড়া যাত্রীদের ঘাটে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া, বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়াঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে বহরের ১৬টির মধ্যে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। ঘাট এলাকায় পদ্মানদী পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে ৫ শতাধিক গাড়ি। সিরিয়াল অনুযায়ী সব গাড়ি পার করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads